সহকর্মীর শ্লীলতাহানির অভিযোগ সহকারি প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে
লক্ষ্মীপুর বালিকা বিদ্যা নিকেতনের সহকারী প্রধান শিক্ষক লিটন চন্দ্র দেবনাথের বিরুদ্ধে তারই আরেক সহকর্মীর শ্লীলতাহানির অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি এবং লিটন চন্দ্র দেবনাথের অপসারণের দাবিতে জেলা শিক্ষা অফিসার ও জেলা প্রশাসকের বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দাখিল করেছেন ওই বিদ্যালয়ের ভুক্তভোগী সহকারী শিক্ষিকা ফরিদা ইয়াছমিন।
এছাড়া ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ রয়েছে ওই বিদ্যালয়ের আয়া নিগার সুলতানকে জড়িয়ে ধরে শরীরের স্পর্শকাতর জায়গায় হাত দিয়ে শ্লীলতাহানি ঘটায় তিনি। পরে প্রতিষ্ঠানটির আয়া কাঁদতে কাঁদতে বিদ্যালয় থেকে বেড়িয়ে স্থানীয়দের ঘটনা খুলে বলেন।
আয়া নিগার সুলতানা অভিযোগ করে জানান—তিনি ১৪ নভেম্বর বিদ্যালয়ের নামাজ ঘরে একা নামাজ পড়ছিলেন। এ সময় সহকারী প্রধান শিক্ষক লিটন চন্দ্র দেবনাথ তার গায়ে হাত দেয় এবং তার অনৈতিক কাজের উদ্দেশ্যে ধস্তাধস্তি করেন। তিনি বিদ্যালয়ে চাকুরি করতে গিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। এসব ঘটনায় স্থানীয়ভাবে জানানোর পর তাকে চাকুরিচ্যুত করার হুমকি দিচ্ছেন।
আরও পড়ুন: অনিয়ম-দুর্নীতিতেও সেরা লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার শ্রেষ্ঠ অধ্যক্ষ
জেলা প্রশাসক বরাবর পাঠানো ওই অভিযোগে জানানো হয়েছে, লিটন চন্দ্র দেবনাথ দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে ফরিদা ইয়াসমিনকে বিভিন্ন ধরনের কুপ্রস্তাব দিয়ে আসছেন। এতে রাজি না হওয়ায় শিক্ষক হাজিরা খাতায় তাকে স্বাক্ষর না দিয়ে অনুপস্থিতি দেখান। গত ১৯ নভেম্বর তিনি শ্রেণি কার্যক্রমে উপস্থিত থাকার পরেও তাকে অনুপস্থিত দেখিয়েছেন। এ বিষয়ে সদর উপজেলা অ্যাকাডেমিক সুপারভাইজার মাকসুদুল আলম বিষয়টি অবগত আছেন বলে জানান শিক্ষক ফরিদা ইয়াসমিন।
এছাড়া অভিযোগ রয়েছে সহকারী প্রধান শিক্ষক লিটন চন্দ্র দেবনাথ তার নিয়োগের পর থেকে বিদ্যালয়ে সুদের ব্যবসা পরিচালনা করে আসছেন। এছাড়া তার এলাকার লোকজন প্রতিনিয়ত হাতে স্টাম ও চেকের কাগজপত্র নিয়ে তিন থেকে ৫ লাখ টাকা সুদের টাকা গ্রহণে গৃহীতাদের বিদ্যালয়ের অফিস কক্ষে ভিড় করতে দেখা যায়। লেনদেন নিয়ে গৃহীতাদের সাথে উচ্চস্বরে কথা বলতে শুনা যায়। এতে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার বিঘ্ন ঘটছে বলে অভিযোগ করেছেন ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ অভিভাবকরা।
এছাড়াও প্রতিষ্ঠানটির সাবেক সভাপতিকে ১৫ লাখ টাকা দিয়ে এ সহকারী প্রধান শিক্ষক পদ বাগিয়ে নিয়েছেন লিটন চন্দ্র দেবনাথ—উল্লেখ করা হয়েছে একই অভিযোগপত্রে।
আরও পড়ুন: মতিঝিল মডেলে শিক্ষার্থী নেমেছে অর্ধেকে, নেপথ্যে সিন্ডিকেট-অনিয়ম
তার অসদাচরণে চরম বিপাকে রয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষক শিক্ষার্থী ও কর্মচারীরা। বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ জানিয়েছেন তারা। এছাড়াও শিক্ষার্থীদের নামাজের ঘরে তালা দিয়ে নামাজ পড়তে বাধাগ্রস্ত করার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে বিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষার্থী জানিয়েছেন, সহকারী প্রধান শিক্ষক লিটন চন্দ্র দেবনাথ বিদ্যালয়ের বিরতির সময়ে প্রাইভেট পড়াতে বাধ্য করেন এবং তিনি শিক্ষার্থীদের সাথে বিভিন্ন সময়ে খারাপ আচরণ করেন।
সহকারী প্রধান শিক্ষক লিটন চন্দ্র দেবনাথ বিভিন্ন অনিয়মের বাঁধা ও প্রতিবাদ করায় তিনি ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির যোগসাজশে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ আলমগীর হোসেনকে বিগত সরকারের আমলে মিথ্যা অভিযোগ এনে চাকুরিচ্যুত করার চেষ্টা করেন। এসব করে প্রধান শিক্ষক হওয়ার পাঁয়তারা করছেন বলে জানান অনেকে।
আরও পড়ুন: ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য হতে খরচ কোটি টাকা!
এ ব্যাপারে সহকারী প্রধান শিক্ষক লিটন চন্দ্র দেবনাথের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, বিষয়টি সমাধানে রয়েছে। এ বিষয়ে কথা বলতে হলে বিদ্যালয় খোলার সময়ে বিদ্যালয় এসে কথা বলার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি।
বিষয়টি নিয়ে শুক্রবার দুপুরে জেলা প্রশাসক রাজীব কুমার সরকার সাংবাদিকদের জানান, শিক্ষক ও কর্মচারীকে শ্লীলতাহানির অভিযোগ পেয়েছেন তিনি। এ বিষয়ে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক শিক্ষা ও আইসিটিকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
শ্লীলতাহানির অভিযোগ অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি, উন্নয়ন ও মানব সম্পদ) সম্রাট খীসা বলেন, এ বিষয়ে তদন্ত প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। তদন্তের পর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।