২১ ডিসেম্বর ২০১৮, ২০:৩৬

যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিতে কেন অপেক্ষমাণ থাকেন শিক্ষার্থীরা?

প্রতীকী ছবি  © সংগৃহীত

ফাহিম হাসান। বাংলাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড বিজনেস স্কুল, স্ট্যানফোর্ড গ্রাজুয়েট স্কুল অফ বিজনেস, লন্ডন বিজনেস স্কুল, ইউনিভার্সিটি অব পেনসিলভেনিয়ার ওয়ালটন স্কুলসহ বেশ কিছু ইউনিভার্সিটিতে এমবিএ প্রোগ্রামে আবেদন জমা দেন। যখন সে দেখতে পেল প্রায় সবকটির অপেক্ষমাণ তালিকায় ঠাই পেয়েছে তাঁর নাম। তখন মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন। 

ফাহিমের মত যুক্তরাষ্ট্রের বাইরের অনেক শিক্ষার্থীকে অপেক্ষমাণ তালিকায় স্থান দেয়া হয়। সংখ্যাটা কিন্তু কম নয়। প্রতি বছর বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কয়েক হাজার শিক্ষার্থী ট্রাম্পের মনঃকষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ফলে ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও তাদের আবেদনে সাড়া দেয়ার সক্ষমতা রাখে না দেশটির ইউনিভার্সিটিগুলো। তাই শিক্ষার্থীদের নাম লিপিবদ্ধ করে অপেক্ষমাণ তালিকায় রেখে দেয়। শুরুতেই প্রত্যাখ্যান না করায় সামান্য হলেও অনেকের কাঙ্ক্ষিত বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ-স্বপ্ন টিকে থাকে। 

অনেকে মনে করেন, মেধায় ভর্তির হওয়ার যোগ্যতা হারানোর কারণে শিক্ষার্থীদের অপেক্ষমাণ তালিকায় রাখা হয়। পরে আসন খালি থাকা সাপেক্ষে ভর্তি হতেও পারেন। তবে এ আশায় মন বাধার শক্তি কয়জনেরইবা আছে। কিন্তু ফাহিম এ পরীক্ষায় পাশ করে এখন পড়ছেন পেলসিলভেনিয়ার ওয়ালটন স্কুলে। আগামী বছর জুনে এমবিএ সম্পন্ন করবেন ফাহিম।

যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল এসোসিয়েশন ফর কলেজ এডমিশন কাউন্সেলিংয়ের এক প্রতিবেদনে দেখানো হয়েছে- ২০১৭ শিক্ষাবর্ষে ৪০ শতাংশ স্কুল অপেক্ষমাণ তালিকা করেছে। এর মধ্যে ২৫ শতাংশ শিক্ষার্থীকে ভর্তির সুযোগ দেয়া হয়েছে। অর্থাৎ অপেক্ষমাণ থাকা শিক্ষার্থীদের ২৫ শতাংশ ভর্তির সুযোগ পেয়েছে। 

এছাড়া প্রতিবছর যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটিগুলোতে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক স্থানীয় শিক্ষার্থীও ভর্তি হন। বাইরের শিক্ষার্থীদের যখন অপেক্ষমাণ তালিকায় রাখা হয় তখন একটি প্রশ্ন সবার মনে উঁকি দেয়- ‘তাহলে কি শুধুমাত্র বিদেশী শিক্ষার্থীদের অপেক্ষমাণ তালিকায় রাখা হয়?’ এ কৌতূহল থাকাটা স্বাভাবিক। বাস্তবে তার প্রভাব কতটুকু তা নিয়ে বিশেষজ্ঞদের ভিন্ন মত রয়েছে।

তাহলে অপেক্ষমাণ তালিকার বিষয়ে কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা? তাদের মত হল স্থানীয় ও বাইরের শিক্ষার্থীদের বৈষম্য করার জন্য এ তালিকা করা হয় না। মূলত বাস্তবতার সম্মুখীন হয়ে অপেক্ষমাণ তালিকা করতে হয়।

পেনসিলভানিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটির স্নাতক ভর্তির নির্বাহী পরিচালক ক্লার্ক ব্রিগার বলেন, বাইরের শিক্ষার্থীদের উপর স্থানীয়দের কোন প্রাধান্য দেয়া হয় না। ভর্তির যোগ্যতা নির্ধারণের মাপকাঠি হিসেবে গণ্য হয় শিক্ষার্থীর একাডেমিক রেকর্ড, সংশ্লিষ্ট বিষয়ে শিক্ষার্থীর আগ্রহ এবং দেখা হয় নিয়মিত ক্লাস চালিয়ে যাওয়ার সক্ষমতাও।

ম্যাসাচুসেটস ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজি থেকে বলা হচ্ছে, বাইরের শিক্ষার্থীদের উপর স্থানীয়দের প্রাধান্য দেয়া হয় না। তবে অনেক সময় বিদেশী শিক্ষার্থীদের  জন্য নির্ধারিত আসনের চেয়ে আবেদন সংখ্যা বেশি হওয়ার যোগ্য অনেকেরই অপেক্ষমাণ তালিকায় স্থান হয়।

ভিসাগত সমস্যা: যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটিগুলোতে আবেদন করতে আগ্রহী শিক্ষার্থীদের ভিসার জটিলতা নিয়েও অনেকে উদ্বিগ্ন থাকেন। কারণ একাডেমিক প্রোগ্রামগুলো শুরু হওয়ার আগে ১২০ দিনের পারমিট ভিসা প্রদান করা হয়। এ সময়ে অপেক্ষমাণ তালিকায় থাকা শিক্ষার্থীদের ভর্তি কার্যক্রম সম্পন্ন করার বিষয়ে তাদের হতাশায় থাকতে দেখা যায়। কিন্তু তাদের আশার বাণী শুনান ক্লার্ক ব্রিগার। তিনি বলেন, পেনসিলভানিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটিসহ প্রায় সব প্রতিষ্ঠান বিদেশী শিক্ষার্থীদের ভিসার মেয়াদ থাকতেই ভর্তির কাজ সম্পন্ন করেন।