জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বুয়েট: এবার যুক্তরাষ্ট্রে যাচ্ছেন আশুতোষ!
'অসম্ভব' যে একটি অলীক শব্দ তাই দেখিয়ে দিলেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করা শিক্ষার্থী আশুতোষ নাথ। সংসার ও চাকরি ব্যস্ততার মাঝেও নিজের স্বপ্নকে সফল করতে সর্বদা ক্ষিপ্র গতিতে ছুটে চলা অদম্য এই শিক্ষার্থী তার নিজ গন্তব্যে পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছেন। সমাজে প্রচলিত কথা- 'ভাল প্রতিষ্ঠান ও অগাধ সুযোগ-সুবিধা না থাকলে সফলতার পথ উন্মুক্ত হয় না'- এমন কথাকে তুড়ি মেরে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স পাশের পর নিজ মেধা, শ্রম ও প্রবল আত্মবিশ্বাসে ভর্তি হয়েছিলেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট)। কারণ ছোট থেকেই তার স্বপ্ন বিজ্ঞানী হওয়ার। রসায়নে গবেষণা করার। আর সেই স্বপ্নও পূরণ করতে চলেছেন আশুতোষ।
সবাইকে অবাক করে দিয়ে সম্পন্ন ফ্রীতে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের বোস্টনের ইউনিভার্সিটি অব ম্যাসাচুসেটস উচ্চতর গবেষণা করার বৃত্তি লাভ করেছেন। সেখানে মেডিসিন অ্যান্ড সিনথেটিক অরগানিক কেমিস্ট্রি বিষয়ের ওপর পিএইচডি করবেন। একই বিশ্ববিদ্যালয়ে টিচিং অ্যাসিসটেন্স হিসেবে কাজ করবেন।
এর আগে বুয়েট থেকে মাস্টার্স পাশের পর করেছেন অ্যাটর্নি জেনারেলের অফিসে কম্পিউটার অপারেটরের চাকরি। পরিবার, স্ত্রী, চাকরি সব কিছু সামলানোর পরেও আন্তর্জাতিক জার্নালে নিজের তিনটি আর্টিকেল প্রকাশ করতে সক্ষম হয়েছেন স্বপ্নবাজ এই শিক্ষার্থী।
আমেরিকায় পিএইচডির সুযোগ পাওয়ার পর প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে আশুতোষ নাথ বলেন, ‘আমি ও আমার পরিবারের সবাই অত্যন্ত আনন্দিত। ছোট থেকেই স্বপ্ন ছিল রসায়নে উচ্চতর গবেষণা করার। ঈশ্বরের কৃপায় সেই স্বপ্ন পূরণ হতে চলছে। সবার কাছে আশীর্বাদ চাই।’
কে এই অদম্য শিক্ষার্থী আশুতোষ নাথ?
খাগড়াছড়ি জেলার মানিকছড়ি থানার পান্নাবিল গ্রামের শ্রী মিলন নাথের কৃতি সন্তান আশতোষ নাথ। ২০০৮ সালে যিনি মানিকছড়ির রানী নীহার দেবী সরকারি উচ্চবিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক এবং ২০১০ সালে গিরী মৈত্রী কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন। ২০১৪ সালে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে চট্রগ্রাম হাজী মোহাম্মদ মহসিন কলেজ থেকে রসায়ন অনার্স শেষ করে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) মাস্টার্সে ভর্তি হন।
২০১৯ সালে বুয়েট থেকে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করে চাকরি নেন অ্যাটর্নি জেনারেল অফিসে কম্পিউটার মুদ্রক্ষরিক হিসেবে। কিন্তু কঠোর পরিশ্রম ও প্রবল শিখন স্পৃহায় নিজের স্বপ্ন জয়ে থেমে থাকেন নি তিনি। পরিবার, সংসার ও অফিস সামলানোর পরেও আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রকাশ করেছেন তার তিনটি গবেষণা।
অবশেষে তার নিপুন দক্ষতা ও যোগ্যতায় সম্পূর্ণ ফ্রীতে যুক্তরাষ্ট্রের বোস্টনে অবস্থিত ম্যাসাসুচিস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে মেডিসিন এবং স্যান্থেটিক অর্গানিক কেমিস্ট্রিতে পিএইচডি করার পাশাপাশি সেখানে সহকারী শিক্ষক হিসেবে কাজ করার সুযোগ পেয়েছেন আশুতোষ নাথ।
পড়ুনঃ চাকরিতে বয়সসীমা ৩২ এর দাবিতে কাল শাহবাগে সমাবেশ
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েও নিজ কর্মপ্রচেষ্টা ও আত্মবিশ্বাসে এমন সফলতা অর্জনে অবাক হয়েছেন দেশের মানুষ। আশুতোষের এমন সফলতাকে অনুপ্রেরণা হিসেবে দেখছেন দেশের হাজারো তরুণ শিক্ষার্থী।
আশুতোষ নাথ বিখ্যাত পর্তুগীজ প্রবাদ 'হাজার মাইলের যাত্রা শুরু হয়, কেবল একটি মাত্র পদক্ষেপের মধ্য দিয়েই। সুতরাং, নিজেকে বদলাও, ভাগ্য নিজেই বদলে যাবে'-টি সত্য করে দেখিয়েছেন।