বিদেশে পড়তে চাইলে এখন থেকেই নিতে হবে প্রস্তুতি: সরদার আব্বাস

যুক্তরাষ্ট্রে অধ্যয়নরত সরদার আব্বাস কথা বলেছেন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের সঙ্গে
যুক্তরাষ্ট্রে অধ্যয়নরত সরদার আব্বাস কথা বলেছেন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের সঙ্গে   © টিডিসি ফটো

সরদার আব্বাস। জন্ম এবং বেড়ে ওঠা মাদারীপুরের কালকিনীতে। মাধ্যমিকের গণ্ডি পেরিয়ে ভর্তি হন ঢাকা বিজ্ঞান কলেজে। এরপর শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন।

পড়াশোনার পাশাপাশি করেছেন সাংবাদিকতাও। ছিলেন শাবি প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক। তবে উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে যাওয়ার স্বপ্ন ছিল দীর্ঘদিনের। করোনার কারণে একটু দেরি হলেও ঠিকই স্বপ্ন বাস্তবায়ন হয়েছে তার। বর্তমানে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ‘দি ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাস রিও গ্রান্ড ভ্যালি’ তে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে স্নাতকোত্তর করছেন। বিদেশে উচ্চশিক্ষার পরিবেশ, চ্যালেঞ্জ এবং আগ্রহী শিক্ষার্থীদের করণীয় সম্পর্কে জানতে কথা হয় দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেছেন শাহাদাত বিপ্লব

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: যুক্তরাষ্ট্রে ভর্তি হওয়ার গল্প শুনতে চাই...

সরদার আব্বাস: স্নাতকোত্তর চলাকালীন সময়ে বিদেশে উচ্চশিক্ষার কথা মাথায় আসে। সে অনুযায়ী ২০১৭ এর মাঝামাঝি সময় থেকেই পরিকল্পনা শুরু করি। বিদেশে যাওয়ার জন্য কী কী যোগ্যতা লাগে কিংবা কী কী পদ্ধতি অনুসরণ করা লাগে তা খুঁজতে লাগলাম। দেখলাম, স্নাতকোত্তর বা পিএইচডিতে জিম্যাট বা জিআরই পরীক্ষা দিতে হয়। এছাড়া আইইএলটিএস বা টোয়েফল স্কোরও প্রয়োজন হয়। এগুলো সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। এতেই আমার প্রায় দুই বছর সময় চলে যায়।

আমি জিআরই দিয়েছি। এরপর শুরু প্রফেসর খোঁজা। প্রায় ১০০ থেকে ১৫০ জন প্রফেসরকে মেইল করেছি। এরপর ২০১৯ সালের ফল সেমিস্টারের জন্য ৩টি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আংশিক ফান্ডিং এ পড়াশোনার অফার পেয়েছিলাম। অপেক্ষা করতে থাকলাম ফুল-ফ্রি স্কলারশিপের জন্য। এর মাঝেই করোনা চলে এল। আবার অপেক্ষা। সর্বশেষ ২০২০ সালের ডিসেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রে স্কলারশিপ নিয়ে আসি।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: বিদেশে উচ্চশিক্ষা কেন?

সরদার আব্বাস: আমারও দেশে থাকার ইচ্ছে ছিল। দেশে লোক বেশি, কিন্তু চাকরি কম। আর তাছাড়া পরিবেশও একটা ফ্যাক্ট। এখানে গবেষণা বা বিভন্ন ক্ষেত্রে অনেক সুযোগ রয়েছে। এখানে সবাই সবাইকে সম্মান করে। একজন সুইপারকেও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসররা সম্মানের চোখে দেখে। অর্থাৎ সবাই সবার প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকে। এ কালচারটা বাংলাদেশে নেই।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: বিদেশে কী কী চ্যালেঞ্জ নিতে হচ্ছে?

সরদার আব্বাস: সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো এখানে সবকিছু নতুন। নতুন আবহাওয়া, নতুন পরিবেশ, নতুন মানুষজন- সবকিছু মানিয়ে নিতে হয়। এখানে শিক্ষার্থীরা অনেক উচ্ছ্বাস নিয়ে পড়তে আসে। কিন্তু এখানে আসার পর সে উচ্ছ্বাসটা থাকে না আর। শুরুতেই অনেক কোর্স ধরিয়ে দেয়। দেশে যেমন প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীরা ব্যাপক ভারমুক্ত থাকে ব্যাপারটা এখানে ঠিক তার উল্টো। রান্না-বান্না থেকে শুরু করে সব কাজ নিজেরই করতে হয়। এছাড়া ল্যাবের কাজ, প্রতি সপ্তাহের পরীক্ষা- সবমিলিয়ে খুব প্রেশারে থাকতে হয়।

আসলে চ্যালেঞ্জটা ব্যক্তিভেদে ভিন্ন হয়। ফুল ফান্ডেড স্কলারশিপ পেলে তেমন একটা টেনশন করতে হয় না। শুধু পড়াশোনা করলেই হয়। তবে নিজস্ব ফান্ড নিয়ে পড়াশোনা করা এখানে খুব কষ্টের। এখানে পড়াশোনার খরচ খুব বেশি। সপ্তাহে ২০ ঘন্টা কাজ করা যাবে। তাও বৈধতা নেই। এছাড়া রুটিনে আর সময় পাওয়া যাবে না। আবার যদি খুব রিমোট এরিয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান হয়, সেক্ষেত্রে কাজ পাওয়াটাও খুব কষ্টের। ৮০% টিউশন ফি মওকুফ বা এর বেশি হলে শিক্ষার্থীদের জন্য সহজ হয়। এছাড়াও আরও অনেক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে রাজনৈতিক চর্চা কেমন?

সরদার আব্বাস: এখানে রাজনৈতিক চর্চা আছে, তবে নোংরামি নেই। বাংলাদেশের মতো মিছিল-মিটিং কিছুই দেখিনি। কখনও মারামারি হয় না। রাজনৈতিক চর্চার বিভিন্ন মেইল পাই। কিন্তু খারাপ কালচার নেই। বিভিন্ন রাজনৈতিক বিতর্কে যোগ দেয়া জন্য ইনভাইটেশন পাই। বিভিন্ন পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ইনভাইটেশন পাই। ফাও খাওয়া, গ্রুপিং, মারামারি এসব শুধুমাত্র আমাদের দেশের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই আছে। এখানে যে কোনো পদ পেতে নির্বাচনে পাশ করতে হবে। কোনো নেতার পিছে ঘুর ঘুর করতে হবে না।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থার সাথে পার্থক্য কেমন?

সরদার আব্বাস: বাংলাদেশের সাথে শিক্ষাগত পার্থক্য রয়েছে। বাংলাদেশের সিলেবাস এখানের চেয়ে উন্নত, কিন্তু পড়ালেখা নয়। এখানে স্নাতকের পর গুরুত্ব দেয়া হয়। আর বাংলাদেশে স্নাতকেই বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়। দেশে স্নাতকে স্ট্রাগল করতে হয়। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রে স্নাতকের পর বেশি স্ট্রাগল করতে হয়।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: যুক্তরাষ্ট্রে পড়তে আগ্রহী শিক্ষার্থীদের করণীয় কী?

সরদার আব্বাস: বিদেশে পড়াশোনার প্রস্তুতি সময় সাপেক্ষ। শুরুর দিকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। সবচেয়ে ভালো হয়, প্রথমবর্ষ থেকেই সিদ্বান্ত নিলে। আইইএলটিএস, টোয়েফল, জিআরই, জিম্যাটসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি নিতে হবে। ভালো স্কোর তুলতে হবে। এরপর প্রফেসর খুঁজতে হবে। এটা বেশ চ্যালেঞ্জিং।

প্রফেসর থেকে ফুল ফান্ড/পারশিয়াল ফান্ড খুঁজে নিতে হবে। মাঝে মাঝে প্রফেসরদের মেইল করে উত্তর পাওয়া যায় না। এতে হতাশ হওয়া যাবে না। তারাও স্পেশাল কিছু না দেখলে আসলে রিপ্লাই দেয় না। এডমিশন খুব সহজেই ম্যানেজ করা যায়, কিন্তু ফান্ড ম্যানেজ করা খুব কষ্টের। মূলত এডমিশন এবং ফান্ড ম্যানেজ করা ও ভিসা পাওয়া সবচেয়ে কঠিন কাজ। এরপর বাকীগুলো এমনিতেই হয়ে যায়। কিভাবে প্রফেসরদের ভালো ইমেইল করা যায়, কিভাবে এস.ও.পি লেখা যায় এসব বিষয়ে খোঁজ করতে হবে।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।

সরদার আব্বাস: দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকেও ধন্যবাদ। 


সর্বশেষ সংবাদ