৪০ বছর বয়সে একসঙ্গে এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছেন স্বামী-স্ত্রী
শিক্ষার কোনো বয়স নেই। সেই শিক্ষা অর্জন করা যায় যদি জীবনসঙ্গীকে নিয়ে একসঙ্গে তা হলে সেটির আনন্দই আলাদা। অদম্য ইচ্ছাশক্তি আর মনোবলই পারে সকল কৃতিত্ব অর্জন করতে। তাই বয়সকে তুচ্ছ করে ৪০ বছর বয়সে শিক্ষা অর্জনে এক সঙ্গে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন নাটোরের গুরুদাসপুরের এক দম্পতি।
বৃহস্পতিবার (১৫ সেপ্টেম্বর) নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলা পৌর সদরের বেগম রোকেয়া গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন এক দম্পতি।
গুরুদাসপুর পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের খামারনাচঁকৈড় মহল্লার মৃত আসাদ আলী মোল্লার ছেলে ও সাবেক কাউন্সিলর ফজলুর রহমান (৪০)। স্ত্রী মর্জিনা বেগম (৩০) একই মহল্লার মৃত মজিবর রহমানের মেয়ে। দুজনই উপজেলার বিয়াঘাট কারিগরি কমার্স কলেজের ভোকেশনাল শাখার ২০২২ সালের শিক্ষার্থী।
পরীক্ষার্থী ফজলুর রহমান বলেন, আমার বয়স এখন ৪০ বছর। আমার স্ত্রীর প্রায় ৩০ বছর। আমাদের সংসারে একটি মেয়ে ও একটি ছেলে সন্তান রয়েছে। দীর্ঘদিন পর আমরা দুইজন সিদ্ধান্ত নেই আমরা আবার পড়াশোনা শুরু করবো। পরে দুজনই একই সাথে বিয়াঘাট কারিগরি কমার্স কলেজে ২০২০ সালে নবম শ্রেণীতে ভর্তি হই। নিয়মিত স্কুলে না যেতে পারলেও বাড়িতে দুইজন পড়াশোনা করতাম।
করোনার কারণে প্রথমে পরীক্ষা না হলেও ২০২২ সালে এসে এসএসসি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। বৃহস্পতিবার বাংলা দ্বিতীয় পত্র পরীক্ষা ছিল। আমরা দুইজন এক সাথে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছি এবং আমাদের পরীক্ষাও অনেক ভাল হয়েছে। আগামী শনিবার ইংরেজি দ্বিতীয় পত্র পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি। ছেলেমেয়েদের কথা চিন্তা করে নতুন করে পড়াশোনা শুরু করেছি। সাধ্যমত চেষ্টা করবো উচ্চ ডিগ্রি অর্জন করার।
আরও পড়ুুন: ‘বেসরকারি চাকরি: এ প্রজন্মের বড় সমস্যা অ্যাটিচিউড’
ফজলুর রহমান আরও বলেন, ৫ বছর কাউন্সিলরের দায়িত্ব পালন করে সাধারণ মানুষের সেবা করেছি। অনেক জায়গায় ঘুরেছি। দেখেছি যারা নিরক্ষর তাদের কষ্ট এবং তাদের ছেলেমেয়ের ভবিষ্যৎ। আমি এসএসসি পাশ করার পর ডিপ্লোমা কোর্স করবো আমার স্ত্রীকেও করাবো। একসময় আমার ছেলে-মেয়ে বড় হয়ে তারা গর্ববোধ করবে তাদের বাবা মাও শিক্ষিত।
ফজলুর রহমানের স্ত্রী মর্জিনা বেগম বলেন, আমি ২০০৯ সালে পড়াশোনা বাদ দিয়েছিলাম। আমার স্বামীর আগ্রহে দুজন পরামর্শ আবার নতুন করে পড়াশোনা শুরু করেছি। দুইজন এক সঙ্গে বাড়িতে পড়াশোনা করে আবার এক সঙ্গে পরীক্ষা দিচ্ছি। আমার খুব ভালো লাগছে। আমরা আরও অনেক পড়াশোনা করতে চাই।
গুরুদাসপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, এই বয়সে এসেও তাদের পড়াশোনার প্রতি যে আগ্রহ আছে তা প্রশংসনীয়। সকলের শিক্ষা গ্রহণ করা অতি জরুরি।