কানাডার স্টুডেন্ট ভিসা পাবেন যেভাবে
কানাডার শিক্ষার মান, স্কলারশিপ প্রাপ্তি, বাৎসরিক টিউশন ফি, আবাসন সুবিধা, শিক্ষার্থীদের আয়ের পথ এবং শিক্ষাজীবন শেষে স্থায়ীভাবে বসবাসের সুযোগ ইত্যাদি বিষয়সমূহ বিবেচনায় বাংলাদেশী শিক্ষার্থীদের কানাডায় উচ্চশিক্ষার আগ্রহ ক্রমশ বেড়েই চলেছে। এছাড়া বর্তমানে কানাডা সরকার উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে বাংলাদেশী শিক্ষার্থীদের জন্য ভিসা সহজ করে দিয়েছে। রয়েছে শিক্ষাজীবন শেষে সহজেই পছন্দনীয় পেশায় যোগদান ও নাগরিক সুবিধার ব্যবস্থা। সব মিলিয়ে আপনার পছন্দের তালিকার শুরুতেই রাখতে পারেন কানাডাকে। আজ আমরা উচ্চ শিক্ষা গ্রহণে কানাডায় যাওয়ার ক্ষেত্রে ভিসা আবেদন এবং এ সংক্রান্ত নানা খুঁটিনাটি বিষয় সম্পর্কে জানবো।
অফার লেটার: কানাডার সুডেন্ট ভিসা পেতে আপনাকে প্রথমে কোন একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অফার লেটার পেতে হবে। এ জন্য আপনাকে প্রথমে আপনার পছন্দসই একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবে প্রদত্ত আবেদন করার নিয়ম অনুসারে আবেদন করে, উক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অফার লেটার সংগ্রহ করুন।
স্টাডি পারমিটের জন্য আবেদন করুনঃ কানাডায় স্টুডেন্ট ভিসা নামে কোনো ভিসা দেওয়া হয় না। মূলত, স্টাডি পারমিট দেওয়া হয়, যেটাকে স্টুডেন্ট ভিসা বলা হয়। স্টাডি পারমিট মূলত আপনার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কোর্সের মেয়াদের উপর নির্ভর করে। অর্থাৎ কোর্সের মেয়াদ যদি চার বছর হয় তাহলে আপনার স্টাডি পারমিটের মেয়াদও চার বছর হবে। সাথে অতিরিক্ত ৯০ দিন দেয়া হবে। আপনার স্টাডি প্রোগ্রাম যদি ৬ মাস কিংবা তারচেয়ে কম সময়ের হয়, তাহলে আপনাকে কোনো ধরনের স্টাডি পারমিট নিতে হবে না। যদি আপনার পরিবারের কেউ কানাডা থেকে থাকেন, তাহলেও আপনাকে স্টাডি পারমিট নিতে হবে না। একইভাবে আপনার কিংবা আপনার পরিবারের কারো যদি রেজিস্টার্ড ইন্ডিয়ান স্ট্যাটাস থেকে থাকে, তাহলেও আপনাকে স্টাডি পারমিট নিতে হবে না।
আরও পড়ুন: স্কলারশিপ নিয়ে স্নাতকোত্তর করুন নিউইয়র্কে
কানাডার স্টাডি পার্মিটের জন্য সর্বপ্রথম সিটিজেনশিপ অ্যান্ড ইমিগ্রেশন কানাডার (CIC) ওয়েবে অনলাইনে আবেদন করুন। অথবা, নিকটস্থ কানাডিয়ান এম্বাসিতে যোগাযোগ করে অফলাইনে আবেদন করুন। আবেদনের জন্য আপনাকে যা যা সংযুক্ত করতে হবে; কানাডার সরকার কর্তৃক অনুমোদিত বিশ্ববিদ্যালয়ের অফার লেটার, কানাডায় থাকাকালীন আপনার থাকা, খাওয়া ও পড়ার খরচ বহন করার মতো পর্যাপ্ত আর্থিক যোগান রয়েছে, তার প্রমাণপত্র, আপনি কোনো প্রকার সন্ত্রাসমূলক কর্মকান্ডে যুক্ত নেই তার প্রমাণপত্র, আপনি পুরোপুরি সুস্থ তার প্রমাণ হিসেবে মেডিকেল রিপোর্ট, কানাডায় থাকাকালীন আপনি কোনো প্রকার সন্ত্রাসমূলক কর্মকান্ডে যুক্ত হবেন না, তার অঙ্গীকারনামা।
তবে এই স্টাডি পারমিট দিয়ে আপনি কানাডায় বসবাস করতে পারবেন না। কানাডায় ভ্রমণ ও বসবাসের জন্য আপনাকে টেম্পোরারি রেসিডেন্ট ভিসা অথবা ইলেকট্রনিক ট্র্যাভেল অথোরাইজেশন (ইটিএ) নামক ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে।
কানাডায় থাকাকালীন আপনার খরচ চালানোর জন্য পর্যাপ্ত আর্থিক যোগান রয়েছে তার প্রমাণপত্র হিসেবে যা যা যুক্ত করতে হবে ; কানাডার ব্যাংকে আপনার নিজের নামের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, ব্যাংক স্টেটমেন্ট, ব্যাংক ড্রাফট, এক বছরের থাকা ও পড়ার খরচ পরিশোধ হয়েছে, তার প্রমাণপত্র। যে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান আপনার ফান্ডিং দিবে, সেই ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক প্রদানকৃত চিঠি, আপনি যদি কোন স্কলারশিপ পেয়ে থাকেন, তবে তার প্রমানপত্র।
এসব কিছু সংযুক্ত করে স্টাডি পারমিটের জন্য আবেদন করতে আপনার খরচ হবে, ১৫০ কানাডিয়ান ডলার বা ৮৬১০ টাকা। এছাড়া, স্টাডি পারমিটের জন্য আবেদন করার পর নিকটস্থ ভিসা অ্যাপ্লিকেশন সেন্টার থেকে বায়োমেট্রিক ইনফরমেশন অর্থাৎ ফিঙ্গারপ্রিন্ট ও ছবি তুলে পাঠাতে হবে। এজন্য ১৪০০০ থেকে ১৭০০০ টাকার মতো খরচ হতে পারে।
আবেদন করার পর কী করবেন?
স্টাডি পারমিটের আবেদন করার ৩০ দিনের মধ্যে আপনাকে চিঠি অথবা মেইলের মাধ্যমে জানিয়ে দেয়া হবে যে, আপনার জন্য বায়োমেট্রিক ইনফরমেশনের দরকার পড়বে কিনা। যদি দরকার পড়ে, তবে উপরে বর্ণিত নির্দেশনার মাধ্যমে বায়োমট্রিক ইনফরমেশন পাঠিয়ে দেবেন।
তারপর আপনার আবেদন ফর্ম যাচাইবাছাই করে দেখা হবে। যদি অসম্পূর্ণ তথ্য কিংবা কোন অতিরিক্ত ডকুমেন্টে সমস্যা থাকে, তবে তারা আপনাকে তা জানিয়ে দেবেন। বিশেষ কোনো ক্ষেত্রে ইমিগ্রেশন অফিস থেকে আপনাকে সাক্ষাৎকারের জন্য ডাকা হতে পারে কিংবা আরো কিছু তথ্য পাঠানোর জন্য বলা হতে পারে।
যদি তারা আপনার আবেদন ফর্ম গ্রহণ করেন, তবে তারা আপনাকে একটি কনফার্মেশন লেটার পাঠাবেন। এই কনফার্মেশন লেটার কানাডা পৌঁছানোর পর ইমিগ্রেশন অফিসে দেখাতে হবে। আর যদি তারা আপনার আবেদন ফর্ম গ্রহণ না করেন, তবে তারা আপনাকে এর কারণ জানিয়ে মেইল পাঠাবেন।
টেম্পোরারি রেসিডেন্ট ভিসার জন্য আবেদন করবেন যেভাবে
স্টাডি পারমিট পাওয়ার পর আপনাকে টেম্পোরারি রেসিডেন্ট ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে। এই ভিসার জন্য আবেদন করতে আপনার যা যা লাগবে-
• নির্ভুলভাবে পূরণকৃত আবেদন পত্র।
• ভর্তিকৃত বিশ্ববিদ্যালয় বা প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ প্রদত্ত অফার লেটারের মূল কপি।
• চারটি পাসপোর্ট সাইজের ছবি।
• আপনার কোর্সের সময়সীমার চেয়ে একমাস বেশি মেয়াদের পাসপোর্ট।
• আপনার সকল জাতীয় কাগজপত্র, যেমন: জন্মনিবন্ধন, জাতীয়তা পরিচয়পত্র ইত্যাদি।
• আপনার সব ধরনের একাডেমিক কাগজপত্র।
• আর্থিক স্বচ্ছলতার প্রমান।
• স্পন্সরের প্রমানসহ বিস্তারিত তথ্য।
• স্টাডি পারমিট ফি দেওয়া হয়েছে- তার প্রমাণপত্র।
• ভিসা এনরোলমেন্টের ইলেকট্রনিক কনফার্মেশনের স্ক্যান কপি।
উপরের কাগজপত্রসহ কানাডিয়ান টেম্পোরারি রেসিডেন্ট ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে কানাডিয়ান এম্বাসিতে। সবকিছু ঠিক থাকলে একমাসের মধ্যে আপনি হাতে পেয়ে যাবেন আপনার স্বপ্নের দেশের ভিসা।
বাংলাদেশে অবস্থিথ কানাডিয়ান এম্বাসির ঠিকানা:
হাই কমিশন অফ কানাডা, বাংলাদেশ, Diplomatic Zone, United National Road, ঢাকা 1212
সময় সূচিঃ শুক্রবার-শনিবার- বন্ধ থাকে। রবিবার-সোমবার-মঙ্গলবার-বুধবার সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪.৩০ ,বৃহস্পতিবার ৮.০০ থেকে ১.৩০ পর্যন্ত।
মোবাইল নাম্বার: 02-55668444 ,ওয়েবসাইটের ঠিকানা: https://www.internationnal.gc.ca/country-pays/bangladesh/dhaka-dacca.aspx?lang=eng