বরখাস্তের পর অধ্যক্ষ পলাতক, অচলাবস্থা ভিকারুননিসায়
ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নাজনীন ফেরদৌসকে বরখাস্ত করার পর পলাতক রয়েছেন। সভাপতির ক্ষমতাবলে অধ্যক্ষকে বরখাস্ত করা হলেও সিদ্ধান্তটি আনুষ্ঠানিকভাবে গভর্নিং বডির সভায় এখন পর্যন্ত নেওয়া সম্ভব হয়নি। আবার নতুন কাউকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্বও দেওয়া যায়নি। ফলে প্রশাসনিক কোনো আদেশ-নির্দেশ দেওয়া যাচ্ছে না এবং আর্থিক লেনদেনও পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। এতে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে সংশ্লিষ্ট শিক্ষক-শিক্ষার্থীকে।
ঢাকার এ খ্যাতনামা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বেইলি রোডের মূল শাখাসহ বসুন্ধরা, আজিমপুর ও ধানমণ্ডি শাখা মিলিয়ে ২৫ হাজারের বেশি ছাত্রী পড়াশোনা করছে। মোট শিক্ষক-শিক্ষিকা রয়েছেন ৬৫০ জন। এর বাইরেও কর্মচারী রয়েছে প্রায় আড়াইশ।
শিক্ষকরা জানান, বিদ্যালয়ে বার্ষিক পরীক্ষা চলমান। ছাত্রীদের আন্দোলনে ব্যাহত হওয়া পরীক্ষাগুলোর বিষয়ে পুনঃরুটিন পরিচালনা পর্ষদের সভাপতির মৌখিক নির্দেশে নির্ধারণ করা হয়েছে। একইভাবে, ধানমণ্ডি, আজিমপুর ও বসুন্ধরা শাখার প্রধানরা সংশ্নিষ্ট শাখাগুলোর নানা বিষয়ে সিদ্ধান্তের জন্য এখন ঝুলে আছেন। কিছু কিছু বিষয়ে তারা সভাপতির মুখের কথায় কাজ করছেন।
এদিকে ৯ ডিসেম্বর থেকে বিদ্যালয়ে ২০১৯ শিক্ষাবর্ষের ছাত্রীদের ভর্তি কার্যক্রম শুরু হওয়ার কথা। অধ্যক্ষ পলাতক থাকায় ওইদিন থেকে ভর্তি কার্যক্রম শুরুর বিষয়টিও বড় ধরনের অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে। জ্যেষ্ঠ শিক্ষকরা জানান, প্রতিষ্ঠানের সব লেনদেন করা হয় অধ্যক্ষের স্বাক্ষর ও সভাপতির প্রতিস্বাক্ষরে। তিনি না থাকায় ব্যাংক থেকে কোনো অর্থ উত্তোলন করা যাচ্ছে না। ফলে চলমান পরীক্ষা সংশ্নিষ্ট ব্যয়গুলোও বহন করা দুঃসাধ্য হয়ে পড়েছে।
গভর্নিং বডির সভাপতি গোলাম আশরাফ তালুকদার বলেন, কীভাবে কী করব বুঝতে পারছি না। প্রতিষ্ঠানের সব জরুরি চাবিগুলো তার (নাজনীন ফেরদৌস) কাছে রয়েছে। তিনি না এলে তো গভর্নিং বডির সভা করে অন্য কাউকে দায়িত্ব দিতে পারছি না। কারণ তিনি এ বডির সদস্য সচিব। আর নতুন কাউকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব দেওয়া না গেলে প্রতিষ্ঠান চলছে না। আইনের চোখে এখন তো তিনি পলাতক। গভর্নিং বডির একটি সূত্র জানায়, তারা নানাভাবে নাজনীন ফেরদৌসের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেছিলেন। তবে তিনি কোনোভাবেই তাতে সাড়া দেননি।
প্রসঙ্গত, সোমবার দুপুরে শান্তি নগরের নিজ বাসা থেকে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী অরিত্রী অধিকারীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়। ওই শিক্ষার্থীর পরিবারের দাবি, অরিত্রীর বিরুদ্ধে ফাইনাল পরীক্ষায় নকলের অভিযোগ তুলে তার বাবাকে ডেকে পাঠায় স্কুল কর্তৃপক্ষ। পরে অরিত্রির বাবাকে জানানো হয় তার মেয়েকে টিসি দেওয়া হবে। এ সময় প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষ এই কিশোরীর সামনে তার বাবাকে অপমান করেন। টিসি দেওয়ার হুমকি ও বাবাকে অপমান সইতে না পেরে সে আত্মহত্যা করেছে বলে তার পরিবার অভিযোগ করেছে। এ ঘটনায় শিক্ষান্ত্রণালয় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। কমিটির প্রতিবেদনে স্কুলের অধ্যক্ষসহ তিন শিক্ষক দোষী সাব্যস্ত হন। তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে র্যাব ও পুলিশকে চিঠি দিয়েছে মন্ত্রণালয়।