রমজানে স্কুল খোলা থাকবে কিনা, জানা যাবে আজ
রমজান মাসে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুল খোলা থাকবে কিনা, সে বিষয়ে সর্বোচ্চ আদালতে শুনানি হবে আজ মঙ্গলবার। এ বিষয়ে আপিল শুনানির জন্য আজ মঙ্গলবার (১২ মার্চ) বেলা সাড়ে ১১টায় দিন ধার্য করেছেন আদালত।
রমজানে স্কুল খোলা রাখার সিদ্ধান্ত স্থগিত করে হাইকোর্টের দেওয়া আদেশের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদনটি শুনানির জন্য গতকাল সোমবার উপস্থাপন করা হলে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের চেম্বার আদালত সেটি স্থগিত না করে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে পাঠিয়ে দেন।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল এম সাইফুল আলম। রিটের পক্ষে ছিলেন সিনিয়র আইনজীবী এ কে এম ফয়েজ।
রোববার জনস্বার্থে করা এক রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট বেঞ্চ রমজানে স্কুল খোলা রাখার সরকারের সিদ্ধান্ত দুই মাসের জন্য স্থগিত করেন। এ আদেশ স্থগিত চেয়ে সোমবার রাষ্ট্রপক্ষ আবেদনটি করে।
আইনজীবীরা জানান, চেম্বার আদালত হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করেননি। ফলে হাইকোর্টের আদেশ বহাল রয়েছে। যে কারণে আজ মঙ্গলবার স্কুল বন্ধ থাকছে।
একাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধানের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সারাদেশের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা আদালতের দিকে তাকিয়ে আছেন। অভিভাবকরা চান, পুরো রমজান মাস স্কুল বন্ধ থাকুক।
এ বছরের ক্লাস সূচিতে প্রথমে রমজান মাসজুড়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার কথা বলা হয়েছিল। পরে সরকারি আদেশে ১০ দিন প্রাথমিক ও ১৫ দিন মাধ্যমিক বিদ্যালয় খোলা রাখার সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়।
বছরের শুরুতে প্রাথমিক, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও কলেজে রমজানে ৩০ দিন ছুটি রেখে বাৎসরিক ছুটির তালিকা প্রকাশ করা হয়েছিল। ৮ ফেব্রুয়ারি ছুটির তালিকায় সংশোধনী এনে মাধ্যমিক বিদ্যালয় ১৫ দিন খোলা রাখার সিদ্ধান্ত জানায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
এরপর একই পথে হাঁটে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ও। তবে প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রথম ১০ দিন খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। অন্যদিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ থেকে কলেজগুলোও ১০ থেকে ২৪ মার্চ পর্যন্ত খোলা রাখার সিদ্ধান্ত হয়।
এদিকে গত ১১ ফেব্রুয়ারি ছুটির বর্ষপঞ্জি প্রকাশ করে মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তর। এতে ৭ মার্চ থেকে পুরো রমজানে মাদ্রাসা ছুটির তথ্য জানানো হয়। এ নিয়ে তখন স্কুল-কলেজের শিক্ষকরা আপত্তি জানিয়ে আসছিলেন।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ বলেন, নতুন শিক্ষাক্রমের সিলেবাস পুরোপুরি শেষ করতে গেলে মাধ্যমিক স্তরে কমপক্ষে ১৮৫ দিন ক্লাস নিতে হবে। দুটি পাবলিক পরীক্ষা, বিভিন্ন ধরনের ছুটি, দৈব-দুর্বিপাক মিলিয়ে বছরজুড়ে ১৮৫ কর্মদিবস পাওয়া কঠিন হয়ে যায়।
তিনি বলেন, সৌদি আরব, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, তুরস্ক, মিসর, কাতার, বাহরাইন, ওমান, মালয়েশিয়া– কোথাও রমজানের কারণে স্কুল বন্ধ রাখা হয় না। আমাদের দেশে কেন এ ছুটি রাখতে হবে?
এদিকে, রমজানে রাজধানীসহ দেশের প্রায় ৫০ হাজার কিন্ডারগার্টেন স্কুল খোলা থাকছে। কিন্ডারগার্টেনগুলোর মালিকদের কয়েকটি সংগঠনের নেতা ও বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের কর্ণধারের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।
কিন্ডারগার্টেন মালিকরা বলছেন, তাদের প্রতিষ্ঠানে সরকারি কোনো বরাদ্দ নেই। তারা নিজস্ব খরচে প্রতিষ্ঠান চালাচ্ছেন। শিক্ষক-কর্মচারীর বেতন, ভবন ভাড়াসহ সবই আয় থেকে মেটাতে হয়। এখন তারা কিন্ডারগার্টেন স্কুল বন্ধ করে দিলে মার্চের বেতন তুলতে পারবেন না। এতে রমজান ও ঈদে শিক্ষকদের বেতন-বোনাসও দিতে পারবেন না। এ জন্য তারা ২০ থেকে ২২ মার্চ পর্যন্ত হলেও কিন্ডারগার্টেন খোলা রাখতে চান।
বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ঐক্য পরিষদের চেয়ারম্যান এম ইকবাল বাহার চৌধুরী বলেন, ‘সব বন্ধ হলেও বাধ্য হয়েই আমাদের কিছুদিন কিন্ডারগার্টেন খোলা রাখতে হবে। কিন্ডারগার্টেনে সব শ্রেণির শিশুরা পড়ে। কেউ মধ্যবিত্ত, কেউ নিম্ন-মধ্যবিত্ত। সব অভিভাবক মাসের শুরুতে বেতন দিতে পারেন না।’
তিনি বলেন, যদি আমরা চলতি মার্চ মাসের বেতন না তুলেই স্কুল বন্ধ দিই, তাহলে রমজান ও ঈদে শিক্ষকদের না খেয়ে থাকতে হবে। কোথা থেকে তাদের বেতন-বোনাস দেব? এ জন্য আমরা কিছুদিন কিন্ডারগার্টেন খোলা রাখব।