২৯ এপ্রিল ২০২৫, ১২:৪১

‌‘নিকাব’ না খোলায় প্রাথমিকের শিক্ষিকাকে হেনস্তা

শিক্ষিকাকে হেনস্তার প্রতিবাদে ঢাবিতে সংবাদ সম্মেলন  © টিডিসি ফটো

বান্দরবানে প্রাথমিক শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট (পিটিআই) কেন্দ্রে চূড়ান্ত মৌখিক পরীক্ষা চলাকালীন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক শিক্ষিকাকে হেনস্তার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনার প্রতিবাদে আজ মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সাংবাদিক সমিতিতে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে প্রটেস্ট অ্যাগেইনস্ট হিজাবোফোবিয়া নামের একটি সংগঠন।

সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন, ‘আমরা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও উদ্বেগজনক একটি বিষয় নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি। আমাদের উদ্দেশ্য হলো খুবই নিন্দনীয় ও অগ্রহণযোগ্য একটি ঘটনার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানো, যা আমাদের বোন, মাশরুফা সাঈদীর সঙ্গে ঘটেছে। যিনি একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং বেসিক ট্রেনিং ফর প্রাইমারি টিচার্সের (বিটিপিটি) প্রশিক্ষণার্থী ছিলেন। 

সোমবার (২৮ এপ্রিল) বান্দরবানের প্রাথমিক শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট (পিটিআই) কেন্দ্রে চূড়ান্ত মৌখিক পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে ওই শিক্ষিকাকে তার পোশাক এবং হিজাব পরিধানের কারণে অকথ্য মানসিক অত্যাচার এবং হেনস্তার শিকার হতে হয়েছে। এটি শুধু একটি সাধারণ দুর্ব্যবহার নয়, বরং এটি তার ব্যক্তিগত স্বাধীনতার প্রতি তীব্র আঘাত এবং নারীর প্রতি সামাজিক অবজ্ঞার শামিল। 

এই ঘটনার সময় বান্দরবানের ডিপিও মোফাজ্জল হোসেন খান ও ইন্সট্রাক্টর জেনারেল মশিউর রহমান মন্ডল মাশরুফাকে প্রকাশ্যে অপমান করেন এবং তাকে তার পোশাক নিয়ে প্রশ্নবিদ্ধ করেন। 

আরও পড়ুন: প্রধান শিক্ষকের ওপর হামলা ও স্কুল বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি

তাদের কাছ থেকে পাওয়া কিছু অবমাননাকর প্রশ্ন ছিল এমন-আপনার মুখ বন্ধ কেনো? আপনি এ রকম হলে প্রাইমারিতে কেনো আসছেন? এখনো আপডেট হতে পারেন না কেনো? আপনি এ রকম হলে চাকরি ছেড়ে চলে যান? আপনার মুখ বন্ধ রাখলে কোনো পাপ মোচন হবে? আপনার মুখ বন্ধ কেনো থাকবে? আপনি জানেন, আমি এই পর্দা করার কারণে একজনকে সাসপেন্ড করেছি? 

সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন, আমরা বলতে চাই এ ধরনের প্রশ্ন শুধু ওই শিক্ষিকার ব্যক্তিগত স্বাধীনতা ও ধর্মীয় অধিকারকেই ক্ষুণ্ণ করেনি বরং এটি নারী হিসেবে তার যে এজেন্সি, সেটির কালেক্টিভ অবমাননা করা হয়েছে বলে মনে করি আমরা। মাশরুফা সাঈদী কেবল তার ধর্মীয় বিধান পালন করেছেন, যেটি তার মৌলিক অধিকার। বাংলাদেশের আইনেও এ ইস্যুতে তাকে বিন্দুমাত্র প্রশ্নবিদ্ধ করার কোনো সুযোগ নেই।

আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই, এ ধরনের আচরণ কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এটি কেবল শিক্ষিকা বা তার মত অন্যান্য শিক্ষিকার প্রতি অবিচার নয়, বরং এটি পুরো সমাজের জন্য একটি হুমকি, যেখানে ধর্মীয় স্বাধীনতা এবং মানুষের অধিকারকে কাঠামোগত বিদ্বেষের শিকারে পরিণত করা হচ্ছে।

আরও পড়ুন: প্রাণভয়ে ৩ মাস ধরে স্কুলে যেতে পারছেন না প্রধান শিক্ষক

সংবাদ সম্মেলন থেকে সরকারের কাছে কয়েকটি দাবি তুলে ধরা হয়। দাবিগুলো হলো- এই ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের যথাযথ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। প্রতিটি নারী যেন তার ধর্মীয় বিধান পালন করতে পারে সেটি নিশ্চিত করতে হবে। সেই সঙ্গে ভবিষ্যতে এই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি যেন না ঘটে সেই ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে এক বক্তা বলেন,  ‘২০২২ সালে বাংলা বিভাগের এক শিক্ষার্থীকে হিজাব পড়ার কারণে হেনস্থার প্রতিবাদে ‘Protest Against Hijabophobia in Du-এর যাত্রা শুরু হয়। তখন সেই শিক্ষার্থী বোনটি তাদের অনুরোধ করে একজন ফিমেল শিক্ষক দ্বারা যেন তার ভাইবা নেওয়া হয়। কিন্তু তার ভাইবা নেওয়া হয়নি। এ রকম ঘটনা পরবর্তীতে আরও পুনরাবৃত্তি হয়। আমার বাংলা বিভাগের এমন তিনজন বোনকে পাই যারা হিজাবের কারণে হেনস্থার শিকার হয়। ঐ ঘটনার প্রেক্ষিতে আমরা ২০২২ সালে এই প্ল্যাটফর্মের যাত্রা শুরু করি। আমরা বিভিন্ন সময় এসব হেনস্তার বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করি। তৎকালীন ভিসি বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেও আমরা এর কোন সুরাহা পায়নি। এসব ঘটনায় প্রেক্ষিতে পরবর্তীতে তিন বোন মামলা করেন বিভাগের বিরুদ্ধে। সেই মামলা এখনো চলমান রয়েছে।