২৫ আগস্ট ২০২৫, ১৭:১১

জুনিয়র শিক্ষার্থীদের ‘ডিসিপ্লিন’ দেখেন সিনিয়র শিক্ষার্থীরা, হিজাব ইস্যুতে তারাই জড়িয়েছিল

ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ  © সংগৃহীত

নতুন ইস্যুতে বিতর্ক শুরু হয়েছে রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজে। কলেজটির বসুন্ধরা শাখায় হিজাব ইস্যুতে ষষ্ঠ শ্রেণির বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে। যদিও অভিভাবক ও একাধিক শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলে ভিন্ন ভিন্ন তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। একটি সূত্র বলছে, স্বনামধন্য এই কলেজটিতে শিক্ষার্থীদের ডিসিপ্লিনিারি বিষয়টি চেক করতে আলাদা করে কেউ নিযুক্ত নেই, বরং দক্ষতা বাড়ানোর অংশ হিসেবে শিক্ষার্থীদের দিয়েই এই কাজগুলো করিয়ে থাকেন কলেজ কর্তৃপক্ষ। সর্বশেষ হিজাব ইস্যুতে ওঠা ফজিলাতুন নাহারের ক্লাসে তাদের মাধ্যমেই এই ঘটনা ঘটে।

শিক্ষার্থীর বরাতে এক অভিভাবক জানান, ওই শিক্ষক ক্লাসে প্রবেশের আগেই ক্লাস ক্যাপটেইনের দেওয়া তালিকা অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের শৃঙ্খলা বিষয়গুলো চেক করতে আসেন দুই শিক্ষার্থী (ভলান্টিয়ার)। এ সময় ক্লাসে প্রবেশ করে ওই শিক্ষিকা ভলান্টিয়ারদের বাইরে যেতে বলেন এবং ড্রেস কোড ইস্যুতে সমস্যা থাকা শিক্ষার্থীদের বাইরে নিয়ে গিয়ে চেক করতে বলেন। এ বিষয়টিকেই স্যোশাল মিডিয়াসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে ভিন্ন ভিন্নভাবে এসেছে দাবি ওই অভিভাবকের। সূত্রের তথ্য, ওই সময় উপস্থিত শিক্ষার্থীরা কোন ধরনের ওড়না পড়বেন তা নিয়ে পরামর্শ চাইলে, ওই শিক্ষক স্কুলকোড অনুযায়ী স্কার্ফ পড়তে পরামর্শ দেন। 

আলোচনায় আসা ওই শিক্ষিকরা নাম ফজিলাতুন নাহার। তিনি ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের বসুন্ধরা প্রভাতী শাখার সহকারী শিক্ষক (ইংরেজি)। 

সূত্র জানায়, ‘ঘটনার দিন ৬ষ্ঠ শ্রেণির ‘গ’ শাখার ৬ষ্ঠ পিরিয়ডের ক্লাসে দেরিতে প্রবেশ করেন শিক্ষক ফজিলাতুন নাহার। ওই শিক্ষক ক্লাসে প্রবেশের আগেই ভলান্টিয়ার টিমের সদস্য ও নবম শ্রেণির দুই শিক্ষার্থী প্রবেশ করেন। ক্লাস ক্যাপটেইনের দেওয়া তালিকা অনুযায়ী শৃঙ্খলা বিষয়ে সেই শিক্ষার্থীদের চেক করতে থাকে তারা। এ সময় ফজিলাতুন নাহার ক্লাসে প্রবেশ করেন এবং ক্লাস থেকে তাদের নিয়ে বাহিরে যেতে বলেন। পরে এক শিক্ষার্থী তার কোন ধরনের ওড়না পড়ে আসা যায়, সে ব্যাপারে পরামর্শ চায়লে স্কুল কোড অনুযায়ী স্কার্ফ পড়ে আসতে বলা হয়।

প্রতিষ্ঠানটির একজন শিক্ষক দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘কয়েকজন শিক্ষার্থীরা শৃঙ্খলা বিষয়ে কোনো ধরনের বিঘ্নতা ঘটছে কিনা, তা দেখছিল ভলেন্টিয়ার শিক্ষার্থীরা। পরে এক শিক্ষার্থী কোন ধরনের ওড়না পড়ে আসা যায়, সে ব্যাপারে ওই শিক্ষকের কাছে এসে পরামর্শ চায় এবং তাকে স্কুল কোড অনুযায়ী স্কার্ফ পড়ে আসতে বলেন। এর বাইরে কোনো শিক্ষার্থীকে হিজাব বা ওড়না বিষয়ে কোনো কথা বলা হয়নি। যে শিক্ষার্থী পরামর্শ নিতে এসেছিল, তাকেই শুধু পরামর্শ দেওয়া হয়। বিষয়টা এমন নয় যে, তাকে ডেকে এনে পরামর্শ বা নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে জানান তারা।’

শিক্ষার্থীদের দিয়েই শৃঙ্খলার রক্ষার কাজ কেন, এমন ইস্যুতে সোমবার বিকালে ভিকারুননিসা নূন স্কুলের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মাজেদা বেগমকে বিভিন্ন সময়ে অন্তত ৫ বার কল করা হলেও পাওয়া যায়নি। তবে এর আগে দুপুরে দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের বের করে দেওয়ার বিষয়ে ইতোমধ্যে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। বুধবারের মধ্যে (২৭ আগস্ট) রিপোর্ট প্রকাশ করা হবে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি বলেন, আমরা কোনো ধর্মীয় বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে চাই না। সবাই নিজ নিজ ধর্ম স্বাধীনভাবে পালন করতে পারবে। আমি ও আমার শিক্ষকরা ধর্মীয় বিষয় মেনে চলেন। সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এর আগে দুঃখপ্রকাশ করে প্রতিষ্ঠানটির ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষকে একটি আবেদন দেন ওই সহকারি শিক্ষিকা (ইংরেজি) ফজিলাতুন নাহার।

প্রসঙ্গত, রবিবার (২৪ আগস্ট) বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় অবস্থিত ভিকারুননিসা নূন স্কুলের প্রভাতী শাখার ষষ্ঠ শ্রেণির ২০ থেকে ২২ জন শিক্ষার্থী হিজাব পরে আসেন।