উচ্চশিক্ষার যুক্তরাষ্ট্রে সুগম স্নাতকোত্তর
বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে ফুল ফান্ডিংয়ে উচ্চশিক্ষা নিতে গিয়েছেন মো. ইনামুল কবির। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের মিনেসোটা স্টেট ইউনিভার্সিটিতে স্নাতকোত্তর পড়ার পাশাপাশি পাবলিক স্পিকিং ইন্সট্রাক্টর হিসেবে আছেন। যুক্তরাষ্ট্রে স্নাতকোত্তরে পড়তে যাওয়ার প্রক্রিয়া নিয়ে এম এম মুজাহিদ উদ্দীন তার সঙ্গে আলাপ করেছেন।
ইমিগ্রেশন পদ্ধতির শত কড়াকড়ি সত্ত্বেও আজ অবধি বিশ্বে সর্বাধিক আন্তর্জাতিক ছাত্র-ছাত্রী গ্রহণকারী দেশ যুক্তরাষ্ট্র। ২০১৭ সালের হিসাব অনুযায়ী, ১১ লাখ আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী অবস্থান করছে দেশটিতে। মিনেসোটা এবং ইলিনয় স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের মত অনেক প্রতিষ্ঠানেই বিভিন্ন ডিপার্টমেন্টের প্রধান এখন একসময়ে বাংলাদেশ থেকে আগত এমন শিক্ষার্থীরাই। সত্যি বলতে, এই সংখ্যা বৃদ্ধি হতে পারতো আরো বহুগুণ। কিন্তু ভাল দিকনির্দেশনা আর দৃঢ় আত্মবিশ্বাসের অভাবে প্রচুর দেশীয় মেধার দৌড় থমকে আছে আশা-প্রত্যাশা পর্যন্তই।
অনেকের প্রশ্ন হচ্ছে, উচ্চশিক্ষার কোন স্তরটা বেছে নেওয়া সহজ যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেত্রে— নিউইয়র্ক টাইমস এর বক্তব্য অনুযায়ী, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় পাঁচ হাজার কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক স্তরে আমেরিকান শিক্ষার্থী ভর্তি হয় ৮০ শতাংশ। অপরদিকে স্নাতকোত্তর (মাস্টার্স, পিএইচডি) স্তরে আমেরিকান শিক্ষার্থী মাত্র ২০ শতাংশ! বাকী ৮০ শতাংশ পূরণ হয় বাংলাদেশ, ভারত এবং অন্যান্য দেশগুলোর শিক্ষার্থী দ্বারা।
ঠিক একই কারণে, স্নাতকোত্তর ডিগ্রীগুলোতে স্কলারশিপ আর বিশ্ববিদ্যালয় ফান্ড অনেক বেশী। শুধু ২০১৮-১৯ শিক্ষাসনে মিনেসোটা স্টেট ইউনিভার্সিটির কম্যুনিকেশন স্টাডিজ ডিপার্টমেন্ট ‘গ্রাজুয়েট টিচিং অ্যাসিস্টেন্ট’ নিয়োগ দিয়েছে এগারজন। যার মধ্যে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী চারজন। ‘গ্রাজুয়েট অ্যাসিস্ট্যান্ট’ হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থীদের জন্য একটা পদ যেটা শিক্ষার্থীর জন্য বিনা খরচে বা অর্ধ খরচে পড়াশোনার পাশাপাশি মাসিক একটা নির্দিষ্ট অংকের স্টাইপেন্ড নিশ্চিত করে। বিনিময়ে শিক্ষার্থীকে কোন একজন প্রফেসরের অধীনের গবেষণায় সহযোগিতা করতে হয় অথবা বেসিক লেভেলের কোর্স পড়াতে হয় আন্ডার গ্রাজুয়েট লেভেলে।
মাস্টার্স বা পিএইচডিতে পড়তে আসার সহজ এবং সুগম পথ এটাই! এবার আসা যাক কি প্রয়োজন এই গ্রাজুয়েট অ্যাসিস্ট্যান্টশিপ নিশ্চিত করার জন্য। প্রথমত প্রয়োজন GRE/GMAT টেস্ট, যেটা যুক্তরাষ্ট্রের অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষাগত দক্ষতা যাচাইয়ের স্ট্যান্ডার্ড মনে করে। ব্যাবসা অনুষদ ছাড়া আর সকল বিষয়ে পড়তে GRE আপনার সবচেয়ে কর্মক্ষম অস্ত্র।
প্রশ্ন হল GRE/GMAT ছাড়া কি স্কলারশিপ সম্ভব নয়— উত্তর হচ্ছে খুব সম্ভব, যদিও সংখ্যাটা কম! যেমন- University of Texas, Arlington এবং University of Hawaii, Manoa এর মত বড় বিশ্ববিদ্যালয়ও অনেক প্রোগ্রামে GRE গ্রহণ করে না। দ্বিতীয়ত IELTS অথবা TOEFL টেস্ট যেটা ইংরেজী ভাষার ওপর দক্ষতা যাচাই করে। IELTS এ ন্যূনতম 6.5 পেয়েও স্কলারশিপ পাওয়া সম্ভব। তৃতীয়ত SOP বা Statement of Purpose যাতে দু’এক পেজের মধ্যে নিজের উদ্দেশ্য বর্ণনা করতে হয়, যাতে কর্তৃপক্ষ দেখতে চায় আমেরিকার শত বিশ্ববিদ্যালয় থাকতে কেন এ বিশ্ববিদ্যালয়ই আপনি বেছে নিলেন, আপনার উচ্চশিক্ষার প্রতি বা গবেষণার প্রতি কতটা অদম্য আগ্রহ ইত্যাদি।
মোদ্দাকথা আপনার CV তে যে কথাগুলো লেখার সুযোগ পাননি তা এখানে রসিয়ে রসিয়ে অ্যাকাডেমিক ভাষায় তুলে ধরবেন। এবার যেটা বাকী থাকে তা হল রেকমেন্ডেশন লেটার। আপনার শিক্ষক বা গবেষণা উপদেষ্টা, যিনি আপনাকে কাছ থেকে দেখেছেন, আপনার সম্পর্কে জানেন, তিনি লিখবেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে। আশা করি, এ বিষয়গুলোতে আরো বিস্তারিত আলোচনা নিয়ে ফিরব পরবর্তী কোন এক লেখায়। সকল স্বপ্নবাজ মেধাবীদের জন্য শুভকামনা।