১২ নভেম্বর ২০২৩, ১৭:৪৯

নীতিমালার খসড়া তৈরি হয়নি, বেসরকারি শিক্ষকদের বদলি কবে?

শ্রেণিকক্ষে পাঠদানরত শিক্ষক  © ফাইল ফটো

বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কর্মরত শিক্ষকদের বদলি চালুর নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এজন্য একটি খসড়া নীতিমালা তৈরি করবে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)। তবে নীতিমালা তৈরির কাজ শেষ করতে পারেনি সংস্থাটি। ফলে বেসরকারি শিক্ষকদের বদলির বিষয়টি ঝুলেই রয়েছে।

গত ২২ অক্টোবর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিবের সভাপতিত্বে বদলি সংক্রান্ত সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় বদলি নিয়ে যে আলোচনা হয়েছে সেগুলো নোট আকারে মাউশির ঢাকা বিভাগীয় আঞ্চলিক কার্যালয়কে লিপিবদ্ধ করে জমা দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়। তবে সেটি লিপিবদ্ধ আকারে এখনও জমা দেওয়া হয়নি বলে জানা গেছে।

আরও পড়ুন: শিক্ষকদের বদলি নীতিমালা তৈরির সভায় যে আলোচনা হলো

মাউশির ঢাকা বিভাগীয় আঞ্চলিক কার্যালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, সভায় বিভিন্ন সংস্থা ও দপ্তরের কর্মকর্তারা একাধিক মন্তব্য দিয়েছেন। বিষয়গুলো সঠিকভাবে লিপিবদ্ধ করে তবেই মাউশিতে জমা দিতে হবে। এজন্য কিছুটা সময় লাগছে। তবে দ্রুত সময়ের মধ্যে লিখিত আকারে খসড়া মাউশিতে পাঠানো হবে।

‘শূন্য পদের বিপরীতে বদলি হবে কি না সে বিষয়ে এখনই মন্তব্য করা যাবে না। কেননা বিষয়টি নিয়ে কেবল একটি সভা হয়েছে। সেখানে অনেক ধরনের মতামত এসেছে। এ বিষয়ে আরও আলোচনার প্রয়োজন রয়েছে। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাবেন শিক্ষামন্ত্রী’—হাবিবুর রহমান, মহাপরিচালক, মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তর

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আঞ্চলিক কার্যালয় থেকে খসড়া ড্রাফট পাওয়ার পর তা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। এরপর শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির সভাপতিত্বে একটি সভা করে খসড়া চূড়ান্ত করা হবে। তবে সামনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন থাকায় এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসতে কিছুটা বিলম্ব হতে পারে।

শ্রেণিকক্ষে শিক্ষক

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মাউশির মাধ্যমিক শাখার এক কর্মকর্তা দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘বদলি নীতিমালা তৈরির ক্ষেত্রে কিছুটা ধীরগতিতে চলা হচ্ছে। এর অন্যতম কারণ আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এছাড়া খসড়া নীতিমালা তৈরির কাজও শুরু হয়নি। আঞ্চলিক কার্যালয় থেকে ড্রাফট পাওয়ার পর তা যাচাই-বাছাই করে মন্ত্রণালয়ে পাঠাতেও বেশ সময় লাগবে। নির্বাচনের আগে বদলি নীতিমালা চালু হওয়া বেশ কঠিন।’

এ বিষয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (মাধ্যমিক) প্রফেসর বেলাল হোসাইন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘বদলি সংক্রান্ত নীতিমালা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়নি। কাজেই বদলি কবে নাগাদ চালু হতে পারে সে বিষয়ে এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না।’

‘আমরা একটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শিক্ষকদের বদলি করতে চাই, যেন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কিংবা ‍শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত না হন। এজন্য দু’জনের সম্মতিতে পারস্পরিক বদলি নয়, শূন্যপদের বিপরীতে বদলির সুযোগ দেয়া হবে। বদলি হওয়ার জন্য যোগ্য হতে শিক্ষকদের তিন বা পাঁচ বছর কর্মরত থাকার শর্ত দেয়া হতে পারে। এছাড়া শিক্ষক নিবন্ধনের প্রাপ্য নম্বর মেধার মানদণ্ড হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।’ 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কর্মরত শিক্ষকদের শূন্য পদের বিপরীতে বদলি করা হতে পারে। বদলির সুযোগ পেতে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত কর্মরত থাকতে হবে। আর বদলির বিষয়ে মেধাবী শিক্ষকরা অগ্রাধিকার পাবেন। এজন্য নিবন্ধন পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বর বিবেচনা করা হতে পারে। সার্বিক বিষয়ে আরো যাচাই-বাছাই করে প্রতিষ্ঠান পরিবর্তনের খসড়া নীতিমালা চূড়ান্তকরণের পর এমপিও শিক্ষকদের বদলির সুযোগ দেয়া হবে। 

গত ২২ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হওয়া সভায় উপস্থিত ছিলেন এমন একজন কর্মকর্তার সাথে কথা বলে জানা গেছে, এমপিও নীতিমালা অনুযায়ী শিক্ষকদের সমপদে এবং সম-স্কেলে বদলি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তবে এটি করলে দুইজন শিক্ষকের সম্মতির প্রয়োজন হবে। কাজেই এই প্রক্রিয়ায় বদলি চালু করা হলেও সেটি সফলতার মুখ দেখবে না। কেননা হাওড় অঞ্চলে কর্মরত একজন শিক্ষক জেলা শহরে আসতে চাইলেও জেলা শহর থেকে শিক্ষকরা হাওড়ে যেতে চাইবেন না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘আমরা একটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শিক্ষকদের বদলি করতে চাই, যেন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কিংবা ‍শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত না হন। এজন্য দু’জনের সম্মতিতে পারস্পরিক বদলি নয়, শূন্যপদের বিপরীতে বদলির সুযোগ দেয়া হবে। বদলি হওয়ার জন্য যোগ্য হতে শিক্ষকদের তিন বা পাঁচ বছর কর্মরত থাকার শর্ত দেয়া হতে পারে। এছাড়া শিক্ষক নিবন্ধনের প্রাপ্য নম্বর মেধার মানদণ্ড হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।’ 

হাবিবুর রহমান

এ বিষয়ে মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) হাবিবুর রহমান দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘শিক্ষকদের বদলি নিয়ে একটি খসড়া নীতিমালা তৈরির কাজ চলছে। এটি মাউশি থেকে মন্ত্রণালয়ে জমা দেবে। পরবর্তীতে শিক্ষামন্ত্রীর সভাপতিত্বে আরেকটি সভায় খসড়া নিয়ে আলোচনা হবে। মন্ত্রীর অনুমোদন পেলে খসড়া চূড়ান্ত করা হবে।’

শূন্য পদের বিপরীতে বদলি হবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে মাদ্রাসা অধিদপ্তরের ডিজি আরও বলেন, ‘শূন্য পদের বিপরীতে বদলি হবে কিনা সে বিষয়ে এখনই মন্তব্য করা যাবে না। কেননা বিষয়টি নিয়ে কেবল একটি সভা হয়েছে। সেখানে অনেক ধরনের মতামত এসেছে। এ বিষয়ে আরও আলোচনার প্রয়োজন রয়েছে। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাবেন শিক্ষামন্ত্রী।’