স্কুলে ভর্তির সুযোগ পেলেন ৩ লাখ শিক্ষার্থী, অপেক্ষমাণ আরও ৩ লাখ
আগামী শিক্ষাবর্ষের (২০২৪) জন্য দেশের সব সরকারি-বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে প্রথম থেকে নবম শ্রেণিতে ভর্তিতে ডিজিটাল লটারি অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ মঙ্গলবার বেলা ১১টায় রাজধানীর সেগুনবাগিচায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে লটারি কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।
এরপর শুরু হয় দৈবচয়ন পদ্ধতিতে লটারি। ফলাফল প্রস্তুত করা সম্পূর্ণ সফটওয়্যারের মাধ্যমে। পরে দুপুর ২টার দিকে নির্বাচিত শিক্ষার্থীদের ফল প্রকাশ করা হয়। এরপর বিকেলে প্রথম ও দ্বিতীয় অপেক্ষমাণ তালিকায় থাকা শিক্ষার্থীদের ফল প্রকাশ করা হয়।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) জানিয়েছে, এবার ভর্তির জন্য তিন ধাপে শিক্ষার্থীকে নির্বাচন করা হয়েছে। প্রথম ধাপে তিন লাখ (৩ লাখ ৫ হাজার ৫২৮ জন) শিক্ষার্থীকে নির্বাচন করা হয়। এর মধ্যে সরকারি স্কুলে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে ১ লাখ ৩৯ জন শিক্ষার্থী। আর বেসরকারি স্কুলে ভর্তির জন্য নির্বাচিত হয়েছে ২ লাখ ৫ হাজার ৪৮৯ জন শিক্ষার্থী।
একই সঙ্গে আরও দুটি অপেক্ষমাণ তালিকাও করা হয়েছে। আসন শূন্য থাকা সাপেক্ষে অপেক্ষমাণদের ভর্তির সুযোগ দেয়া হবে। দুটি অপেক্ষমাণ তালিকায়ও প্রায় তিন লাখ (২ লাখ ৯৯ হাজার ৮৩ জন) শিক্ষার্থীকে নির্বাচন করা হয়েছে। এরমধ্যে প্রথম অপেক্ষমাণ তালিকায় সরকারি স্কুলে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে ৮০ হাজার ৪৭৯ জন শিক্ষার্থী, আর বেসরকারি স্কুলে সুযোগ পেয়েছে ৯৬ হাজার ২১৮ জন শিক্ষার্থী। অন্যদিকে, দ্বিতীয় অপেক্ষমাণ তালিকায় সরকারি স্কুলে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে ৫৭ হাজার ৭৭৪ জন শিক্ষার্থী, আর বেসরকারি স্কুলে সুযোগ পেয়েছে ৬৪ হাজার ৬১২ জন শিক্ষার্থী।
এ বিষয়ে মাউশির মাধ্যমিক শাখার পরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ বেলাল হোসাইন বলেন, আজ ডিজিটাল লটারি অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে তিন ধাপে শিক্ষার্থীকে নির্বাচন করা হয়েছে। নির্বাচিত ও অপেক্ষমাণ শিক্ষার্থীদেরকে আগামী ১৪ ডিসেম্বরের মধ্যে সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে ভর্তি কার্যক্রম সম্পন্ন করতে হবে।
এ দিকে মাউশি থেকে এক নির্দেশনায় জানানো হয়েছে, ডিজিটাল লটারি অনুষ্ঠান পরবর্তী নির্বাচিত শিক্ষার্থীদের ফলাফল সিট (অপেক্ষমাণ তালিকাসহ) ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে প্রেরণ করা হয়েছে। ফলাফল সিটের প্রথম তালিকা অনুযায়ী ৫ কর্মদিবসের মধ্যে, ১ম অপেক্ষমাণ তালিকা থেকে ক্রমিক নম্বর অনুসারে চার কর্মদিবস এবং ২য় অপেক্ষমাণ তালিকা থেকে ক্রমিক নম্বর অনুসারে তিন কর্মদিবসের মধ্যে শিক্ষার্থী ভর্তি কার্যক্রম সম্পন্ন করতে হবে। আগামী ১৪ ডিসেম্বরের মধ্যে সংশ্লিষ্ট এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে ভর্তি কার্যক্রম সম্পন্ন করতে হবে।
লটারি অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বলেন, শিক্ষার্থী নির্বাচন প্রক্রিয়ায় ডিজিটাল দৈবচয়ন পদ্ধতি সম্পূর্ণ সফটওয়্যারভিত্তিক হওয়ায় শতভাগ নিরপেক্ষতা বজায় রাখা সম্ভব হচ্ছে। প্রথম শ্রেণিতে ভর্তির ক্ষেত্রে আমরা অনেক আগেই লটারি চালু করেছিলাম। করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যঝুঁকির বিষয়টি মাথায় নিয়ে প্রথম থেকে নবম পর্যন্ত সব শ্রেণিতে কেন্দ্রীয় ব্যবস্থাপনায় লটারির মাধ্যমে ভর্তি নেওয়া হচ্ছে। এতে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের যে অশুভ প্রতিযোগিতা তা রোধ করা সম্ভব হচ্ছে। একই সঙ্গে কমছে বৈষম্যও।
এসময় উপস্থিত ছিলেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব সোলেমান খান, মাউশি মহাপরিচালক (ডিজি) অধ্যাপক নেহাল আহমেদ।
মাউশি বলছে, এবার কেন্দ্রীয় এই লটারির অধীনে আসা সারা দেশের সরকারি-বেসরকারি ৩ হাজার ৮৪৬টি বিদ্যালয়ে মোট আসন রয়েছে ১১ লাখ ২২ হাজার ৯৪টি। এসব আসনের বিপরীতে আবেদন করেছিল ৮ লাখ ৭৩ হাজার ৭৯২ জন ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থী। মোট আসনের মধ্যে ৬৫৮টি সরকারি বিদ্যালয়ে আসন আছে ১ লাখ ১৮ হাজার ১০১টি। এর মধ্যে আবেদন করেছে ৫ লাখ ৬৩ হাজার ১৩টি জন ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থী।
ফল জানা যাবে যেভাবে
লটারির ফলাফল ই-মেইলে স্কুলপ্রধানদের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছে মাউশি। আর শিক্ষার্থীরা কে, কোনো স্কুলে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে, সেটা আবেদনের সময় তাদের দেওয়া মোবাইল নম্বরে এসএমএস করে জানিয়ে দেওয়া হবে। পর্যায়ক্রমে মনোনীত সবাই এসএমএস পাবে।
শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা ওয়েবসাইট ও এসএমএসের মাধ্যমেও ফল জানতে পারবেন। ওয়েবসাইটে ফলাফল দেখতে gsa.teletalk.com.bd-এ লিংকে প্রবেশ করতে হবে। আর এসএমএসে ফল পেতে GSA লিখে স্পেস দিয়ে Result লিখে স্পেস দিয়ে User ID লিখে ১৬২২২ নম্বরে সেন্ড করতে হবে। ফিরতি এসএমএসে শিক্ষার্থী জেনে যাবে, সে কোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে।
অন্যদিকে যেসব শিক্ষার্থীরা চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত হননি, তাদের মধ্য থেকে লটারির মাধ্যমে দুটি অপেক্ষমাণ তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। এ অপেক্ষমাণ তালিকাও প্রকাশ করা হয়েছে।