জার্মানিতে যাওয়ার পর যে কাজগুলো করা আপনার জন্য অত্যন্ত জরুরি
উন্নত ক্যারিয়ার গড়ার আশা সব শিক্ষার্থীর। বিশ্বমানের শিক্ষাব্যবস্থা ও উন্নতজীবনের সঙ্গে খরচের হিসাব মিলে গেলেই উচ্চশিক্ষার জন্য অন্য দেশে পাড়ি জমানো যায়। বর্তমানে বিদেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ দেশের সিংহভাগ শিক্ষার্থীর স্বপ্ন। স্বপ্ন হবে না কেন? বিদেশে উচ্চশিক্ষা কাঙ্খিত লক্ষ্য অর্জনের সহজ পথ। তেমনই একটি দেশ জার্মানি।
প্রতিনিয়ত বাংলাদেশ থেকে অনেক এপ্লিক্যান্ট জার্মানিতে আসছেন, দেখতেও খুব ভালো লাগে। তবে জেনে রাখা ভালো, আপনার আসল পরিশ্রমের শুরুই হবে এখানে আসার পর থেকে। আমার যা যা মাথায় আছে এখন, আমি বলার চেষ্টা করবো, কি কি বিষয় আপনার অবশ্য কর্তব্য জার্মানিতে আসার পর।
১। আইসিই(ICE) টিকেট কাটা:
আপনি জার্মানিতে ল্যান্ড করার আগেই আমি বলবো আপনি আইসিই ট্রেনের টিকেট কেটে রাখবেন, তাহলে আপনি প্রথম দিন এসে ট্রেইন চেইঞ্জ করে এতোগুলো লাগেজ নিয়ে টাটানির হ্যাসেল থেকে বেঁচে যাবেন। এবং আগে আগে কেটে রাখলে প্রাইসও কম পড়বে। এক্ষেত্রে জার্মানিতে আপনার পরিচিত যে আছে, তাকে বলবেন আপনাকে পেমেন্ট করতে সাহায্য করতে। এখানে এসে টিকিট কাটতে গেলে দ্বিগুণ/ তিনগুণ দাম পোহাতে হতে পারে।
২। ডয়েচল্যান্ড টিকেট রেডি করে রাখাঃ
আপনার ইউনিভার্সিটি যদি ডয়েচল্যান্ড টিকেট প্রোভাইড করে, তাহলে তো অসাধারণ ব্যাপার। কিন্তু অনেক ইউনিভার্সিটি প্রোভাইড করে না, সেক্ষেত্রে আপনার উচিত হবে যত দ্রুত সম্ভব টিকেটটা কিনে ফেলা, কারণ এটা ছাড়া আপনি অনেকটা অচলপ্রায়।
৩। সিম কেনাঃ
অনেক জায়গায় পাবলিক ওয়াইফাই পাবেন, কিন্তু আপনার ডে টু ডে লাইফে আপনার যদি একটা সিম এবং ইন্টারনেট না থাকে আপনি কিছুই করতে পারবেন না। ম্যাপ দেখে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যাওয়া থেকে শুরু করে যেকোনোকিছু, আপনার সিম এবং ইন্টারনেট থাকলে নিজে নিজে বুঝে সব করতে পারবেন।তাই এসেই সবার প্রথমে একটা সিম কিনবেন, আলদি, ভোডাফোন, লাইকা, ও২ সহ আর কিছু সিম প্রোভাইডার আছে যারা প্রিপেইড সিম বিক্রি করে। তারপর আপনার সবকিছু রেডি হয়ে গেলে পার্মানেন্ট সিম কিনে ফেলবেন ভালো প্যাকেজ দেখে।
৪। এসানশিয়াল শপিংঃ
এত ঘণ্টা জার্নি করে এসেছেন, বাবা-মা, প্রিয়জনকে দূরে রেখে, এখন যদি পেটভরে কিছু না খান, আপনার বেশ খারাপ লাগবে। রান্না করার জন্য বেসিক যে বাজার সদাই, সেগুলো কিনে ফেলবেন। যেমনঃ ফ্রাই পেন, রাইস কুকার, তেল, লবন, চিনি, টিস্যু... আই মিন, যা যা লাগবে। ইলেক্ট্রনিক পণ্য কেনার জন্য চলে যেতে পারেন মিডিয়া মার্কেট, কসমেটিক্স এর জন্য ডিএম(Dm), বাসার বেসিক জিনিসপত্রের জন্য কিক(Kik), ইউরো শপ, ভোলভোর্থ (Woolworth), এবং বাজার সদাই করার জন্য Aldi, Lidl, Rewe, netto, norma, Edeka, Kaufland, Lekkerland... বেসিক্যালি আপনার বাসার আশেপাশে যেটা আছে, সেটাতেই। এছাড়া হালাল তুর্কিশ কিছু সুপার মার্কেটও আছে, ম্যাপে সার্চ করলেই পেয়ে যাবেন।
৫। সিটি রেজিস্ট্রেশনঃ
আপনি যেই সিটিতে উঠেছেন, সেই সিটিতে আপনাকে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। এক্ষেত্রে আপনার বাসার মালিকের কাছ থেকে আপনি যেই আনমেল্ডুং পেপার নিয়েছেন এবং সাথে পাসপোর্ট নিয়ে চলে যাবেন সিটি অফিসে বা যেটাকে রাথহাউস বলে এখানে। অনেক সিটিতে এপয়েন্টমেন্ট নিয়ে তারপর যেতে হয়, অনেক সিটিতে ডিরেক্ট গেলে হয়, আপনি আপনার সিটির পরিচিতদের কাছ থেকে এবিষয়ে জেনে নিবেন আগে থেকেই।
আরও পড়ুন: আমেরিকায় বিনা খরচে পড়ার সুযোগ বাংলাদেশী হাইস্কুলের শিক্ষার্থীদের
৬। ব্যাংক একাউন্ট খোলাঃ
ব্যাংক একাউন্ট খুলতে আপনার যে সিটি রেজিস্ট্রেশন এবং ট্যাক্স আইডি পেয়েছেন সেটা নিয়ে আপনার প্রেফার্ড যেকোনো ব্যাংকে একাউন্ট খুলে ফেলুন। এক্ষেত্রে ব্যাংকিং এর জন্য স্পার্কাসে (Sparkasse) এবং মোবাইল ফাইনেন্সিয়াল সার্ভিসের জন্য রিভলুট (Revolut) ইউজ করতে পারেন। রিভলুট ইউজ করার জন্য আপনাকে জাস্ট ফোন নাম্বার থাকলেই হবে। বিঃদ্রঃ এখানে এসে অনেকে রেফারেন্সের জন্য মারামারি বাধিয়ে দেয়, যেগুলোর কোন মানে নেই, আপনার যেটা ভালো লাগে, আপনি সেটাই ব্যবহার করবেন, কারো পাল্লায় পড়ার দরকার নেই।
৭। ব্লক মানি এবং হ্যালথ ইন্স্যুরেন্স এক্টিভেট করাঃ আপনার ব্যাংক ডিটেইলস পেয়ে গেলে খুব দ্রতই ব্লক আনব্লক করার জন্য ম্যান্ডেট করে দিন এবং হ্যালথ ইন্স্যুরেন্স এক্টিভ করে দিন। হ্যালথ ইন্স্যুরেন্স, ট্যাক্স আইডি, সোশ্যাল সিকিউরিটি নাম্বার এগুলো পেয়ে গেলে আপনি যেকোনো জবে ঢুকার জন্য আপনার ডকুমেন্টস রেডি। তারপর শুরু করে দিন, জীবন যুদ্ধের দিনগুলো।
৮। রেসিডেন্ট পার্মিট এর জন্য এপ্লাই করাঃ
যখন আপনি মোটামোটি এখানে একটু স্ট্যাবল হবেন, ইনিশিয়াল প্যারাগুলো যখন শেষ করবেন, তখন আপনার কাজ হবে রেসিডেন্ট পার্মিট এর জন্য এপ্লাই করা। এটার জন্য আপনার সিটির আউসল্যান্ডারবেহোর্দে ( ausländerbehörde ) তে গিয়ে কন্টাক্ট করতে হবে। সিটিভেদে এটা পেতে একেক জায়গায় একেকরকম সময় লাগে, তবে এটা পাওয়াটা আপনার জন্য জরুরী।