উচ্চশিক্ষায় নেদারল্যান্ডসে পড়তে যাওয়ার ৭টি কারণ
বিদেশে উচ্চশিক্ষায় আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের অন্যতম পছন্দের দেশ উত্তর-পশ্চিম ইউরোপের নেদারল্যান্ডস (হল্যান্ড)। জার্মানি ও বেলজিয়ামের নিকটতম প্রতিবেশী দেশ নেদারল্যান্ডস। দেশটি সেঞ্জেনভুক্ত এবং ইউরোপের প্রায় সবগুলো দেশের রাজধানীর সঙ্গে সংযুক্ত। এছাড়া নেদারল্যান্ডসের আবহাওয়া, পরিবেশ, শিক্ষাব্যবস্থা এবং উচ্চশিক্ষার খরচ সবমিলিয়ে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের কাছে দেশটি বেশ জনপ্রিয়।
নেদারল্যান্ডস বিশ্বের ১৮তম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ। ফিলিপস, হেইনকেন, কেএলএম, শেল, আইএনজি, ইউনিলিভারসহ বিশ্বের বেশ কিছু বড় বড় বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান নেদারল্যান্ডসের। কৃষি, পানি ব্যবস্থাপনা, শিল্প, সরবরাহ ব্যবস্থপনা, টেকসই শক্তিসহ অনেক ক্ষেত্রে নেদারল্যান্ডস বিশ্বসেরা।
নেদারল্যান্ডসের জাতীয় ভাষা ডাচ। তবে এখানে ইংরেজি, ফ্রিশিয়ান ও পাপিয়ামেন্টু ভাষাও প্রচলিত রয়েছে। ডাচ শিক্ষাব্যবস্থা খুবই উন্নত ও গবেষণাকেন্দ্রিক। নেদারল্যান্ডসে পড়তে যাওয়া শিক্ষার্থীরা প্রতিবেশী দেশগুলোতেও কাজের সুযোগ পেয়ে থাকেন।
(১) চমৎকার শিক্ষাব্যবস্থা
ডাচ শিক্ষা ব্যবস্থা উচ্চ মানের ও গবেষণাকেন্দ্রিক। এর ফলে আপনি হাতে কলমেই সবকিছু শিখতে পারবেন এখানে।
অন্যান্য ইউরোপীয় দেশের তুলনায় পড়াশুনা এবং জীবন যাত্রার খরচ অনেক কম। এছাড়াও রয়েছে স্কলারশিপের প্রচুর সুযোগ। নেদারল্যান্ডসের প্রোগ্রামগুলি আন্তর্জাতিক স্তরে উচ্চ র্যাঙ্কযুক্ত এবং মূল্যবান।
(২) ইউরোপের গেটওয়ে
নেদারল্যান্ডস থেকে ইউরোপের অন্যান্য দেশ একদমই কাছাকাছি। মাত্র তিন ঘণ্টায় আপনি প্যারিস এবং পাঁচ থেকে ছয় ঘণ্টায় লন্ডন এবং বার্লিনে যেতে পারবেন। তাই নেদারল্যান্ডসকে ইউরোপের গেটওয়ে বলা হয়।
(৩) নিরাপদ এবং সুখী দেশ
গ্লোবাল পিস ইনডেক্স ২০২৩ (Global Paece Index) অনুসারে, হল্যান্ড বিশ্বের সবচেয়ে নিরাপদ এবং সুখী ২০ টি দেশের মধ্যে একটি। ১৬৩টি দেশের মধ্যে এর অবস্থান ১৬ তম।
(৪) ইংরেজির ব্যাপক প্রচলন
দেশটির জাতীয় ভাষা ডাচ হলেও নেদারল্যান্ডসের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ইউরোপের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ইংরেজি শেখানোর প্রোগ্রাম রয়েছে। এখানে ২১০০ এরও বেশি ইংরেজি কোর্স রয়েছে। এ দেশের জনসংখ্যার প্রায় ৯৫ শতাংশ ইংরেজিভাষী, যা আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের দৈনন্দিন জীবনে যোগাযোগ করা সহজ করে তোলে।
(৫) কোর্স বেছে নেওয়ার স্বাধীনতা
ডাচ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কলা, মানবিক, বিজ্ঞান এবং সামাজিক বিজ্ঞানে স্নাতকের সুযোগ রয়েছে। আন্তবিভাগীয় পাঠ্যক্রমের মধ্যে থেকে ইচ্ছামতো কোর্স বেছে নেওয়ার সুযোগ পান শিক্ষার্থীরা। এর মানে অন্য দেশের তুলনায় এ দেশের বিষয় পছন্দ বেঁধে দেওয়া নয়, অনেকটাই স্বাধীন। দেশটিতে সাধারণত স্নাতক কোর্স ৩-৪ বছর মেয়াদি, স্নাতকোত্তর কোর্স ১-২ বছর মেয়াদি, পিএইচডি কোর্সগুলো ৩-৫ বছর মেয়াদি হয়ে থাকে।
(৬) টিউশন ফি ও স্কলারশিপ
মাস্টার্স প্রোগ্রামের জন্য টিউশন ফি বছরে ৮,০০০–২০,০০০ ইউরো। তবে দেশটিতে নির্দিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ভিত্তিক স্কলারশিপ রয়েছে যেগুলি তারা স্নাতক পর্যায়ে ভালো ফলাফল ও GMAT স্কোরের উপর ভিত্তি করে প্রদান করে। পাশাপাশি ইরাসমাস ও নফিক স্কলারশিপের মতো ডাচ সরকার কর্তৃক প্রদত্ত কিছু স্কলারশিপ রয়েছে।
(৭) পড়ালেখা শেষে কাজের সুবিধা
পড়ালেখা শেষে চাকরি খোঁজার জন্য এক বছরের ভিসা প্রদান করে থাকে নেদারল্যান্ডস। দেশটিতে আইটি সেক্টরে বেশ চাহিদা রয়েছে। তাই আইটি, প্রকৌশল ও প্রযুক্তি সংক্রান্ত কোনো বিষয়ে দক্ষ হলে ডাচ ভাষা জানার প্রয়োজন হয় না।
নেদারল্যান্ডসের শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয়
* আমস্টারডাম বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ।
* ইরাসমাস বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ।
* ইউনিভার্সিটি কলেজ ফ্রাইসলান।
* লেইডেন ইউনিভার্সিটি কলেজ দ্য হেগ।
* ইউনিভার্সিটি কলেজ গ্রোনিংজেন।
* ইউনিভার্সিটি কলেজ মাস্ট্রিক্ট।
আরও পড়ুন: টিউশন ফি ছাড়াই বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের পড়ার সুযোগ যে ৫ দেশে
গবেষণা প্রোগ্রামের জন্য শীর্ষ কলেজগুলো হলো—
*ডেলফ্ট ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি
* আইন্দহোভেন ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি
* ইরাসমাস ইউনিভার্সিটি রটারডাম
* লেইডেন বিশ্ববিদ্যালয়
* মাস্ট্রিচ বিশ্ববিদ্যালয়
* নায়েনরোড বিজনেস ইউনিভার্সিটি
* ওপেন ইউনির্ভাসিটি
* রাদবাউড ইউনিভার্সিটি নিজমেগেন
* প্রোটেস্ট্যান্ট থিওলজিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়
* টিআইএএস স্কুল ফর বিজনেস অ্যান্ড সোসাইটি
* টিলবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়।
নেদারল্যান্ডসের উচ্চশিক্ষার মান বিশ্বস্বীকৃত। টিউশন ফি এবং জীবনযাত্রার খরচ ইংরেজিভাষী অন্যান্য দেশের তুলনায় যথেষ্ট কম। ডাচ সরকার চাকরি খোঁজার জন্য বা স্নাতক হওয়ার তিন বছরের মধ্যে ব্যবসা শুরু করার জন্য এক বছর থাকার সুযোগ দেয়।