রাহুলের ‘বিনি পয়সার স্কুলে’ জীবন থেকে শেখা যায়
ছোটবেলায় শীতলক্ষ্যা নদীর পাশে দুরুদুরু বাতাসে হাঁটতে আমার ভীষণ ভালো লাগত। সেখানে মানুষের জীবনাচার, কোলাহল এবং শ্রমিকদের ঘাম ঝরানো ছবিগুলো আমি লুকিয়ে দেখতাম। কি এক ভূত চেপেছিল মাথায় জানি না। তারপরে আর আমার অ্যাকাডেমিক শিক্ষায় মন বসেনি।
জীবনের অধ্যায়গুলো শিখতে চেয়েছিলাম প্রকৃতির পাঠশালা থেকে। নদীর কলতান, জোয়ার ভাটা এবং প্রকৃতির মনোমুগ্ধকর রূপের প্রেমে পড়ে প্রকৃতির পাঠশালা থেকেই জ্ঞান আহরণ করেছি। শিখেছি জীবন থেকে। এটি আমার বিনি পয়সার স্কুল। আমি বিনি পয়সার স্কুল থেকে সব শিখতে পারি।
সংগীত শিল্পী রাহুল আনন্দ
এভাবেই প্রকৃতির পাঠশালা থেকে শেখার তাড়নার কথা শিক্ষার্থীদের সামনে তুলে ধরেন জলের গানের সংগীত শিল্পী রাহুল আনন্দ। একাধারে সংগীত শিল্পী, অভিনেতা আর চিত্রশিল্পীও তিনি। সুখ্যাতি পেয়েছেন নতুন নতুন বাদ্যযন্ত্র বানিয়ে। বাজাতে পারেন বহু বাদ্যযন্ত্র। ছাত্র জীবন থেকে নিজেই তৈরি করেন মিউজিক ইনস্ট্রুমেন্ট। এছাড়াও থিয়েটারে অভিনয় আর চিত্রশিল্পেও তার দখল দারুণ। অনন্য প্রতিভার যাদুকরি ব্যক্তিত্ব।
“জোয়ার ভাটা এবং প্রকৃতির মনোমুগ্ধকর রূপের প্রেমে পড়ে প্রকৃতির পাঠশালা থেকেই জ্ঞান আহরণ করেছি। শিখেছি জীবন থেকে। এটি আমার বিনি পয়সার স্কুল। আমি বিনি পয়সার স্কুল থেকে সব শিখতে পারি-সংগীত শিল্পী রাহুল আনন্দ
গত মঙ্গলবার (১১ জুন) রাজধানীর ফার্মগেটে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটশন বাংলাদেশ (কেআইবি) অডিটোরিয়ামে গণস্বাক্ষরতা অভিযানের উদ্যোগে এসএসসি পরীক্ষা-২৪ এ অকৃতকার্য শিক্ষার্থীদের নিয়ে দিনব্যাপী চ্যালেঞ্জড শিক্ষার্থী সম্মেলনে নিজের জীবনের গল্প এভাবেই তুলে দরেন তিনি।
বিনি পয়সার স্কুলে রাহুল জীবনের সব থেকে বেশি শিখেছেন। তিনি জানান, অষ্টম থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত আমি ভালো ছাত্র ছিলাম। কিন্তু তারপরে কি এক ভূত চেপেছে আমি জানি না, আমার আর অ্যাকাডেমিক শিক্ষা ভালো লাগত না। এইচএসসিতেও ২ য় বিভাগ পেয়ে উত্তীর্ণ হই। যেটা আমাদের সময়ের জন্য খুবই লজ্জাজনক ছিল।
সংগীত শিল্পী রাহুল আনন্দ
অকৃতকার্য শিক্ষার্থীদের সাহস যুগিয়ে রাহুল বলেন, তোমরা হবে পৃথিবীর সাহসী সন্তান। পরীক্ষায় সফলতা হলো একটি দরজা খোলার মতো। রাহুল বলেন, পরীক্ষার দরজা যদি ৬ ফিট উচ্চতার হয়, আর তোমার উচ্চতা যদি সাড়ে ৫ ফিট হয় তাহলে তুমি ছিটকিনি খুলবে কি করে? তাই তোমাকে শুধু একটা টুলের উপর দাঁড়িয়ে দরজার ছিটকিনি টা খুলতে হবে। তারপর মেধার রাজ্যে হারিয়ে যাবে।
রাহুল তার বিনি পয়সার পাঠশালায় শিক্ষার্থীদের আমন্ত্রণ জানান। তিনি শিক্ষার্থীদের বলেন, আমি একটা বিনি পয়সার স্কুলে পড়তাম, যেখান থেকে সব কিছু শেখা যায়। আমার হাতে যেই বাঁশিটা দেখছ! এটি ছিল একটি বাঁশের টুকরো। তোমরা এটিকে বাঁশি বলবে। কিন্তু আমি এই বাঁশের টুকরো দিয়ে সুর তুলি। এটি বিনি পয়সার স্কুলে শিখতে পারা যায়। বিনে পয়সার স্কুল অনেক বড়, এখানে প্রকৃতি থেকে শেখা যায়।
“অষ্টম থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত আমি ভালো ছাত্র ছিলাম। কিন্তু তারপরে কি এক ভূত চেপেছে আমি জানি না, আমার আর অ্যাকাডেমিক শিক্ষা ভালো লাগত না। এইচএসসিতেও ২ য় বিভাগ পেয়ে উত্তীর্ণ হই। যেটা আমাদের সময়ের জন্য খুবই লজ্জাজনক ছিল-সংগীত শিল্পী রাহুল আনন্দ
রাহুল বলেন, আমি মনে করি বিনি পয়সার স্কুলের শিক্ষা অন্য যে-কোনো শিক্ষার চেয়ে দামি। আমি চাই আমার মতো বিনে পয়সার স্কুলে তোমরাও আসো। আমাকে যারা ভালোবাসে সেটা আমার বিনি পয়সার স্কুলের কারণেই। তোমরা কথা দাও, তোমরা থেমে যাবে না। খুলতে না পারা দরজার ছিটকিনি খুলতে তোমাদের জন্য অসংখ্য শুভকামনা।
পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়ার কারণ এবং এ অবস্থা থেকে উত্তরণের সম্ভাব্য উপায় নিয়ে আয়োজিত ‘চ্যালেঞ্জড শিক্ষার্থী সম্মেলনে’ দু’শতাধিক অকৃতকার্য শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও সংশ্লিষ্ট শিক্ষক উপস্থিত ছিলেন। সংশ্লিষ্টদের মতামত শোনা এবং এ বিষয়ে গুণীজন ও নীতি-নির্ধারকদের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য দেশের ১০ শিক্ষা বোর্ডের অধীন শিক্ষক-শিক্ষার্থী, অভিভাবকদের অংশগ্রহণে এ আয়োজন করা হয়।