স্বপ্ন নিয়ে ঢাকায় গেছিলাম, কিন্তু আজ আমি নিঃস্ব
‘ঢাকায় গেছিলাম, স্বপ্ন ছিল অনেক, বাবা যতদূর পারত দিত কষ্ট ছিল না, কাধে ভাইয়ের হাত ছিল, কোনো রাজনীতিও করতাম না, নতুন বন্ধুও তেমন ছিল না, কখনো কাউকে খারাপ ছাত্র বলতে শুনিনি। কিন্তু মাত্র ৩মাস পর আজ কিছুই নেই। বুঝলাম না কি করলাম, কি ভুল ছিল, কিন্তু আজ আমি নিঃস্ব। কিন্তু কেন!’
কথাগুলো বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) নিহত ছাত্র আবরার ফাহাদের ছোট ভাই আবরার ফায়াজের। গত ১৩ অক্টোবর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়ে মনের হাহাকার তুলে ধরে। ঢাকা কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী পড়ত ফায়াজ। আজ মঙ্গলবার ঢাকা কলেজ থেকে ছাড়পত্র নিয়েছে সে। ঢাকা কলেজ ছেড়ে কুষ্টিয়া সরকারি কলেজে পড়বে ফায়াজ। সে ঢাকা কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল। তবে বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের হাতে ভাইয়ের নির্মম মৃত্যুর পর একা ঢাকায় না থাকার সিদ্ধান্ত নেয়।
৬ অক্টোবর শেরেবাংলা হলে আবরারকে পিটিয়ে হত্যা করেন বুয়েট ছাত্রলীগের একদল নেতা-কর্মী। আবরার বুয়েটের তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক প্রকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের (১৭তম ব্যাচ) ছাত্র ছিলেন। ভাইয়ের এ ঘটনার পর আবরার ফায়াজ ঢাকায় পড়তে অনীহা প্রকাশ করে।
১২ অক্টোবর কুষ্টিয়ায় নিজ বাড়িতে সাংবাদিকদের সে জানায়, ভাইকে হারিয়ে সে একা হয়ে পড়েছে। ভাই তার সব বিষয়ে খেয়াল রাখত। ভাই নেই, তাই সেও ঢাকায় থাকবে না। বলে, ‘আমাদের দুই ভাইয়ের মধ্যে সবচেয়ে ভালো সম্পর্ক ছিল। ও ছিল আমার অভিভাবক। ওর সঙ্গে আমার সম্পর্ক এমন ছিল যে মা–বাবার কথা তেমন মনেই হতো না।’
আবরার ফাহাদ যেদিন (রোববার) কুষ্টিয়ার পিটিআই সড়কের বাড়ি থেকে চলে যান, সেদিন সকালে ঘুমিয়ে ছিলেন জানিয়ে ফায়াজ বলেন, ‘ভাই যাওয়ার সময় মা ডেকেছিল। কিন্তু শুয়েই ছিলাম।তারপরও ভাই বলল, তাড়াতাড়ি ঢাকায় চলে আসবি। এটাই ছিল ভাইয়ের সঙ্গে আমার শেষ কথা ও দেখা।
পড়াশোনার বিষয়ে ফায়াজ বলে, ‘কলেজে (ঢাকা কলেজ) আর যাব না। কোনো ভয় না, আসলে সত্যি কথা যেটা, ঢাকাতে নিয়ে যাওয়া-ভর্তি, সব ছিল ভাইয়ের ইচ্ছায়। ও সব কেয়ার করত। রুমে পানি না থাকলে ভাইই দিত। ও–নেই, সেখানে কী করে থাকব।’
ফায়াজ আরও বলে, ‘ভাই ছিল, দুজন ছিলাম। এখন একা। ঢাকা আর না, কুষ্টিয়াতে পড়াশোনা করব। এটাই পরিকল্পনা।’