বিদেশি যে ৫টি জনপ্রিয় স্কলারশিপ হাতছানি দেয় আন্ডারগ্র্যাজুয়েটদের
এইচএসসি পরীক্ষা শেষ। এরপর অনেকেরই স্বপ্ন থাকে বিদেশে পড়তে যাওয়ার। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় ভর্তি পরীক্ষা সমাপ্তির পর মনমত প্রতিষ্ঠানে সুযোগ না পেয়েও অনেকের ইচ্ছা জাগে উচ্চশিক্ষার জন্য প্রবাসে পাড়ি জমানোর। আন্ডারগ্র্যাজুয়েট পর্যায়ে বিশ্বজুড়ে প্রসিদ্ধ পাঁচটি নির্ভরযোগ্য সরকারি বিদেশী বৃত্তি নিয়ে আজকের আলোচনা। যেগুলোর সবগুলোই ফুল–ফান্ডেড এবং সেগুলোর সার্কুলার বাংলাদেশের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট প্রকাশ করে থাকে।
জাপানের MEXT বৃত্তি: আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পড়াশোনার জন্য জাপান সবসময়ই শিক্ষার্থীদের কাছে অন্যতম পছন্দের একটি নাম। জাপানের সবচেয়ে জনপ্রিয় বৃত্তি হচ্ছে ‘মনবুকাগাকুশো’ স্কলারশিপ, যাকে মেক্সট বৃত্তিও বলা হয়।
এর বিশেষত্ব হচ্ছে এই বৃত্তিতে রয়েছে বিশাল অঙ্কের ভাতা, কিন্তু বৃত্তির আওতায় স্নাতক, স্নাতকোত্তর ও পিএইচডি মিলিয়ে প্রতিবছর সর্বোচ্চ মাত্র দুইশোজন বাংলাদেশি সুযোগ পান! সাধারণত মার্চের শেষে বা এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়ে বৃত্তির সার্কুলার প্রকাশিত হয়। আবেদনের খুঁটিনাটি জানতে চলে যাও এই লিঙ্কেঃ
https://drive.google.com/file/d/0B2bBcoSOOxL_N0dRZGlINlRabU0/view
চীনের সিএসসি বৃত্তি: সিএসসির পূর্ণরূপ হচ্ছে- চাইনিজ স্কলারশিপ সেন্টার, এটি চীন সরকারের বৃত্তি। এর আওতায় আছে আড়াইশো চীনা বিশ্ববিদ্যালয়। ইতিহাস, সাহিত্য, দর্শন ও চারুকলা ইত্যাদি বিষয়ে ফুল ফান্ড বৃত্তি দেওয়া হয়।
অন্যান্য বিদেশি স্কলারশিপের মতো এখানেও বৃত্তি পেতে চাইলে চীনা ভাষায় দক্ষতার সার্টিফিকেট থাকতে হবে! সেটি না থাকলে বৃত্তি পাওয়ার পর তোমাকে চীনে গিয়ে এক বছর বাধ্যতামূলক চীনা ভাষা শিখতে হবে! (বর্তমানে পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি মানুষ কথা বলে চীনা ভাষায়। বিশ্ববাণিজ্যেও চীনারা ক্রমেই শীর্ষস্থান দখল করে নিচ্ছে। তাই চীনা ভাষা একটু কষ্ট করে একবার শিখে নিলে তা সারাজীবন কাজে আসবে)
সার্কুলারের জন্য চলে যাও এই লিঙ্কে: http://www.csc.edu.cn/laihua/
সার্কুলার সাধারণত ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিলের মধ্যে প্রকাশিত হয়। এজন্য একাডেমিক পরীক্ষার সনদ, মার্কশিট, দুটি প্রত্যয়ন পত্র, মেডিকেল সার্টিফিকেট সাবমিট করতে হবে। আবেদন প্রক্রিয়া শেষ হলে পুরো ফর্মটি প্রিন্ট করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমা দিতে হবে।
রাশিয়ান সরকারি বৃত্তি: বিশ্ব রাজনীতিতে ক্রমেই মোড়লের আসন পুনরুদ্ধারে এগিয়ে চলেছে রাশিয়া। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে অত্যন্ত অগ্রসর এ দেশটির প্রচারবিমুখতার কারণে তাদের সম্পর্কে বাইরের দেশের মানুষের তেমন পরিষ্কার ধারণা নেই। কিন্তু রাশিয়ার সরকারি বৃত্তি বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে উন্নত বিশ্বে।
এ বৃত্তিতে ফুলফান্ড পেতে চাইলে একটি জটিলতা রয়েছে- তোমাকে পড়াশোনা করতে হবে রাশিয়ান ভাষায়! তবে তাতে ভয়ের কিছু নেই, সরকারি খরচেই মূল কোর্সের আগে সাত মাস রাশিয়ান ভাষা এবং দুই মাস রাশিয়ান সংস্কৃতির ওপর কোর্স করে নেওয়ার সুযোগ রয়েছে।
বৃত্তির আবেদন গৃহীত হলে পড়তে যেতে কেবল বিমান ভাড়া আর খাবারের খরচটা নিজের পকেট থেকে দিতে হবে; ভিসার খরচ, টিউশন, বাসস্থান সহ সব কিছুর খরচ সরকার বহন করবে! রাশিয়া পৌঁছেই প্রথমে একশো-দেড়শো ডলার দিয়ে স্বাস্থ্য বীমা করিয়ে নিতে হবে। মাসিক খরচ সর্বোচ্চ দেড়শো থেকে আড়াইশো ডলারের মধ্যেই পুষিয়ে যাবে।
স্নাতক পর্যায়ে তুমি সায়েন্স, কমার্স, আর্টসের পনেরটিরও বেশি বিষয়ে পড়ার সুযোগ পাবে। মেডিকেলে পড়াশোনার ক্ষেত্রে অনেকেই একটি সমস্যার মুখোমুখি হয়- বাংলাদেশের পড়াশোনার ডিগ্রি অনেক দেশে গৃহীত হয় না।
তবে রাশিয়ায় এ সমস্যা নেই। সেখানে মেডিকেলে ছয় বছর মেয়াদী ডিগ্রির নাম ‘ডক্টর অব মেডিসিন’ (এমডি), যেটি বাংলাদেশের মেডিকেল ও ডেন্টাল এসোসিয়েশন কর্তৃক স্বীকৃত।
কীভাবে আবেদন করবে: শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সাইটে সার্কুলার আসে মার্চ থেকে মে মাসের মধ্যে। এই লিঙ্কে গিয়ে জেনে নিতে পারো এ সম্পর্কেঃ http://www.moedu.gov.bd/site/view/moedu_scholarship-archive/Scholarship
সার্কুলারের আবেদন ফর্মে মেডিকেল সার্টিফিকেটের সঙ্গে তোমার সব একাডেমিক সার্টিফিকেট, নম্বরপত্র, জন্মসনদ ও পাসপোর্টের ফটোকপির নোটারাইজড কপি যুক্ত করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাতে হবে।
সুপারিশকৃত আবেদনকারীরা ঢাকার ‘রাশিয়ান সেন্টার অব সায়েন্স অব কালচার’ –এ মৌখিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার সুযোগ পাবে। সেখানে পরীক্ষার্থীদের ভাষাগত দক্ষতা দেখা হয় যার ভিত্তিতেই হবে চূড়ান্ত মূল্যায়ন। এক্ষেত্রে মাথায় রাখতে হবে- বৃত্তির সার্কুলার প্রকাশের পর আবেদনের সময় থাকে খুব অল্প কিছুদিন, তাই প্রয়োজনীয় কাগজপত্র আগে থেকেই প্রস্তুত রাখতে হবে।
দক্ষিণ কোরিয়ার কেজিএসপি বৃত্তি: এই বৃত্তি পেতে চাইলে তোমাকে বাধ্যতামূলক কোরিয়ান ভাষা শিখতে হবে এক বছর! তবে খরচ নিয়ে সমস্যা নেই, পুরো ব্যয়ভার কোরিয়ান সরকার বহন করবে। তবে একটি শর্ত রয়েছে- এইচএসসি পরীক্ষায় গড়ে কমপক্ষে ৮০% নম্বর পেতে হবে! স্নাতক পর্যায়ে চিকিৎসাবিজ্ঞান ছাড়া প্রায় সব বিষয়েই আবেদন করা যাবে।
সার্কুলারের জন্য চোখ রাখো শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে, নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারির ভেতর যেকোনো সময় প্রকাশিত হতে পারে সার্কুলার।এই হচ্ছে মন্ত্রণালয়ের সাইট লিঙ্কঃ
http://www.niied.go.kr/eng/contents.do?contentsNo=78&menuNo=349
বৃত্তি পাওয়া শিক্ষার্থীদের প্রতি কোরিয়ান সরকার বেশ উদার। টিউশন, থাকা–খাওয়া, ভিসার খরচ, মেডিকেল ইন্স্যুরেন্স ইত্যাদি বিষয়ে মিলবে মোটা অঙ্কের ভাতা! শুধু তাই নয়, বছরে একবার দেশে আসা-যাওয়ার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে উপহার পাবে রাউন্ড ট্রিপ বিমানের ইকোনমি ক্লাস টিকিট!
ভারতের আইসিসিআর বৃত্তি: বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর বিদেশে উচ্চশিক্ষায় ইচ্ছুক শিক্ষার্থীরা কোনদেশে সবচেয়ে বেশি যায়? পাশের দেশ ভারত! প্রতিবছর ইন্ডিয়ান সেন্টার ফর কালচারাল রিলেশন্স থেকে সরকারি বৃত্তি নিয়ে বিপুল পরিমাণ বাংলাদেশি শিক্ষার্থী ভারতে পড়তে যায়। কোরিয়ার বৃত্তির মতো এখানেও স্নাতক পর্যায়ে চিকিৎসাবিজ্ঞান ব্যতীত বাকি সব বিষয়েই আবেদন করতে পারবে।
টিউশন ফি সরকার বহন করবে, থাকা–খাওয়ার খরচের ভাতা হিসেবে প্রতি মাসে সাড়ে দশ হাজার রুপি ভাতা পাবে বৃত্তি পাওয়া শিক্ষার্থীরা।
আবেদন করতে চাইলে এই লিঙ্কে চলে যাওঃ
https://www.hcidhaka.gov.in/pages.php?id=19741সার্কুলার প্রকাশিত হয় ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারির মধ্যে।
ওয়েবসাইট থেকে ডাউনলোড ফর্ম নামিয়ে ফর্মটি পূরণ করে সাথে জাতীয় পরিচয়পত্র/জন্মসনদ, একাডেমিক সার্টিফিকেট, পাসপোর্ট, এইচএসসি সিলেবাস, চরিত্রসনদ ও মেডিকেল সার্টিফিকেট যুক্ত করে একটি পিডিএফ ফাইল বানিয়ে সাবমিট করতে হবে। পাসপোর্ট যদি না থাকে তাহলেও উপায় রয়েছে, আবেদনে ‘এপ্লাইড ফর’ লিখে সাবমিট করে দাও।
হাই কমিশনকে ফাইলটি মেইলে সাবমিট করার পর তোমাকে লিখিত পরীক্ষার তারিখ জানানো হবে। সেই পরীক্ষাটি হবে শুধু ইংরেজি ভাষায় তোমার দক্ষতার ওপর। সার্কুলার প্রকাশিত হয় ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারির মধ্যে
লিখিত পরীক্ষায় যারা উত্তীর্ণ হবে তাদের সাক্ষাৎকারের জন্য ডাকা হবে। মনে রাখতে হবে- হাই কমিশনকে মেইলে পাঠানো সেই পিডিএফ ফাইলটির হার্ড কপি নিয়ে যেতে হবে ইন্টারভিউতে।
সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ায় পর আইসিসিআর তোমাকে নির্বাচিত করলে মিলে যাবে বৃত্তি! তবে এক্ষেত্রে একটি বিষয় রয়েছে, অল্প কিছু ভাগ্যবান শিক্ষার্থী নিজের পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়ে পছন্দের বিষয় নিয়ে পড়ার সুযোগ পাবে, বাকিদের আইসিসিআরের নির্ধারিত প্রতিষ্ঠানে পড়তে হবে আসন খালি থাকা সাপেক্ষে।