২৯ এপ্রিল ২০১৯, ০৯:৪৭

লিখিত পরীক্ষায় ফেল করেও অধ্যক্ষ হচ্ছেন ভিকারুননিসার

  © সংগৃহীত

লিখিত পরীক্ষায় মোট নম্বর ছিল ৩০। এর ১০টি প্রশ্নের মধ্যে ইংরেজিতে ছিল ৭টি। অবাক করার বিষয় হচ্ছে ইংরেজি বিষয়ের এক শিক্ষক ৩০ নম্বরের মধ্যে মাত্র সাড়ে ৩ পেয়ে অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ পেতে যাচ্ছেন। এ শিক্ষককে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করেছে নিয়োগ কমিটি। এদিকে তাকেই অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিচ্ছে গভর্নিং বোর্ড।

এটি রাজধানীর খ্যাতনামা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ভিকারুন নিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের চিত্র। প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ পদ শূন্য হওয়ায় নতুন করে অধ্যক্ষ নিয়োগে এমনটা করছে গভর্নিং বডি।

এই নিয়োগ প্রক্রিয়ায় সরকারের প্রতিনিধি হিসাবে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের একজন পরিচালকও ছিলেন। সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, লিখিত পরীক্ষায় কেউ ফেল করলে তার মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নেওয়ারও সুযোগ থাকে না। অথচ ভিকারুন নিসার ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম তৈরি করা হলো। তবে এই নিয়োগ প্রক্রিয়াকে অস্বচ্ছ ও অবৈধ উল্লেখ করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ দাখিল করেছেন একাধিক অভিভাবক।

সূত্র জানিয়েছে, অধ্যক্ষ নিয়োগ দেওয়ার জন্য প্রতিষ্ঠানটির গভর্নিং বডি একটি নিয়োগ কমিটি গঠন করে। কমিটিতে গভর্নিং বডির সদস্য আতাউর রহমান, মাউশির পরিচালক (কলেজ) অধ্যাপক শাহেদুল খবীর চৌধুরী এবং ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ফেরদৌস আরাও ছিলেন। ২৭ এপ্রিল সকালে লিখিত পরীক্ষা আয়োজন করা হয়। নিয়োগ পরীক্ষায় মোট ১৫ জন প্রার্থীর অংশগ্রহণ করার কথা থাকলেও ১৩ জন উপস্থিত ছিলেন। মোট ১০ জন প্রার্থী মৌখিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন। তাদের মধ্যে রাজধানীর মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের ইংরেজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রুমানা শাহীন শেফাকে ভিকারুন নিসার অধ্যক্ষ হিসেবে চূড়ান্ত করা হয়, যিনি লিখিত পরীক্ষায় মাত্র সাড়ে ৩ নম্বর পেয়েছেন। তবে মৌখিক পরীক্ষায় ও একাডেমিক পারফরমেন্সের মাধ্যমে তাকে পরীক্ষায় প্রথম করা হয় বলে অভিযোগ উঠেছে।

সূত্র জানিয়েছে, পরীক্ষার দিন বিকালে গভর্নিং বডির বৈঠকে সদস্য অ্যাডভোকেট ইউনূস আলী আকন্দ সব প্রার্থীর পরীক্ষার প্রাপ্ত নম্বর জানতে চান। ওই সদস্য জানান, লিখিত পরীক্ষায় কে কত নম্বর পেয়েছে আমি জানতে চাই। কে কত নম্বর পেয়েছে তা গভর্নিং বডির অন্য সদস্যদের জানাতে গড়িমসি করা হয়। প্রায় দুই ঘণ্টা পর কে কত নম্বর পেয়েছে তা জানানো হয়। দেখা গেছে, সবাই ফেল করেছে। এই সদস্য বলেন, সবাই যেহেতু পরীক্ষায় ফেল করেছে এ কারণে আমাকে খাতা ও নম্বর দেখাতে চাইছিল না।

সূত্র জানিয়েছে, লিখিত পরীক্ষায় ফেল করলেও মৌখিক পরীক্ষায় ও একাডেমিক পারফরমেন্স মিলিয়ে রুমানা শাহীন শেফাকে ১৯ নম্বর দেওয়া হয়েছে। দ্বিতীয় ও তৃতীয় অবস্থানে থাকা প্রার্থীরা যথাক্রমে সাড়ে ১৮ ও ১৮ নম্বর পেয়েছেন। আর প্রতিষ্ঠানের প্রাক্তন অধ্যক্ষ হাসিনা বেগম পেয়েছেন ১৭।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ভিকারুন নিসায় পছন্দের ব্যক্তিকে নিয়োগ দেওয়ার জন্য ১০টির মধ্যে ৭টি প্রশ্ন করা হয়েছে ইংরেজিতে। তবুও তাকে লিখিত পরীক্ষায় পাস করানো যায়নি। ইংরেজিতে প্রশ্ন করার পরও ইংরেজির শিক্ষক যখন পরীক্ষায় ফেল করেন, তখন তার যোগ্যতা নিয়ে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন ওঠে।

জানা গেছে, ভিকারুন নিসা স্কুল অ্যান্ড কলেজের গভর্নিং বডির সভাপতি গোলাম আশরাফ তালুকদার। যিনি আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজে গভর্নিং বডিরও সদস্য। আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে ভিকারুন নিসায় অধ্যক্ষ নিয়োগ দেওয়ার চেষ্টায় নানামুখী প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। ক্ষুব্ধ হয়েছেন ভিকারুন নিসার সাধারণ শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকরা।

নিয়োগ কমিটিতে থাকা মাউশির প্রতিনিধি পরিচালক (কলেজ ও প্রশাসন) অধ্যাপক শাহেদুল খবীর চৌধুরী এ প্রসঙ্গে বলেন, কে কত নম্বর পেয়েছে তা মনে নেই। লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় পৃথক পাসের প্রয়োজন নেই বলে তিনি মত দেন। তবে তার এই বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেছেন মাউশির অন্তত ১০ জন কর্মকর্তা; যারা বিভিন্ন সময় নিয়োগ প্রক্রিয়ায় মাউশির প্রতিনিধি হিসাবে অংশ নিয়েছেন।

এ প্রসঙ্গে জানতে ভিকারুন নিসার গভর্নিং বডির সভাপতি গোলাম আশরাফ তালুকদারের সঙ্গে বেশ কয়েকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

 

[সূত্র: ইত্তেফাক]