এবার পাঠ্যবইয়ের মানচিত্রে ‘ফিলিস্তিন’ হয়ে গেল ‘ইসরাইল’
নতুন শিক্ষাক্রমের পাঠ্যপুস্তকের নানা ভুল ও অসংগতি নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা ও বিতর্কের থামছেই না। সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ে ‘শরীফ’ থেকে ‘শরীফা’ হওয়ার গল্পের পর এবার নবম শ্রেণির একই বিষয়ের বইয়ের একটি অধ্যায়ে নগর-বসতির পরিচয় দিতে গিয়ে মানচিত্রে ফিলিস্তিনকে ইসরাইল উল্লেখ করা হয়েছে।
এছাড়া ওই মানচিত্রে জুডিয়া ও সামারা নামে যে দুটি জায়গার পরিচয় দেয়া হয়েছে, এ নাম সাধারণত ইসরাইল ব্যবহার করে থাকে। মুসলিম বিশ্বে এ দুটো এলাকা পশ্চিম তীর নামে পরিচিত। এছাড়াও ওই মানচিত্রে গাজা ভূখণ্ডকে উল্লেখ করা হয়েছে ‘গাম্বিয়া’ নামে।
নবম শ্রেণির এই পাঠ্যবইয়ের দেখা যায়, ‘মিলেমিশে নিরাপদে বসবাস’ অধ্যায়ের ১৪৯ পৃষ্ঠার ‘নগর বসতি’ অংশে বলা হয়েছে Arthur E Smailes তার বিখ্যাত 'Geography of Towns' নামক বইতে যেসব প্রাচীন নগরের কথা বলেছেন সেগুলোর উৎপত্তি কোনো না কোনো নদী উপত্যকায় হয়েছিল। ইতিহাসবিদদের মতে নগরায়ণের সর্বপ্রথম বিকাশ ঘটে দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়ার জর্ডান নদী উপত্যকায় অবস্থিত জেরিকো নামক স্থানে। এ পরিচ্ছেদ শেষে প্রাচীন জেরিকো নগরের অবস্থান নিয়ে একটি মানচিত্র দেয়া হয়।
এ ধরনের কিছু বক্তব্য আমার কাছে এসেছে। এটা দেখেই বোঝা যাচ্ছে ভুল মানচিত্র ব্যবহার করা হয়েছে। নগরায়ণের পরিচিতি মানচিত্রে দেশের নাম উল্লেখ করা হয়েছে-অধ্যাপক ড. আকসাদুল আলম
জেরিকো হলো একটি প্রাচীন নগর। বৃহত্তর ফিলিস্তিন অঞ্চলের বিকশিত একটি প্রাচীন সভ্যতা। প্রাচীন জেরিকো নামক নগরের নামানুসারে এই নগরীর নামকরণ করা হয়েছে।
এদিকে, মানচিত্রে ফিলিস্তিনকে বাদ দিয়ে ইসরাইলের নাম লেখায় সমালোচনার ঝড় বইছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। সমালোচকদের অভিযোগ, নগরায়ণের মানচিত্রে বিভিন্ন নগরের নাম উল্লেখ না করে দেখানো হয়েছে দেশের নাম। এছাড়াও ইচ্ছাকৃতভাবে ইসরাইলের নাম ব্যবহার করলেও সেখানে ফিলিস্তিন দেশের নাম উল্লেখ করা হয়নি।
এছাড়াও জুডিয়া ও সামারা দুটি জায়গা চিহ্নিত করা হয়েছে। যেটা বর্তমান ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীর। কিন্তু পশ্চিম তীর না লিখে সেখানে ইসরাইল যে নামে পশ্চিম তীরকে উল্লেখ করে সেই জুডিয়া ও সামারা নামে উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়াও গাজা ভূখণ্ড যে অংশে সে অংশকে গাম্বিয়া লেখা হয়েছে।
সমালোচনকারীদের অভিমত, ইচ্ছাকৃতভাবে ফিলিস্তিনকে সরিয়ে ইসরাইলকে বসানো হয়েছে। এছাড়াও তাদের দাবি বাংলাদেশ এখনো ইসরাইলকে স্বীকৃতি দেয়নি সেখানে কীভাবে পাঠ্যবইয়ে ইসরাইলের নাম উল্লেখ করে এলাকা পরিচিতি করানো হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। যেটা রাষ্ট্রীয় নীতির বাহিরে বলে তাদের অভিমত।
আমি এ বিষয়টা মাত্র জানলাম। এ ধরনের ভুল হয়ে থাকলে অবশ্যই এটা পরিবর্তন হবে-চেয়ারম্যান, এনসিটিবি
জানতে চাইলে নবম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ের দু’জন সম্পাদনার দায়িত্বে ছিলেন। তাদের মধ্যে একজন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. আকসাদুল আলম দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, এ ধরনের কিছু বক্তব্য আমার কাছে এসেছে। এটা দেখেই বোঝা যাচ্ছে ভুল মানচিত্র ব্যবহার করা হয়েছে। নগরায়ণের পরিচিতি মানচিত্রে দেশের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বইয়ের নাম ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান। আমি শুধু ইতিহাসের অংশ দেখেছি। আর সমস্যা হয়েছে সামাজিক বিজ্ঞান অংশে। যেহেতু আমি এই বইয়ের সম্পাদনায় ছিলাম, এতটুকু বলতে পারি এটা সংশোধন হবে।
জানতে চাইলে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ফরহাদুল ইসলাম দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আমি এ বিষয়টা মাত্র জানলাম। এ ধরনের ভুল হয়ে থাকলে অবশ্যই এটা পরিবর্তন হবে।