নতুন কারিকুলামের নবম শ্রেণির বই ছাপা শুরুই হয়নি
আগামী শিক্ষাবর্ষে অষ্টম ও নবম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রমের পাঠদান শুরু হচ্ছে। এজন্য প্রায় সাড়ে ১০ কোটি বই ছাপাতে হবে। অষ্টম শ্রেণির পাঠ্যপুস্তক ছাপানোর কাজ শুরু হলেও নবম শ্রেণির নতুন বই মুদ্রণের কাজ শুরুই হয়নি। ফলে বছর শুরুতে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দেওয়া নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
যদিও জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) দাবি, নবম শ্রেণির বইয়ের পারসেজ অর্ডার (ক্রয় আদেশ) হয়ে গেছে। প্রধানমন্ত্রীর সম্মতিও মিলেছে। মুদ্রণ প্রতিষ্ঠানের সাথে এ বিষয়ে চুক্তি করে দ্রুত বই ছাপানোর কাজ শুরু করা হবে। আগামী ২৫ ডিসেম্বরের মধ্যে নবম শ্রেণির বই উপজেলায় পাঠানো হবে। ফলে নতুন বছরের প্রথম দিন নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীরাও নতুন বই হাতে পাবেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০২৪ সালে প্রাথমিক, ইবতেদায়ি ও মাধ্যমিকের প্রায় ৩১ কোটি বই ছাপানো হবে। এর মধ্যে অষ্টম ও নবম শ্রেণির জন্য ছাপানো হবে ১০ কোটি ৪১ লাখ ৫০ হাজারের বেশি বই। অষ্টম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান ছাড়া অন্যান্য বই ছাপানোর কাজ শুরু হয়েছে। তবে নবম শ্রেণির কোনো বই ছাপানোর কাজ শুরু করা যায়নি।
‘বই নিয়ে যেন কোনো সমালোচনা না হয় সেজন্য এবার নবম শ্রেণির বইয়ের কপি একাধিকবার সংশোধন করা হয়েছে। সেজন্য পারসেজ অর্ডার ইস্যু করতে কিছুটা সময় লেগেছে। তবে বইগুলো নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই শিক্ষার্থীরা হাতে পাবে— অধ্যাপক ফরহাদুল ইসলাম, চেয়ারম্যান, এনসিটিবি
এনসিটিবির একটি সূত্র জানিয়েছে, নানা জটিলতার কারণে নবম শ্রেণির বই ছাপানোর কাজ শুরু করা যায়নি। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তারা দেশের বাইরে থাকায় পারসেজ অর্ডার ইস্যু করা যায়নি। এছাড়া প্রধানমন্ত্রীর সম্মতি না মেলায় বইয়ের টেন্ডারসহ কোনো কাজই শুরু করতে পারেনি সংস্থাটি।
ওই সূত্র আরও জানায়, আজ মঙ্গলবার পারসেজ অর্ডার ইস্যুসহ প্রধানমন্ত্রীর সম্মতি পাওয়া গেছে। প্রধানমন্ত্রীর সম্মতি পাওয়ার পর বোর্ড সভা করে দ্রুত সময়ের মধ্যে বই ছাপানোর কাজ শুরুর উদ্যোগ নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। নবম শ্রেণির বই ছাপানোর দায়িত্ব পাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোকে ৫০ দিনের মধ্যে বই মুদ্রণ শেষ করে সংশ্লিষ্ট উপজেলায় পৌঁছে দেওয়ার বাধ্যবাধকতা দেওয়া হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে এনসিটিবি সদস্য (পাঠ্যপুস্তক) প্রফেসর লুৎফুর রহমান দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘নবম শ্রেণির বই ছাপানো নিয়ে কোনে জটিলতা নেই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্মতি দিয়েছেন। এখন বই ছাপানোর কাজ শুরু হবে। ৫০ দিনের মধ্যে বই ছাপিয়ে সংশ্লিষ্ট উপজেলায় পাঠানোর নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে।’
‘আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচিতে বইগুলো নিরাপদে পাঠানো নিয়েও শঙ্কা রয়েছে। এছাড়া অবরোধের অজুহাতে ছাপাখানাগুলো কাগজের সংকট তৈরি হয়েছে বলে জানাচ্ছে। সব মিলিয়ে নবম শ্রেণির সব বই নির্ধারিত সময়ে শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেওয়া নিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে’— এনসিটিবি কর্মকর্তা
এনসিটিবির একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইটি দফায় দফায় সংশোধন করা হয়েছে। এজন্য একটু বেশি সময় লেগেছে। নতুন শিক্ষাক্রম হওয়ায় সাবধানতার সাথে বই ছাপানো হচ্ছে। নবম শ্রেণির বই ৫০ দিনের মধ্যে ছাপানোর বাধ্যবাধকতা দেওয়া হলেও হরতাল-অবরোধসহ নানা কারণে এই সময়ের মধ্যে বই ছাপানোর কাজ শেষ করা কষ্টসাধ্য।
ওই সূত্র জানিয়েছে, প্রেস মালিকরা কাগজ না পাওয়ার কথা এনসিটিবে জানিয়েছে। কাগজের সংকট থাকলে বই ছাপানোর কাজ শুরু করা গেলেও নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শেষ করা সম্ভব হবে না। এক্ষেত্রে বছরের প্রথম দিন নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দেওয়ার শঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এনসিটিবির এক কর্মকর্তা দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানান, ‘নবম শ্রেণির বইয় ছাপানো, বাধাই করা এবং সংশ্লিষ্ট উপজেলায় পৌঁছে দেওয়ার জন্য ৫০ দিনের সময় বেধে দেওয়া হয়েছে। অন্যান্য শ্রেণির বই ছাপাতে এর চেয়ে অনেক বেশি সময় দেওয়া হয়েছে। তাড়াহুড়ো করে বই ছাপানোর নির্দেশনা দেওয়ায় বইয়ের গুণগত মান বজায় রাখা কঠিন হয়ে যাবে।’
ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচিতে বইগুলো নিরাপদে পাঠানো নিয়েও শঙ্কা রয়েছে। এছাড়া অবরোধের অজুহাতে ছাপাখানাগুলো কাগজের সংকট তৈরি হয়েছে বলে জানাচ্ছে। সব মিলিয়ে নবম শ্রেণির সব বই নির্ধারিত সময়ে শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেওয়া নিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে।’
যথাসময়ে শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দেওয়া হবে জানিয়ে এনসিটিবি চেয়ারম্যান প্রফেসর মো. ফরহাদুল ইসলাম দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘বই নিয়ে যেন কোনো সমালোচনা না হয় সেজন্য এবার নবম শ্রেণির বইয়ের কপি একাধিকবার সংশোধন করা হয়েছে। সেজন্য পারসেজ অর্ডার ইস্যু করতে কিছুটা সময় লেগেছে। তবে বইগুলো নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই শিক্ষার্থীরা হাতে পাবে।’
নবম শ্রেণির বইয়ের মান নিয়ে কোনো সমস্যা হবে না জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের অনেক বই ছাপার কাজ শেষ হয়ে গেছে। ফলে প্রেসগুলো এখন ফাঁকা। তারা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারবে। বইয়ের মানের ব্যাপারে আমরা কোনো আপোষ করবো না। আমাদের অফিসাররা প্রতিনিয়ত প্রেসগুলোতে যাচ্ছেন। কোথাও নিম্ন মানের বই ছাপানো হলে সঙ্গে সঙ্গে ফর্মা বাতিল করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।’ .