মাধ্যমিকে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম সুবিধা পায় না ২২ লাখ শিক্ষার্থী
ডিজিটাল থেকে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ ও প্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষায় সরকারের আগ্রহ থাকলেও প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে তার প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না। সামগ্রিক হিসেবে দেশের মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষায়তনে পরিমাণ ও সংখ্যাগত উঠা-নামায় আটকে আছে শিক্ষার্থীদের সহজ মাধ্যমে শেখানোর অন্যতম উপকরণ মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুমের সংখ্যা। বিগত এক বছরে দেশের শিক্ষালয়গুলোতে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম বৃদ্ধির হার মাত্র শূন্য দশমিক ৮১ শতাংশ। বর্তমানে ৭৮ দশমিক ৩৯ শতাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম থাকলেও এখনও এ সুবিধা থেকে বঞ্চিত দেশের মাধ্যমিক শিক্ষা-স্তরের ২১ লাখ ৮৯ হাজার ৭৭২ জন শিক্ষার্থী।
পরিসংখ্যান বলছে, দেশের মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোর মধ্যে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম নেই ৪ হাজার ৩৯৮টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে। শতাংশের হিসেবে যে হার ২১ দশমিক ৪১ শতাংশ। এ তথ্য জানানো হয়েছে বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর (ব্যানবেইস) এর সর্বশেষ বার্ষিক প্রতিবেদনে।
তাদের তথ্য বলছে, দেশের মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোর মধ্যে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম রয়েছে ১৫ হাজার ৯৫৫টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে; যা দেশের মোট বিদ্যালয়গুলোর ৭৮ দশমিক ৩৯ শতাংশ। তবে দেশে সরকারি মাধ্যমিকে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম বাড়লেও কমছে বেসরকারি বিদ্যালয়গুলোতে।
প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, দেশে বর্তমানে সরকারি ও বেসরকারি মিলিয়ে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ২০ হাজার ৩৫৩টি। এরমধ্যে সরকারি প্রতিষ্ঠান ৬৯১টি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ১৯ হাজার ৬৬২টি। এসব প্রতিষ্ঠানে পাঠদানে কর্মরত আছেন ২ লাখ ৭৮ হাজার ৬০৮ জন শিক্ষাগুরু। পাশাপাশি দেশে মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১ কোটি ১ লাখ ৩৩ হাজার ১৪৩ জন। এদের মধ্যে ছাত্রী সংখ্যা ৫৫লাখ ৪১ হাজার ৭১২ জন। দেশের ৬৯১ টি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম রয়েছে ৬৬৮টি। আর ২০ হাজার ৩৫৩টি বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম রয়েছে ১৫ হাজার ৯৫৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। দেশের সরকারি ও বেসরকারি মিলিয়ে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম সুবিধা পায় ৭৯ লাখ ৪৩ হাজার ৩৭১ জন বিপরীতে এ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে দেশের ২১ লাখ ৮৯ হাজার ৭৭২ জন শিক্ষার্থী।
ব্যানবেইসের প্রতিবেদনে আরও জানানো হয়েছে, তবে সামগ্রিক হিসেবে গত এক বছরে দেশের মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে বেড়েছে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুমের সংখ্যা। গাণিতিক হিসেবে যার পরিমাণ মাত্র ০ দশমিক ৮১ শতাংশ। বর্তমানে দেশের মাধ্যমিক মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম রয়েছে ৭৮ দশমিক ৩৯ শতাংশ প্রতিষ্ঠানে। যা ২০২১ সালে ছিল ৭৭ দশমিক ৫৮ শতাংশ। এর আগে যা ছিল ২০২০ সালে ৭৮ দশমিক ৯৭ শতাংশ। সে হিসেবে দেশের মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোয় মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুমের সংখ্যা আটকে রয়েছে পরিমাণ ও সংখ্যাগত উঠা-নামায়। তবে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম যেন শিক্ষার্থীদের শিখন-পঠনে সহায়তা করে; তাতে জোর দেওয়া উচিত বলে মনে করেন শিক্ষাবিদ ও দেশের সংশ্লিষ্টরা।
যারা মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুমের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে তাদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থার মাধ্যমে প্রযুক্তিতে দক্ষ করার উদ্যোগ নিতে হবে। তাহলে আমাদের প্রযুক্তিভিত্তিক বা মাধ্যমের শিক্ষায় দক্ষ জনশক্তি তৈরি করার প্রচেষ্টায় সাফল্য আসবে—মো. শাহনেওয়াজ খান চন্দন।
তারা বলছেন, প্রযুক্তিভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণ বিশেষ করে প্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষা-ব্যবস্থা বিনির্মাণে বাধা হিসেবে কাজ করছে বড় সংখ্যক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম না থাকা। তারা আরও বলছেন, ২০৪১ সালের মধ্যে দেশের সব স্কুলের সব শ্রেণিকক্ষের মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুমে প্রবেশ ও দেশের শিক্ষা মাধ্যমে তখন ‘চক-ডাস্টারের’ শ্রেণিকক্ষ না রাখার এ উদ্যোগের সাফল্য আনতে শুধু মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম স্থাপন করলেই হবে না বরং সার্বিক সাফল্য আনতে কাজ করতে হবে পরিকল্পিত দক্ষতার সাথে।
যদিও জাতীয় শিক্ষানীতিতে বলা হয়েছিল, দেশের শিক্ষার্থীদের তথ্যপ্রযুক্তি শিক্ষা ও প্রযুক্তি মাধ্যমে আন্তর্জাতিক মান ও গুণ সম্পন্ন করে শিক্ষিত ও প্রশিক্ষিত জনবল তৈরির প্রচেষ্টা চালানো হবে তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক মাধ্যমকে শিক্ষার প্রসারে কাজে লাগানোর মাধ্যমে। সেজন্য তথ্যপ্রযুক্তিকে শুধু কম্পিউটার বিজ্ঞানের মাঝে সীমিত না রেখে মোবাইল ফোন, রেডিও, টেলিভিশন, নেটওয়ার্কিং কিংবা সকল তথ্য সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াকরণের ব্যাপক অর্থে ব্যবহার করার জন্য শিক্ষার্থীদের হাতে-কলমে শেখানো হবে প্রযুক্তি-মাধ্যম। যার প্রাতিষ্ঠানিক সহায়তা করবে সরকার তথা শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানগুলো।
জাতীয় শিক্ষানীতিতে স্পষ্ট করে আরও বলা হয়েছে, মাধ্যমিক পর্যায়ে প্রবেশের আগেই সকল শিক্ষার্থীকে তথ্যপ্রযুক্তি ও তার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে শিক্ষিত করা হবে। একইসঙ্গে, শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞান ও গণিত বিষয়ের সঙ্গে কম্পিউটার বিষয় নিয়ে পড়াশোনা সুযোগ করে দেয়া হবে; যা হবে হাতে-কলমে। আর শেখানোর এ কাজকে সহজ করতে যা করা হবে ভিজ্যুয়াল(অডিও, ভিডিও এবং সচিত্র) মাধ্যমে অর্থাৎ মাল্টি-টাস্কিং সুবিধা-সম্পন্ন মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুমে। কিন্তু, মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম না থাকা, দক্ষ শিক্ষক না থাকা, অবকাঠামো ও ইন্টারনেটসহ নানা সীমাবদ্ধতার কারণে সম্ভব হচ্ছে না শিক্ষার্থীদের মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুমের মাধ্যমে পাঠদানের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের দক্ষ করে গড়ে তোলার প্রচেষ্টা।
এর আগে সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যৌথ উদ্যোগে ‘এটুআই’ প্রকল্পের আওতায় এ প্রকল্প চালু করা হয় ২০১১ সালে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১২ সালের মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুমের উদ্বোধন করেন। ওই প্রকল্পের আওতায় দেশে ২০ হাজার ৫০০ স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসায় একটি করে কম্পিউটার ল্যাব ও মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম স্থাপন করা হয়েছিল। প্রতিষ্ঠানগুলোতে একটি ল্যাপটপ, ইন্টারনেট মডেম, স্ক্রিনসহ মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর এবং সাউন্ড সিস্টেম প্রদান করা হয়েছিল।
আমরা প্রচলিত শিক্ষায় প্রয়োজনভিত্তিক দক্ষ জনবল তৈরি করতে পারছি না। একজন শিক্ষার্থীও কোন কিছু না শিখতে পারলে সে অদক্ষ হয়ে বা না শিখে বড় হবে। যার প্রভাব তার পরবর্তী জীবন ও কর্মে পড়বে। এতে দেশের আগামীর অর্থনীতিতে যার প্রভাব পড়বে—ড. কাজী খলীকুজ্জমান।
এরপর ২০১৫ সালে প্রকল্পটি শেষ হলে ‘আইসিটি ফেজ-২’ প্রকল্প হাতে নেয় সরকার। ২০১৬ সালে নেয়া ওই প্রকল্পের লক্ষ্য ছিল দেশের ৩১ হাজার ৩৪০টি ডিজিটাল ক্লাসরুম চালু করা। এ প্রকল্পটি যাত্রা শুরু করে ২০১৭ সালে এবং প্রকল্পটি সরকারি খাতে স্থানান্তর করা হয় ২০২০ সালে। তখন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মনিটরিং অ্যান্ড ইভ্যালুয়েশন উইং এর বাস্তবায়ন ও মনিটরিং এ দায়িত্ব পায়। তবে দেশের ২৫ হাজারের বেশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাল্টিমিডিয়া উপকরণের কোনো অস্তিত্ব বা হদিস পাওয়া যায়নি সরকারি খাতে হস্তান্তরের আগে প্রকল্পের অধীন চালু করা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে। আর এ কার্যক্রমকে সফল করতে ও সক্রিয় রাখতে করা হয়েছিল সমন্বিত মনিটরিং কমিটি; যাতে দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল জেলা প্রশাসক ও জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে।
দেশের মাধ্যমিক স্তরের যে-সব প্রতিষ্ঠানে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম রয়েছে তার থেকেও সাফল্য আনা যাচ্ছে না দক্ষ শিক্ষক না থাকার কারণে। পর্যবেক্ষণ বলছে, মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষক ছাড়াও নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ, ধীরগতির ইন্টারনেট বা ইন্টারনেট না থাকা, প্রয়োজনীয় অবকাঠামো এবং সার্বিক দক্ষতার অভাবে প্রাতিষ্ঠানিক সাফল্য আসছে না। যদিও সরকারের লক্ষ্য, দেশে ২০৪১ সালের মধ্যেই ই-বুক যুগ অর্থাৎ কাগুজে বইয়ের বিকল্প চিন্তার বাস্তবায়ন করা। সেজন্য শ্রেণিকক্ষে শতভাগ শিক্ষার্থীদের জন্য পাঠদান পদ্ধতি মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুমের মাধ্যমে সম্পন্ন করার লক্ষ্য ২০৩০ সালের মধ্যে।
এ বিষয়ে অর্থনীতিবিদ, উন্নয়ন চিন্তাবিদ ও জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণয়ন কমিটির কো-চেয়ারম্যান ড. কাজী খলীকুজ্জমান দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, শিক্ষার্থীদের হাতে-কলমে শেখানোর ক্ষেত্রে বিদ্যালয়ে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম থাকাটা অপরিহার্য। আমাদের বিভিন্ন বিদ্যালয় থেকে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম না থাকার বিষয়টি একটি বড় সীমাবদ্ধতা। একইসঙ্গে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম আছে কিন্তু যন্ত্রপাতি ও উপকরণ নেই, দক্ষ জনবল নেই, ইন্টারনেট নেই কিংবা অবকাঠামো নেই-এমন সব সমস্যারও সমাধান করা দরকার।
ড. কাজী খলীকুজ্জমান মনে করেন, এতে শিক্ষায় বৈষম্য তৈরি হচ্ছে; পাশাপাশি প্রচলিত শিক্ষায় সমান সুবিধা না পাওয়া একজন শিক্ষার্থী শিক্ষিত হতে পারছে না পরিপূর্ণভাবে। তিনি বলেন, আমরা প্রচলিত শিক্ষায় প্রয়োজনভিত্তিক দক্ষ জনবল তৈরি করতে পারছি না। একজন শিক্ষার্থীও কোন কিছু না শিখতে পারলে সে অদক্ষ হয়ে বা না শিখে বড় হবে। যার প্রভাব তার পরবর্তী জীবন ও কর্মে পড়বে। এতে দেশের আগামীর অর্থনীতিতে যার প্রভাব পড়বে। তিনি বলেন, দক্ষ জনবল না থাকলে তো আপনি কাজ করতে পারবেন না।
মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম স্থাপনের পর তার তদারকির কাজটি ‘অ্যাসপায়ার টু ইনোভেশন’ (এটুআই) করছে। দেশের চলমান আর্থিক ব্যয় সংকোচনের কারণে এর তদারকিসহ কাজের গতি কিছুটা কমেছে। সংকট কেটে গেলে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম স্থাপন ও তার তদারকি আমরা করতে পারব—অধ্যাপক মো. আমির হোসেন।
তিনি দেশের বেসরকারি খাতের উদাহরণ দিয়ে বলেন, আমাদের দক্ষ জনবলের অভাবের সুযোগ নিয়ে পার্শ্ববর্তী ভারত ও শ্রীলঙ্কার মতো দেশ আমাদের দেশ থেকে প্রায় ৫-৬ বিলিয়ন ডলার আয় করছে। সেজন্য এই অর্থনীতিবিদ মনে করেন শিক্ষা এবং দক্ষতার সম্মিলন ঘটাতে হবে। সেজন্য দক্ষতাভিত্তিক শিক্ষা বিশেষকরে তথ্য ও প্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষায় হাতেকলমে শিখিয়ে আমাদের শিক্ষার্থীদের দক্ষ করে গড়ে তুলতে হবে।
দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম না থাকার ফলে মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীরা মারাত্মক বৈষম্যের শিকার হচ্ছে জানিয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের সহকারী অধ্যাপক মো. শাহনেওয়াজ খান চন্দন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানান, আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা অনেকটা শিক্ষক নির্ভর অর্থাৎ আমাদের শিক্ষকরা যা বলেন তাই শিখতে হবে। এমন ধারা থেকে বের হতে এবং শিক্ষার্থীদের জন্য পাঠদানকে আনন্দময় করতে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম করা হয়েছে। যা আমাদের নতুন শিক্ষানীতিতেও বলা হয়েছিল এবং আমি আশাবাদী এ নীতি বাস্তবায়ন করতে পারলে আমাদের শিক্ষার্থীরা তথ্য ও প্রযুক্তিতে দক্ষ হয়ে উঠবে।
সমস্যা সমাধানে তিনি মনে করেন আমাদের কারিকুলামের যথাযথ বাস্তবায়ন, সবার অংশগ্রহণ, শিক্ষক স্বল্পতা দূরীকরণ ও তাদের যথাযথ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ করে গড়ে তোলা এবং সামগ্রিক বিষয়কে তদারকি করতে পারলে সাফল্য আসবে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুমের মাধ্যমে পাঠদানের লক্ষ্যমাত্রায়। পাশাপাশি, যারা এ সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে তাদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থার মাধ্যমে তাদের প্রযুক্তিতে দক্ষ করার মাধ্যমে সাফল্য আসবে প্রযুক্তিভিত্তিক বা মাধ্যমের শিক্ষায় দক্ষ জনশক্তি তৈরি করার প্রচেষ্টায়—যুক্ত করেন মো. শাহনেওয়াজ খান চন্দন।
বর্তমানে দেশের সরকারি ও বেসরকারি মিলিয়ে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ২০ হাজার ৩৫৩টি। এর মধ্যে সরকারি প্রতিষ্ঠান ৬৯১টি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ১৯ হাজার ৬৬২টি। এসব প্রতিষ্ঠানে পাঠদানে কর্মরত আছেন ২ লাখ ৭৮ হাজার ৬০৮ জন শিক্ষাগুরু। পাশাপাশি দেশে বর্তমানে মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১ কোটি ১ লাখ ৩৩ হাজার ১৪৩ জন। এদের মধ্যে ছাত্রী সংখ্যা ৫৫লাখ ৪১ হাজার ৭১২ জন।
বর্তমানে ‘আইসিটি ফেজ-২’ প্রকল্পের মাধ্যমে দেশের সকল মাধ্যমিক শিক্ষালয়ে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম বাস্তবায়ন সংক্রান্ত কাজটি বাস্তবায়ন করছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মনিটরিং অ্যান্ড ইভ্যালুয়েশন উইং। সংস্থাটির মনিটরিং এন্ড ইভ্যালুয়েশন উইংয়ের পরিচালক অধ্যাপক মো. আমির হোসেন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, দেশের সকল শিক্ষার্থীকে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুমের মাধ্যমে প্রযুক্তিনির্ভর পাঠদানের লক্ষ্য রয়েছে সরকারের। সে লক্ষ্যে দেশের সকল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম স্থাপনের কাজ চলমান রয়েছে। আশা করছি, যে-সব প্রতিষ্ঠানে বাদ রয়েছে সেখানে খুব দ্রুতই আমরা কাজ শেষ করতে পারব; শতভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষার্থীদের আমরা মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুমের সুযোগ দিতে পারব।
বর্তমানে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম স্থাপনের পর তার তদারকির কাজটি দেশের পাবলিক সেক্টরের ডিজিটাল রূপান্তরে কাজ করার বিশেষ উদ্যোগ ‘অ্যাসপায়ার টু ইনোভেশন’ (এটুআই) করছে। দেশের চলমান আর্থিক ব্যয় সংকোচনের কারণে এর তদারকিসহ কাজের গতি কিছুটা কমেছে। এ সংকট কেটে গেলে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম স্থাপন ও তার তদারকি আমরা করতে পারব—যুক্ত করেন অধ্যাপক মো. আমির হোসেন।