২৮ অক্টোবর ২০২৪, ১৪:১৯

পিএইচডি করার আগে যে তথ্যগুলো জেনে নেওয়া জরুরি

পিএইচডি করার আগে যে তথ্যগুলো জেনে নেওয়া জরুরি   © সংগহীত

ডক্টর অফ ফিলোসফি, বা পিএইচডি, মনস্তত্ত্ব থেকে গণিত থেকে শুরু করে সাহিত্যে পিএইচডি ডিগ্রি অবধি বেশিরভাগ একাডেমিক ক্ষেত্রে টার্মিনাল ডিগ্রি। পিএইচডি অর্থাৎ ফিলোসফি অফ ডক্টরেট সাবজেক্ট এর বলতে গেলে সকল ক্রেডিট ই research-based অর্থাৎ গবেষণাভিত্তিক। ৫৪ ক্রেডিট পিএইচডি এর মধ্যে ৩৬ ক্রেডিট এর বেশি হয়ে থাকে গবেষণা। বাকিটা থিউরিটিক্যাল কোর্স। এখন এই ৩৬  ক্রেডিট গবেষণার সাবজেক্ট শেষ করে একটি ফাইনাল রিপোর্ট তৈরি করতে হয়। এই রিপোর্ট কে বলা হয় পিএইচডি থিসিস।

জানা যায়, ঊনবিংশ এবং বিংশ শতাব্দীতে প্রথম ইউরোপে অভিসন্দর্ভ জমার ভিত্তিতে অর্জিত পিএইচডি ডিগ্রির উন্নয়ন ঘটে। Keith Allan Noble (১৯৯৪)-এর মতে সর্বপ্রথম ১১৫০ সালে মধ্য প্যারিসে ডক্টরাল ডিগ্রি প্রদান করা হয়। মূলত শিক্ষকদের অধ্যয়নের অনুমতি হিসেবে এই ডিগ্রি দেওয়া হতো। সেসময় এখনকার মতো গবেষণাপত্র জমা প্রদানের প্রয়োজনীয়তা ছিল না। এরপর ১৬৫২ সালে প্রথম জার্মান হিসেবে Erhard Weigel পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন।

আমেরিকার ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয় ১৮৬১ সালে সর্বপ্রথম মোট ৩ জনকে পিএইচডি ডিগ্রি প্রদান করেন, যারা হলেন Eugene Schuyler, Arthur Williams Wright Ges James Morris Whiton (রোজেনবার্গ, ১৯৬১)। তার আগে আমেরিকানরা মূলত ইউরোপের বিভিন্ন দেশে পিএইচডি করতে যেতেন। ১৮৬০ সালে লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় এবং ১৮৮২ সালে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় ডক্টর অব সায়েন্স (ডিএসসি) ডিগ্রি প্রবর্তন করলেও যুক্তরাজ্যসহ বিদেশি ছাত্রদের কাছে গবেষণাপত্রের ভিত্তিতে অর্জিত পিএইচডি ডিগ্রি ১৯১৭ সালে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে (সিম্পসন, ১৯৮৩)। অন্যদিকে ১৮০৮ সালে জার্মানিতে, রাশিয়ায় ১৮১৯ সালে এবং ১৯২৭ সালে ইতালিতে পিএইচডি ডিগ্রির যাত্রা শুরু হয়।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) প্রকাশিত জনশুমারি ও গৃহগণনা-২০২২-এর ‘ন্যাশনাল রিপোর্ট” অনুযায়ী দেশে  পিএইচডিধারীর সংখ্যা ৫১ হাজার ৭০৪। গত বছরের ২৮ নভেম্বর প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে বিবিএস।

বিবিএস এর তথ্য অনুযায়ী, পিএইচডিধারীদের মধ্যে পুরুষের সংখ্যা ৩৭ হাজার ৫১৭ জন এবং নারী আছেন ১৪ হাজার ১৮৭ জন।  ২০ থেকে ২৪ বছর বয়সসীমার মধ্যে পুরুষ পিএইচডিধারীর সংখ্যা ৩৮০ জন এবং নারী পিএইচডিধারীর সংখ্যা ৪০৩ জন। 

তথ্য অনুযায়ী, পিএইচডির সংখ্যা সবচেয়ে বেশি ঢাকা বিভাগে ৩০ হাজার ১৬৬ জন। চট্টগ্রাম বিভাগে ৭ হাজার ১৪৪ জন, রাজশাহী বিভাগে ৪ হাজার ১৬৪, খুলনা বিভাগে ২ হাজার ৯৩৮, রংপুরে ২ হাজার ১২০, ময়মনসিংহে ২ হাজার ৩৯, সিলেটে ১ হাজার ৯৯০  এবং বরিশাল বিভাগে ১ হাজার ১৪৩ জন পিএইচডিধারী রয়েছেন।

বাংলাদেশে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি 
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়,জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদ, বিভাগ ও ইনস্টিটিউটে পিএইচডি ও এমফিল করার সুযোগ আছে। বিশ্ববিদ্যালয়ভেদে ভর্তির যোগ্যতা ভিন্ন হয়। সারা বছরই বিভিন্ন সময়ে ভর্তির জন্য আবেদন গ্রহণ করা হয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে।

খরচ ও বৃত্তির সুযোগ

বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বল্প খরচেই এমফিল ও পিএইচডি প্রোগ্রামে অধ্যায়ন করা যায়। সাধারণত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আবেদনের ফরম ও ভর্তির জন্য ফি গ্রহণ করা হয়। এমফিল ও পিএইচডি পর্যায়ে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের প্রায় সব বিশ্ববিদ্যালয়ই মাসিক বৃত্তি প্রদান করে থাকে। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্নভাবে অনুদান ও বৃত্তির সুযোগ পান শিক্ষার্থীরা। শুধু বৃত্তিই নয়, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের এমফিল ফেলোশিপ ও পিএইচডি ফেলোশিপে আর্থিক বৃত্তি ও সুযোগ-সুবিধা প্রদান করা হয়।

পিএইচডি উপার্জনের পদক্ষেপগুলি অন্তর্ভুক্ত:
* স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন। 
* ইংরেজি ভাষা দক্ষতা পরীক্ষা দিন । 
* বিদেশে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ডক্টরাল প্রোগ্রামগুলির জন্য আবেদন করুন। 
* পিএইচডি প্রথম বছরের পাঠ্যক্রম সম্পাদন। 
* একটি গবেষণামূলক বিষয় স্থাপন করুন এবং গবেষণা শুরু করুন। 
* গবেষণামূলক প্রবন্ধ রক্ষা করুন এবং গবেষণা প্রকাশ করুন। 
* পিএইচ.ডি. অর্জন করুন। 

পিএইচডির জন্য আন্তর্জাতিক সেরা কয়েকটি স্কলারশিপের নামঃ 
* প্রধানমন্ত্রী ফেলোশিপ
* ডাড স্কলারশিপ 
* ওয়ারউইক চ্যান্সেলরের ইন্টারন্যাশনাল স্কলারশিপ
* ক্যামব্রিজ ইন্টারন্যাশনাল স্কলারশিপ
* আইফেল স্কলারশিপ
* বেলজিয়াম-আমেরিকান এডুকেশনাল ফাউন্ডেশন ফেলোশিপ
* ভ্যানিয়ার কানাডা গ্রাজুয়েট স্কলারশিপ 
* গেটস কেমব্রিজ স্কলারশিপ
* সুইস গভর্নমেন্ট এক্সিলেন্স স্কলারশিপ
* নাইট-হেনেসি স্কলারস
* ইউনিভার্সিটি অফ সিডনি ইন্টারন্যাশনাল স্কলারশিপ
* মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফুলব্রাইট ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্ট প্রোগ্রাম
* রোডস স্কলারশিপ
* ইতালীয় সরকারী বৃত্তি
* গ্লোবাল মাইন্ডস ডক্টরাল স্কলারশিপ

আরো পিএইচডি স্কলারশিপ সম্পর্কে জানতে ক্লিক করুন

বিদেশে পিএইচডিঃ- 

সময় 
পিএইচডিতে জায়গা ভেদে এবং সেশন জট সহ বিভিন্ন কারণে এই কোর্স শেষ করতে সর্বোচ্চ  ৫ থেকে ৭ বছর সময় লেগে থাকে। 

খরচ 
আপনি কোন দেশের কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি কোর্স করতে চাচ্ছেন তার উপর নির্ভর করে থাকে পিএইচডি করার খরচ। তবে পিএইচডির গড় মোট খরচ প্রতি বছর সাধারণত প্রায় ৪০,৯০০ ডলারের মতো হয়ে থাকে। পিএইচডিতে অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়েই ফান্ড দেয়া হয়, টিচিং/রিসার্চ অ্যাসিস্টান্টশীপ বা ফেলোশীপের মাধ্যমে। এর সাথে টিউশন ফীও মাফ করা হয়। আবার আপনি যদি স্কলারশিপ মাধ্যমে বিদেশে পিএইচডির জন্য নির্বাচিত হন তাহলে খরচ অনেক কবে আসবে এমনি বিনামূল্যেই আপনি সুযোগ পেতে পারেন।   

চাকরি
বিদেশে পিএইচডি শেষে আপনি চাকুরির সুযোগ পাবেন। তবে আপনি কোন সেক্টরে চাকরি করবেন নির্ভর করবে আপনার পিএইচডি বা পূর্ববর্তী বিষয়ের উপরে।  আপনার পিএইচডির বিষয় বা প্রজেক্ট এবং গবেষণার গবেষণার ফলাফলের উপর নির্ভর করবে।  সেক্ষেত্রে আপনি ভবিষ্যতে একজন প্রফেশনাল গবেষক, বায়োকেমিস্ট এবং বায়োমেডিকাল বিজ্ঞানীও হতে পারেন। আপনি বাংলাদেশসহ বিদেশের বিভিন্ন কোম্পানিতে  বিজ্ঞান, গণিত এবং ভৌত বিজ্ঞান সেক্টরেও বিশেষজ্ঞ হিসাবে কাজ করতে পারেন। 

তবে বর্তমানে ম্যাক্সিমাম পিএইচডি ডিগ্রিধারীরা বিজ্ঞান, ফার্মাসিউটিক্যালস এব স্বাস্থ্যসেবার মতো সেক্টরে কাজ করতে পছন্দ করছে এবং এসব সেক্টরের ভালো ভালো পজিশন বেছে নিচ্ছে। 

এটি পুরোপুরি নির্ভর করবে আপনার লাক, দক্ষতা, অভিজ্ঞতা, যোগ্যতা, ডিগ্রি টপিক এবং আপনার চাহিদা বা আগ্রহের উপর। 

প্রয়োজনীয় কাগজপত্রঃ- 
উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর চাহিদা অনুযায়ী কাগজপত্র দিতে হয় । আপনি সহজেই আপনার পছন্দকৃত শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানের অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে তাদের চাহিদা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের তালিকা থেকে এ তথ্য জেনে নিতে পারবেন।  

* জাতীয় পরিচয়পত্র।
* পাসপোর্টের কপি।(বর্তমান ও আগের পাসপোর্টের ব্যবহৃত পাতা) 
* আবেদন ফরম। 
* সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির অনুমতি সংক্রান্ত চিঠি (কনফারমেশন অব এনরোলমেন্ট)
* স্বাস্থ্যবিমার প্রমাণপত্র। 
* ইংরেজি ভাষা দক্ষতার সনদ। 
* নেতৃত্বের গুণাবলি থাকতে হবে।
* গবেষণায় পারদর্শী হতে হবে।
* রেফারেন্স লেটার (রেফারেন্স লেটারের নমুনা/প্রয়োজনীয়তার জন্য পিডিএফ)।
* রিসার্চ প্রপোজাল। 
* শিক্ষাগত যোগ্যতা (সকল বোর্ড পরীক্ষার সার্টিফিকেট) ও কর্ম-অভিজ্ঞতা সনদ।
* পূরণকৃত অর্থনৈতিক সামর্থ্যের (স্পন্সর বা গ্যারান্টর) ফরম।
* স্পন্সরের সঙ্গে আবেদনকারীর সম্পর্কের প্রমাণ হিসেবে জন্মসনদ, পাসপোর্ট কিংবা স্কুলের কাগজপত্র।
* স্পন্সরের আয়ের উৎসের বিস্তারিত কাগজপত্র।
* কোনো কোনো ক্ষেত্রে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট (১২ মাসের বেশি পুরোনো নয়)।
* বিবাহিতদের ক্ষেত্রে স্বামী-স্ত্রী, সন্তানদের সম্পর্কের প্রমাণ হিসেবে জন্মসনদ ও বিবাহ সনদ।
* স্বাস্থ্য পরীক্ষার প্রমাণপত্র।

আরও পড়ুন: এইচএসসির পর বিদেশে উচ্চশিক্ষার প্রস্তুতি কীভাবে নেবেন?

বিশ্বের সেরা ১৫ বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকা দেওয়া হলো যেখানে আপনি পিএইচডি প্রোগ্রামে অধ্যায়নের সুযোগ পাবেন
১. অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়। 
২.স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়। 
৩.হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়। 
৪.ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি। 
৫.ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি। 
৬.কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়। 
৭.ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া, বার্কলে। 
৮.ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়। 
৯.প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়। 
১০.ইউনিভার্সিটি অব শিকাগো। 
১১. ইমপেরিয়াল কলেজ অব লন্ডন।  
১২.জনস হপকিনস ইউনিভার্সিটি ।
১৩. ইউনিভার্সিটি অব পেনসিলভানিয়া, যুক্তরাষ্ট্র।
১৪. ইটিএইচ জুরিখ, সুইজারল্যান্ড।  
১৫. ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া। 

এছাড়াও আরো উল্লেখযোগ্য কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় হলোঃ 
* ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাস। 
*  ইউনিভার্সিটি অব ইলিনয়েস। 
*  ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি। 
*  ইউনিভার্সিটি অব শিকাগো। 
*  কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটি। 
*  ইউনিভার্সিটি অব পেনিসিলভানিয়া। 
*  কর্নেল ইউনিভার্সিটি। 
*  ডিউক ইউনিভার্সিটি। 
*  ব্রাউন ইউনিভার্সিটি। 
*  ইউনিভার্সিটি অব উইজকনসিন। 
*  ইউনিভার্সিটি অব অ্যামস্টারডাম। 
*  ইউনিভার্সিটি অব ওয়াশিংটন। 
*  ইউনিভার্সিটি অব নর্থ ক্যারোলিনা।
*  ইউনিভার্সিটি অব গ্লাসগো।
*  ইউনিভার্সিটি অব ম্যানচেস্টার।
*  ইউনিভার্সিটি অব ওয়াররিক।
*  ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডন।
*  ইউনিভার্সিটি অব এডিনবার্গ।
*  লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকস। 
*  হ্যামবার্গ ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজিস।
*  কার্লশ্রুহে ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজি।
*  টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটি অব মিউনিখ।
*  ইউনিভার্সিটি অব বন।
*   ইউনিভার্সিটি অব অ্যাডিলেড।
*   ইউনিভার্সিটি অব ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়া।
*   ইউনিভার্সিটি অব কুইন্সল্যান্ড।
*   ইউনিভার্সিটি অব সাউথ ওয়েলস।
*   মোনাশ ইউনিভার্সিটি।
*   ইউনিভার্সিটি অব সিডনি।
*   অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি।
*   ইউনিভার্সিটি অব মেলবোর্ন।
*   কিং আব্দুল-আজিজ ইউনিভার্সিটি। 
*  কিং ফাহাদ ইউনিভার্সিটি অফ পেট্রোলিয়াম এন্ড মিনারেলস।