বিদায়ী শিক্ষককে মাইক্রোবাসে বাড়ি পৌঁছে দিলেন শিক্ষার্থী-সহকর্মীরা
স্মৃতিতে ভাস্বর, আবেগঘন এক বিদায়ের সাক্ষী হলো ভোলার বোরহানউদ্দিন কামিল মাদ্রাসা। একটানা ৩০ বছরের শিক্ষকতা জীবনের ইতি টানলেন বাংলার প্রভাষক ও সহকারী অধ্যাপক এ.এন.আই মহসীন সরওয়ার। চোখের কোণে অশ্রু, তবুও মুখে মুগ্ধতার হাসি নিয়ে বিদায় নিচ্ছেন তিনি। প্রিয় শিক্ষককে সম্মান জানাতে সাদা রঙের এক সাজানো মাইক্রোবাস প্রস্তুত। সেই গাড়িতে চড়িয়ে, ফুলের শুভেচ্ছায় সিক্ত করে তাঁকে পৌঁছে দেওয়া হলো বাড়ি। এ যেন এক জীবনের সার্থকতার গল্প!
বৃহস্পতিবার (৯ জানুয়ারি) দুপুর ১ টার দিকে চাকরি জীবনের শেষ দিনে এক শিক্ষকের বিদায় অনুষ্ঠানে এমন ব্যতিক্রমী দৃশ্যের দেখা মিলল ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলার বোরহানউদ্দিন কামিল মাদ্রাসায়।
সরেজমিনে দেখা যায়, মাদ্রাসার অফিস থেকে বেরিয়ে মাঠ আর সড়কের দু’ধারে সারিবদ্ধ দাঁড়িয়ে শত শত শিক্ষার্থী। প্রত্যেকের হাতে ফুল। ফুল ছিটিয়ে প্রিয় শিক্ষককে সম্মান জানাচ্ছে সবাই। দুই সারির মাঝখান দিয়ে বিদায়ী শিক্ষক হাঁটছেন ধীর পায়ে। চোখে জল, মুখে কৃতজ্ঞতার হাসি। আর শেষে অপেক্ষায় একটি সাদা মাইক্রোবাস, যা সাজানো হয়েছে বিদায়ী যাত্রার জন্য। কর্মজীবনের শেষ দিনে এ ধরনের আয়োজন দেখে আবেগ আপ্লূত হয়ে পড়েন তিনি।
মাইক্রোবাসে উঠে শিক্ষক এ, এন, আই মহসীন সরওয়ার বলেন, কর্মজীবনের শেষ দিনে তাঁদের এ আয়োজনে মুগ্ধ করেছে আমাকে। এমন আড়ম্বরপূর্ণ বিদায় হবে আমার এটা কখনো কল্পনা করিনি। সে কারণে সবার প্রতি কৃতজ্ঞ আমি।
তিনি জানান, ১৯৯৪ সালের ২ অক্টোবর এ প্রতিষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলাম। বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া কখনো ছুটি নেইনি। ছাত্রদের শিক্ষার পাশাপাশি নৈতিক গুণাবলি ও আগ্রহ তৈরি করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি। আজ সেই ছাত্রদের কাছ থেকে এমন ভালোবাসা পেয়ে নিজেকে ধন্য মনে করছি।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, একটানা ৩০ বছর সময় দিয়েছি এই মাদ্রাসায়। বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া কখনো ছুটি নেইনি। শিক্ষার্থীদের পাঠদানসহ বিভিন্ন কাজে আগ্রহী করে তুলতে সর্বাত্মক চেষ্টা করেছি। এর আগে সকাল থেকে ওই মাদ্রাসার হলরুমে চলে আলোচনা ও শুভেচ্ছো উপহার প্রদান। সেখানে বিদায়ী শিক্ষকের কর্মময় জীবনের স্মৃতিচারণ করে বক্তব্য দেন তার সহকর্মী ও শিক্ষার্থীরা।
অন্যদিকে ব্যতিক্রমধমী এই আয়োজন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর প্রশংসায় ভাসছেন মাদ্রাসার শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ এবি আহমদ উল্যাহ আনছারী বলেন, একজন আদর্শ শিক্ষকের যে সকল ভালো গুণ থাকা দরকার এ,এন,আই মহসীন সরওয়ারের মধ্যে তার সবগুলোই ছিলো। শ্রেণি কক্ষ ছাড়াও ক্রীড়াঙ্গনে তিনি ছিলেন বেশ প্রশংসিত। ১৯৯৪ সালের ২ অক্টোবর ওই মাদ্রাসায় বাংলার প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন এ, এন, আই মহসীন সরওয়ার। ৩০ বছর সময় শিক্ষকতা শেষে সহকারী অধ্যাপক পদ থেকে অবসওে যান তিনি। দাম্পত্য জীবনে স্ত্রী স্বাস্থ্য বিভাগে কর্মরত। তিনি এক মেয়ে সন্তানের জনক।
মাদ্রাসার উপাধ্যক্ষ এ. এইচ. এম অলিউল্যাহ, মুহাদ্দিস মো. হাবিবুর রহমান, সহকারী অধ্যাপক মাকসুদুর রহমান, প্রভাষক শোয়াইবুর রহমান, সিনিয়র শিক্ষক জাহাঙ্গির আলম প্রমুখ। শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে বক্তব্য রাখেন, মো. রাসেল মাহমুদ, মো. মহিউদ্দিন, মো. সজিব হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।