টিউশনি করে ডাবল জিপিএ-৫ পাওয়া তানিয়ার চোখে পানি
দারিদ্র্যতার কশাঘাতে জর্জরিত অদম্য মেধাবী ছাত্রী তানিয়া। এলাকার মানুষের সাহায্য-সহযোগিতায় এতদিন লেখাপড়া করেছে বাবা হারা মেয়েটি। তার মা আছিয়া বেগম বাসাবাড়িতে কাজ করে যে টাকা উপার্জন করেন তা দিয়ে পরিবারের সদস্যদের খাবারই ঠিকমত জোটে না। দারিদ্র্যতাকে জয় করে এবারের উচ্চমাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েও উচ্চশিক্ষা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে তানিয়া সুলতানার।
ঝিনাইদহের কাঞ্চননগর স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছে তানিয়া সুলতানা। একই প্রতিষ্ঠান থেকে এসএসসিতেও জিপিএ-৫ পেছিল তানিয়া। তার স্বপ্ন উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করে ব্যাংকার হওয়ার। কিন্তু এতো ভালো ফলাফলের পরও অর্থাভাবে ভুগছেন তিনি। অর্থের অভাবে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের স্বপ্ন ভেঙে যাওয়ার পথে তানিয়ার। ফলাফল প্রকাশের দিন তার চোখে-মুখে যে উচ্ছ্বাস ছিল তা এখন হতাশায় ডুবে আছে। স্বপ্নভরা চোখে অশ্রু ঝরছে তার।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ছোটবেলায় তানিয়ার বাবা নেই। মা আছিয়া বেগমের ভিটেমাটি কিছুই নেই। ঝিনাইদহ শহরের কাঞ্চননগর এলাকার এক ব্যক্তির জমিতে কুঁড়েঘর বেঁধে দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করছেন মা-মেয়ে। মা আছিয়া বেগম বিভিন্ন মানুষের বাড়িতে কাজ করেন। টিউশনি করে পড়ালেখা করেছেন তানিয়া। কিন্তু অভাবের সংসারে তানিয়ার উচ্চশিক্ষা নিয়ে এখন হতাশা। উচ্চশিক্ষা গ্রহণের স্বপ্ন পূরণ হবে কিনা তা জানেন না তানিয়া ও তার মা।
স্থানীয় বাসিন্দাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, তানিয়া খুবই মেধাবী ছাত্রী। ছোটবেলা থেকে খুব কষ্ট করে পড়ালেখা করেছে। তার প্রতিটি পরীক্ষার ফলাফল অনেক ভালো। আমরা যতটুকু পেরেছি তাকে সাহায্য করেছি। কিন্তু এখন উচ্চশিক্ষা গ্রহণের ব্যয়ভার নিয়ে হতাশায় তানিয়া। মা আছিয়ার পক্ষে তানিয়ার পড়ালেখার খরচ চালানো সম্ভব নয়। সমাজের বিত্তবানরা এগিয়ে এলে তানিয়ার উচ্চশিক্ষা গ্রহণের স্বপ্ন পূরণ হবে।
তানিয়ার মা আছিয়া বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আমার মেয়ে এসএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়েছিল। তা দেখে তানিয়াকে কাঞ্চননগর স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষকরা ফ্রিতে ভর্তি করিয়ে নেন। এবার এইচএসসি পরীক্ষায়ও জিপিএ-৫ পেয়েছে তানিয়া। কিন্তু এখন উচ্চশিক্ষা নিয়ে হতাশায় আছি আমরা। আমি বাসাবাড়িতে কাজ করে সংসার চালাই। আমার উপার্জিত অর্থ দিয়ে মেয়ের উচ্চশিক্ষা গ্রহণের ব্যয়ভার বহন করা সম্ভব নয়। সমাজের হৃদয়বান মানুষের কাছে আমার আকুল আবেদন কেউ যেন তানিয়ার পড়ালেখার দায়িত্ব নেয়।
এ বিষয়ে কাঞ্চননগর স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ প্রদীপ কুমার বিশ্বাস বলেন, তানিয়া সুলতানা আমার প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হওয়ার পর থেকে যতটুকু পেরেছি সহযোগিতা করেছি। তানিয়া মেধাবী ছাত্রী। উচ্চশিক্ষা গ্রহণের সহযোগিতা পেলে ভবিষ্যতে তানিয়া সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য ভালো কিছু করতে পারবে। সমাজের বিত্তবানরা অসহায় তানিয়ার পাশে দাঁড়ালে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করতে পারবে তানিয়া। তার মতো মেধাবী ছাত্রীকে বিফলে যেতে দেয়া যাবে না। তার মেধাকে কাজে লাগাতে সমাজের বিত্তবানদের উচিত তাকে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের সুযোগ করে দেয়া। তার পাশে দাঁড়ানোর জন্য আমি সবাইকে অনুরোধ করছি।