জার্মানিতে পছন্দের চাকরি খোঁজার নতুন উপায় ‘অপরচুনিটি কার্ড’, থাকছে যেসব সুবিধা
জার্মানিতে দক্ষ কর্মীর ঘাটতি পূরণে গত জুন থেকে ‘চান্সেনকার্টে’ বা ‘অপরচুনিটি কার্ড’ নামক একটি প্রকল্প চালু করেছে জার্মান সরকার। এই প্রকল্পের ফলে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাইরের দেশগুলোর নাগরিকরা সহজে কাজ খুঁজে পেতে ও জার্মানিতে গিয়ে বৈধভাবে কাজ করতে পারবে। এর পাশাপাশি সেখানে বসবাস করার সুযোগ পাবে। তবে এই কার্ডের জন্য শর্ত অনুযায়ী ৬ পয়েন্ট অর্জন করতে হবে।
অপরচুনিটি কার্ড কী?
চান্সেনকার্টে (অপরচুনিটি কার্ড) ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এটি হলো একটি রেসিডেন্স পারমিট বা আবাসিক অনুমতি, যা ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাইরের দেশগুলোর কর্মীদেরকে কাজ খোঁজার জন্য জার্মানিতে যাওয়ার অনুমতি দিবে। এই অপরচুনিটি কার্ড হলো একটি পয়েন্টভিত্তিক সিস্টেম, যা অনেকটা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ব্যবহৃত গ্রিন কার্ডের মতো। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিশেষ দক্ষতাসম্পন্ন পেশাদার নাগরিকদেরকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার অনুমতি দেয় এই গ্রিন কার্ড।
একটি অপরচুনিটি কার্ড পেতে হলে অবশ্যই আপনার দেশে স্বীকৃত, এমন কোনও ডিগ্রিধারী হতে হবে আপনাকে। অথবা, দেশে স্বীকৃত এমন কিছুর ওপর দুই বছরের প্রশিক্ষণ বা ট্রেইনিং সম্পন্ন করতে হবে। আপনাকে অবশ্যই জার্মান ভাষায় দক্ষ হতে হবে, অথবা সাধারণ ইউরোপিয়ান ফ্রেমওয়ার্ক অফ রেফারেন্স ফর ল্যাঙ্গুয়েজ (সিইএফআর) এর অধীনে বি-টু স্তরের দক্ষতা থাকতে হবে।
এছাড়াও, আবেদনকারীকে অবশ্যই প্রমাণ করতে হবে যে জার্মানিতে চাকরি খুঁজে না পাওয়া পর্যন্ত সেখানকার খরচ মেটাতে তাদের যথেষ্ট আর্থিক সংস্থান রয়েছে।
আপনার যোগ্যতা, শিক্ষা ও পরিস্থিতির ওপর ভিত্তি করে আপনি অপরচুনিটি কার্ডের জন্য যোগ্য কি না, তা নির্ধারণ করার জন্য পয়েন্ট সিস্টেম ব্যবহার করা হবে। একটি অপরচুনিটি কার্ড পাওয়ার জন্য আপনার অন্তত ছয়টি পয়েন্ট থাকা প্রয়োজন।
যেভাবে পয়েন্ট নির্ধারণ করা হয়:
(১) শিক্ষাগত যোগ্যতা: স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় ডিগ্রি বা পেশাগত প্রশিক্ষণ।
(২) কর্মজীবনের অভিজ্ঞতা: গত ৭ বছরে ৫ বছরের অভিজ্ঞতা থাকলে ৩ পয়েন্ট, ২ বছরের অভিজ্ঞতা থাকলে ২ পয়েন্ট।
(৩) ভাষাগত দক্ষতা: B2 স্তরের জার্মান জানলে ৩ পয়েন্ট, B1 স্তর জানলে ২ পয়েন্ট, A2 স্তর জানলে ১ পয়েন্ট।
(৪) বয়স: ৩৫ বছরের কম বয়স হলে ২ পয়েন্ট, ৪০ বছরের কম হলে ১ পয়েন্ট।
(৫) অতিরিক্ত পয়েন্ট: জার্মানিতে ৬ মাস থাকা থাকলে, বা সঙ্গী সহ আবেদন করলে ১ অতিরিক্ত পয়েন্ট।
ভিসার বৈশিষ্ট্য:
* এটি প্রাথমিকভাবে ১ বছরের জন্য বৈধ থাকে এবং ২ বছর পর্যন্ত বাড়ানো যায়।
* চাকরি খুঁজতে গেলে অর্থনৈতিক নিরাপত্তা দেখাতে হবে, অর্থাৎ বছরে প্রায় €১২,৩২৪ ব্লকড অ্যাকাউন্টে রাখতে হবে।
* চাকরি খোঁজার সময়ে ২০ ঘণ্টা পর্যন্ত পার্ট-টাইম কাজের সুযোগ আছে।
আরও পড়ুন: জার্মানিতে যাওয়ার পর যে কাজগুলো করা আপনার জন্য অত্যন্ত জরুরি
চাকরির সুযোগ-সুবিধা:
* এই নতুন উদ্যোগের অধীনে যোগ্য ব্যক্তিরা কোনও চুক্তিপত্র ছাড়াই এক বছরের জন্য জার্মানিতে থাকতে পারবেন এবং সেখানে থেকে চাকরি খুঁজতে পারবেন।
*চাকরি খোঁজার উদ্দেশ্যে দেশটিতে থাকার সময়, অপরচুনিটি কার্ডধারীরা নিজেদের যোগ্যতা অনুযায়ী খণ্ডকালীন চাকরির জন্য বিবেচিত হবেন এবং প্রতি সপ্তাহে সর্বোচ্চ ২০ ঘণ্টা পর্যন্ত কাজ করতে পারবেন। এর বাইরে, তারা সেখানে নতুন চাকরি খুঁজে পেতে পরীক্ষামূলকভাবে দুই সপ্তাহ কাজ করতে পারবেন।তবে চাকরি পাওয়ার পরই আপনি দীর্ঘমেয়াদী বসবাসের অনুমতি পাবেন।
যে কাজের জন্য উপযুক্ত:
ডেটা সায়েন্স, আইটি, প্রকৌশল, চিকিৎসা ও গবেষণা ইত্যাদি উচ্চ চাহিদা সম্পন্ন ক্ষেত্রগুলিতে দক্ষ পেশাজীবীদের জন্য এটি বিশেষভাবে কার্যকর। তবে কিছু নির্দিষ্ট শর্ত পূরণ করতে হবে, যেমন—যোগ্যতা ও পেশাগত অভিজ্ঞতা।
এ সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানতে ঘুরে আসতে পারেন নিম্নের ওয়েবসাইটগুলো থেকে
(১) WEPSA https://www.wepsa.de
(২) Talents2Germany https://www.talents2germany.de
(৩) Handbook Germany https://www.handbookgermany.de