২৩ মার্চ ২০২৩, ১৩:৫৫

উচ্চশিক্ষার জন্য বিশ্বসেরা ১০ ফুল-ফ্রি স্কলারশিপ

উচ্চশিক্ষার জন্য বিশ্বসেরা ১০ ফুল-ফ্রি স্কলারশিপ  © সংগৃহীত

বর্তমানে শিক্ষার্থীদের স্কলারশিপ নিয়ে বাহিরের দেশে উচ্চশিক্ষার আগ্রহও দিন দিন বেড়েই চলছে। প্রায় সকল  শিক্ষার্থীই স্বপ্ন দেখে উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে পড়তে যাওয়ার। এর মধ্যে কেউ কেউ চায় দেশের বাইরে গিয়ে স্নাতক, স্নাতকোত্তর, সরাসরি পি এইচ ডি বা ডক্টরেট ডিগ্রী গ্রহণ করতে।

এর মূল কারণ হচ্ছে বিদেশে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে বিভিন্ন দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নজরকাড়া সব স্কলারশিপ । যার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা ফুল-ফ্রিতে বা আংশিক অর্থ প্রদানের মাধ্যমে উচ্চশিক্ষা অর্জন করতে সক্ষম হয়ে থাকে। আজ আমরা বিশ্বসেরা ১০ ফুল-ফ্রি স্কলারশিপ সম্পর্কে জানবো ।  

(১) কানাডা সরকারের বৃত্তি
কলেজ, স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য ফুল ফান্ডেড স্কলারশিপ দিয়ে থাকে কানাডা সরকার। এ স্কলারশিপের আওতায় শিক্ষার্থীরা কানাডার বিভিন্ন অঞ্চলের পোস্ট সেকেন্ডারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে পড়ালেখা ও গবেষণার সুযোগ পাবেন।

স্কলারশিপ হিসেবে কানাডা সরকার শিক্ষার্থীদের শিক্ষামেয়াদ অনুযায়ী ১০ হাজার ২০০ থেকে ১২ হাজার ৭০০ কানাডীয় ডলার দেবে। এই অর্থ শিক্ষার্থীরা স্টাডি ভিসা, উড়োজাহাজ ভাড়া, স্বাস্থ্যবিমা, জীবনযাত্রার খরচ, বই কেনা ও অন্যান্য কাজে ব্যয় করতে পারবেন।
 
(২) কমনওয়েলথ স্কলারশিপ অ্যান্ড ফেলোশিপ
ফুল ফান্ডেড স্কলারশিপের মধ্যে সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ স্কলারশিপ হিসেবে বিবেচনা করা হয় ‘কমনওয়েলথ স্কলারশিপ অ্যান্ড ফেলোশিপ’ প্রোগ্রামকে। কমনওয়েলথভুক্ত দেশের শিক্ষার্থীরা এই স্কলারশিপের জন্য আবেদন করতে পারবেন। কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলো থেকে প্রতিবছর ৭০০ শিক্ষার্থীকে এই স্কলারশিপ দেওয়া হয়।
 
কমনওয়েলথ স্কলারশিপ কমিশন এই বৃত্তি দিয়ে থাকে। এর মধ্যে রয়েছে পিএইচডি স্কলারশিপ, মাস্টার্স স্কলারশিপ, ডিসট্যান্স লার্নিং স্কলারশিপ ও মেডিকেল ফেলোশিপ। 

(৩) দাদ ইপোস স্কলারশিপ
জার্মানির বিশ্ববিদ্যালয়গুলো স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে পড়াশোনার জন্য বিদেশি শিক্ষার্থীদের এই স্কলারশিপ দেওয়া হয়। তবে কেবল উন্নয়নশীল ও শিল্পোন্নত দেশের শিক্ষার্থী এবং যাদের কমপক্ষে দুই বছরের পেশাজীবনের অভিজ্ঞতা রয়েছে, তরাই এ স্কলারশিপের জন্য আবেদন করতে পারবেন। কখনো কখনো ডক্টরেট ডিগ্রির জন্য পিএইচডি পর্যায়ের শিক্ষার্থীদেরও এই স্কলারশিপ দেওয়া হয়। 

(৪)ইরাসমাস মান্ডুস স্কলারশিপ
আইন, প্রকৌশল, কম্পিউটার বিজ্ঞান, ব্যবসা ও অর্থনীতি বিষয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের শিক্ষার্থীর ‘ইরাসমাস মান্ডুস স্কলারশিপ’ দেওয়া হয়। এই স্কলারশিপ দিয়ে থাকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। স্কলারশিপ পাওয়া শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি ও জীবনযাত্রার ব্যয় মেটানোর জন্য ১ হাজার ২০০ পাউন্ড দেওয়া হয়। 

(৫) তুরস্ক সরকারের বৃত্তি
তুরস্কের শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়ার জন্য বিদেশি শিক্ষার্থীদের ফুল ফান্ডেড স্কলারশিপ দিয়ে থাকে তুরস্ক সরকার। উচ্চশিক্ষার এই প্রোগ্রামের নাম ‘তুর্কিয়ে স্কলারশিপ’ প্রোগ্রাম। এই প্রোগ্রামের আওতায় স্নাতক, স্নাতকোত্তর ও ডক্টরেট পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা শিক্ষা ফি, থাকা-খাওয়ার খরচ, স্বাস্থ্য বিমা ও অন্যান্য শিক্ষা খরচ পেয়ে থাকেন।

হাঙ্গেরির মতো তুরস্ক সরকারও বিদেশি শিক্ষার্থীদের মাধ্যমে বিশ্বের অন্যান্য জাতির সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তুলতে আগ্রহী হয়ে উঠেছে। এ জন্য বেশির ভাগ কোর্স তুর্কি ভাষায় পড়ানোর ব্যবস্থা করেছে তুর্কি সরকার। তবে তুরস্কের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অল্প কয়েকটি কোর্সের জন্য এখনো টোয়েফল স্কোরের প্রয়োজন হয়। 

(৬) সুইজারল্যান্ডের ‘এক্সেলেন্স স্কলারশিপ’
স্নাতকোত্তর ও পিএইচডি সম্পন্নকারী বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য সুইজারল্যান্ড সরকার ‘এক্সেলেন্স স্কলারশিপ’ দিয়ে থাকে। এ ছাড়া স্নাতক সম্পন্নকারী বিদেশি শিল্পীকেও এই স্কলারশিপ দেয় সুইস সরকার।
 
কারা এই স্কলারশিপের জন্য বিবেচিত হবেন, তা নির্বাচন করে থাকে ফেডারেল কমিশন ফর স্কলারশিপ ফর ফরেন স্টুডেন্টস (এফসিএস)। 

(৭) শেভনিং স্কলারশিপ
যুক্তরাজ্যভিত্তিক ‘শেভনিং স্কলারশিপ’ অত্যন্ত প্রতিযোগিতামূলক স্কলারশিপ। অনেক শিক্ষার্থীর স্বপ্ন থাকে ফুল ফান্ডেড এই স্কলারশিপ পাওয়ার। স্কলারশিপটির আওতায় রয়েছে টিউশন ফি, বাসস্থান ভাড়া, উড়োজাহাজ ভাড়া ও অন্যান্য সুবিধা। শিক্ষার্থীরা যাতে চাপমুক্ত থেকে পড়াশোনায় মনোযোগী হতে পারে, সে জন্য শেভনিং কর্তৃপক্ষ সব আর্থিক বোঝা নিজের কাঁধে নেয়।

তবে এই স্কলারশিপের একটি অন্যতম শর্ত হচ্ছে, শিক্ষার মেয়াদ শেষ হওয়ার দুই বছরের মধ্যে শিক্ষার্থীকে নিজ দেশে ফিরে যেতে হবে। 

(৮)যুক্তরাষ্ট্রের ফুলব্রাইট ফরেন স্টুডেন্ট প্রোগ্রাম
স্নাতক পর্যায়ের বিদেশি শিক্ষার্থী, তরুণ গবেষক, পেশাদার ও শিল্পীদের যুক্তরাষ্ট্র সরকার ‘ফুলব্রাইট ফরেন স্টুডেন্ট প্রোগ্রাম’ পরিচালনা করে থাকে। বিশ্বের ১৬০টিরও বেশি দেশের শিক্ষার্থীরা এই প্রোগ্রামের আওতায় স্কলারশিপ পেয়ে থাকে। প্রতি বছর ৪ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী ফুলব্রাইট স্কলারশিপ পান। 

 (৯)গ্লোবাল কোরিয়া স্কলারশিপ
কোরিয়া সরকার আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য ‘গ্লোবাল কোরিয়া স্কলারশিপ’ নামে একটি ফুল ফান্ডেড স্কলারশিপ দেয়। এই স্কলারশিপ শুধু স্নাতক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের দেওয়া হয়। কোরিয়া সরকার বলেছে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে পারস্পরিক বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ককে আরও উন্নত করার লক্ষ্যে এই স্কলারশিপ দেওয়া হয়।
 
যেসব শিক্ষার্থী এই স্কলারশিপের জন্য বিবেচিত হবেন, তাঁরা জীবনযাত্রার খরচ, উড়োজাহাজ ভাড়া, চিকিৎসা বিমা, পুনর্বাসন ভাতা, গবেষণা সহায়তা, শিক্ষা সমাপনী অনুদান ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা পাবেন। 

 (১০)আমস্টারডাম এক্সেলেন্স স্কলারশিপ
বেশ কিছু শর্তে নেদারল্যান্ডসের আমস্টারডাম বিশ্ববিদ্যালয় এক্সেলেন্স স্কলারশিপ দিয়ে থাকে। শর্তগুলোর মধ্যে রয়েছে,

* শিক্ষার্থীদের অ-ইউরোপীয় দেশের নাগরিক হতে হবে এবং * ইংরেজি ভাষাভাষী হতে হবে। স্নাতকোত্তর পর্যায়ে ২০০টির বেশি ইংরেজি শেখা বিষয়ক কোর্স এবং স্নাতক পর্যায়ে ২০টির বেশি ইংরেজি শেখাবিষয়ক কোর্সের জন্য এ স্কলারশিপ দেওয়া হয়।
 
শুধু বিজ্ঞান, আইন, মানবিক, শিশু বিকাশ ও আরও বেশ কয়েকটি অনুষদের শিক্ষার্থীদের এই স্কলারশিপ দেওয়া হয়। স্কলারশিপের অর্থমূল্য ২৫ হাজার ইউরো।