ফের বগুড়া জিলা স্কুলে ১৮ গাছে কোপ, আরও কাটার প্রস্তুতি

ফের বগুড়া জিলা স্কুলে গাছ কাটা হয়েছে।
ফের বগুড়া জিলা স্কুলে গাছ কাটা হয়েছে।  © সংগৃহীত

ঐতিহ্যবাহী বগুড়া জিলা স্কুলের ফটক নির্মাণের জন্য আরও ১৮টি গাছ কাটা হয়েছে। প্রকাশ্য নিলামে এসব গাছের বিক্রিমূল্য দেখানো হয়েছে মাত্র ৩৫ হাজার টাকা। ফটকের সৌন্দর্যবর্ধনে আরও কিছু গাছ কাটা পড়তে পারে বলে জানিয়েছে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর। এর আগে নতুন একাডেমিক ভবন নির্মাণের অজুহাতে ৫৫টি গাছ ১ লাখ ১৫ হাজার টাকায় প্রকাশ্য নিলামে বিক্রি করে দেওয়া হয়।

মঙ্গলবার (১১ ফেব্রুয়ারি) সকালে বগুড়া জিলা স্কুল চত্বরে গিয়ে দেখা যায়, সাতমাথা–সংলগ্ন বিদ্যালয়ের পুরোনো ফটকের জায়গায় নতুন করে অত্যাধুনিক ফটক নির্মাণের তোড়জোড় চলছে। এর আগে ৯ ফেব্রুয়ারি ওই ১৮টি গাছ কাটা শুরু করে কর্তৃপক্ষ।

জিলা স্কুলের প্রাক্তন শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের দেওয়া তথ্যমতে, ওই বিদ্যালয় চত্বরে বিভিন্ন প্রজাতির বহু গাছ আছে। এসব গাছ গত শতাব্দীর ষাট, সত্তর, আশি ও নব্বইয়ের দশকের বিভিন্ন সময়ে রোপণ করা। এ ছাড়া শতবর্ষী কয়েকটি আম ও রেইনট্রিও ছিল।

বগুড়া জিলা স্কুল সূত্রে জানা যায়, বিদ্যালয়ের প্রধান ফটক নির্মাণে ৩০ লাখ টাকা ব্যয় করছে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর। ফটক নির্মাণের জন্য ইতিমধ্যে ঠিকাদারকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে। নতুন করে ফটক নির্মাণ ও ফটকের দুই পাশে সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর স্থান নির্ধারণ চূড়ান্ত করেছে। শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের পছন্দের জায়গায় ফটক নির্মাণে ১৮টি গাছ কেটে ফেলার সিদ্ধান্ত হয়েছে। গত ১৮ ডিসেম্বরে বগুড়া জেলা প্রশাসকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় এসব গাছ প্রকাশ্য নিলামে বিক্রির সিদ্ধান্ত হয়। ২৯ জানুয়ারি নিলাম অনুষ্ঠিত হয়।

মাহমুদা আকতারের ছেলে জিলা স্কুলে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে। বিদ্যালয়ে গাছ নিধনে ক্ষুব্ধ এই অভিভাবক বলেন, ‘এ বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় দুই হাজার। সন্তানকে বিদ্যালয় থেকে আনা–নেওয়ার জন্য অনেক অভিভাবক সকাল-বিকেল বিদ্যালয়ে অবস্থান করেন। কিন্তু অভিভাবকদের দাঁড়ানোর মতো ব্যবস্থাও নেই। রোদ-বৃষ্টিতে এত দিন ফটকের পাশে গাছের ছায়ায় বসার আসনে বিশ্রাম নিতাম। এখন গাছ কাটার সঙ্গে বসার আসনও থাকছে না।’

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) বগুড়া জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক জিয়াউর রহমান বলেন, কোনো প্রকার মহাপরিকল্পনা ছাড়াই বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দুই দফায় ৭৩টি গাছ নিধন করেছে। অপরিকল্পিতভাবে যেখানে-সেখানে ভবন নির্মাণের অজুহাতে পরিবেশের বিপর্যয় ডেকে আনছে।

এর আগে গত বছরের এপ্রিল মাসে ৫৫টি গাছ কেটে ফেলায় বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সমালোচনা করেন প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা। ভবন নির্মাণের অজুহাতে গাছ কেটে ফেলায় বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সমালোচনা করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তারা প্রতিবাদ জানান। বগুড়া জিলা স্কুল ও সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের ফেসবুক গ্রুপে গাছ কাটার সমালোচনা করেন প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা।

বগুড়া জিলা স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ড্যানিয়েল তাহের বলেন, বিদ্যালয়ের প্রধান ফটক নির্মাণের জন্য শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর ১৮টি গাছ অপসারণের সুপারিশ করে। সে অনুযায়ী বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদে গাছ কাটার সিদ্ধান্ত হয়। গাছের মূল্য নির্ধারণে বন বিভাগকে চিঠি দেওয়া হয়। বন বিভাগ ১৮টি গাছের মূল্য ৩০ হাজার টাকা নির্ধারণ করে প্রতিবেদন দেয়। প্রকাশ্য নিলামে সর্বোচ্চ ৩৫ হাজার ৫০০ টাকা ডাক ওঠায় তা সর্বসম্মতিক্রমে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। গাছ কাটার বিষয়ে আইনের কোনো ব্যত্যয় ঘটেনি।

সামাজিক বন বিভাগ বগুড়ার উপবন সংরক্ষক মতলুবর রহমান বলেন, ফটক নির্মাণে গাছ কাটার যৌক্তিকতা ছিল কি না, তা জিলা স্কুল কর্তৃপক্ষ ভালো বলতে পারবে। ১৮টি গাছের মূল্য নির্ধারণে বন বিভাগকে চিঠি দেওয়া হয়েছিল। মেহগনি ছাড়া অন্য প্রজাতির গাছ জ্বালানির কাঠ। প্রজাতি ও গাছের বেড় বিবেচনায় নিয়ে মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে।

শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর বগুড়ার সহকারী প্রকৌশলী মো. আল আমিন বলেন, ৯ কোটি টাকা ব্যয়ে বগুড়া জিলা স্কুলে ৪০ ফুট দৈর্ঘ্য এবং ৩০ ফুট প্রস্থ ও ৬ তলা বিশিষ্ট নতুন একাডেমিক ভবনের নির্মাণকাজ চলছে। এ ছাড়া ৩০ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রধান ফটক নির্মাণের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। এসব উন্নয়নকাজের জন্য বেশ কিছু গাছ অপসারণের জন্য বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ উদ্যোগ নিয়েছে। আরও কিছু গাছ কাটা লাগতে পারে।


সর্বশেষ সংবাদ