যেভাবে প্রকাশ্যে এলো প্রক্সিকাণ্ডে জড়িত তানভীরের ফল
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘এ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় তানভীরের হয়ে প্রক্সি দেন বায়েজিদ নামের এক শিক্ষার্থী। ধরা পড়লেও ওএমআর শীট বাতিল না করায় খাতা মূল্যায়নে সর্বোচ্চ মার্ক পেয়ে এই ইউনিটে প্রথম স্থান অধিকার করেন তিনি।
তবে পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের পর আলোচনায় আসে বিষয়টি। সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে মূহুর্তেই নজর কাঁড়ে নেটিজেনদের। কিন্তু কিভাবে জানা গেল প্রক্সিকাণ্ডে জড়িত এই শিক্ষার্থীই সেই তানভীর?
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ৩ আগস্ট সকাল ১০টার দিকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার নামের একটি ফেসবুক গ্রুপে বিষয়টি প্রথম শেয়ার হয়। সেখানে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিসিয়াল পেজে দেয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তির স্ক্রিনশর্টের সাথে তানভীরের প্রাপ্ত ফলাফল শেয়ার করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তুহিনুজ্জামান।
তিনি কীভাবে বের করলেন এই তথ্য জানতে চাইলে তুহিনুজ্জামান বলেন, সকাল বেলা অনেক ভর্তিচ্ছুর ফলাফল পেতে সহায়তা করছিলাম। তবে একটু কৌতুহল নিয়েই বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিসিয়াল পেজের প্রক্সি দেয়া রোলগুলোর রেজাল্ট একে একে দেখতে শুরু করি। প্রথম দুইটি রোলের প্রথমটির পজিশন দেখতে পাই ৬ হাজারের উপরে।
‘‘দ্বিতীয়টির ফলাফল এক্সফেল্ড দেখা গেলেও তানভীরের রোলের ফলাফল দেখতে গিয়ে বের হয়ে আসে সে প্রথম হয়েছে। এরপর সেটি বিশ্ববিদ্যালয়ের দেয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিও ওই শিক্ষার্থীর ফলাফলের স্ক্রিনশর্ট ফেসবুক গ্রুপটিতে শেয়ার করি।’’
তুহিনুজ্জামানের এ তথ্য শেয়ারের পর বিষয়টি চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। এরপর শুরু হয় আলোচনা-সমালোচনা। এ বিষয়ে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসেও খবর প্রকাশিত হয়। পরে অবশ্য প্রশাসনের নজরে আসতেই তানভীরের ফল বাতিল ঘোষণা করে বিবৃতি দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
আরও পড়ুন: ঢাবি ছাত্রীকে দিয়ে প্রক্সি দেয়ানো সেই ভর্তিচ্ছু উত্তীর্ণ
বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে প্রক্সি দেয়া শিক্ষার্থীদের নাম ও রোলসহ বিস্তারিত তথ্য প্রক্সির আশ্রয় নেয়া তানভীরের ফলাফলটি সামনে আনতে সহায়তা করেছে।
জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তরের প্রশাসক অধ্যাপক প্রদীপ কুমার পাণ্ডে বলেন, উপাচার্যের নেতৃত্বে সুষ্ঠুভাবে ভর্তি পরীক্ষাকার্য সম্পাদনে সর্বদা কাজ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট সবাই। শুরু থেকেই ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতিসহ সকল অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনারোধে সচেষ্ট ছিল প্রশাসন। ফলে পরীক্ষায় জালিয়াতি করতে এসে ৫ জন দণ্ডপ্রাপ্ত হয়েছেন।
তিনি বলেন, অসাবধানতাবশত এই খাতাটা মূল খাতার সাথে থেকে যাওয়াই যথারীতি নিয়মে এ শিক্ষার্থীর ফল প্রকাশিত হয়। তবে প্রশাসনের সজাগ দৃষ্টি ও কার্যকরী পদক্ষেপে তৎক্ষনাৎ জরুরি সভায় এসব ফল বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে। তাছাড়া এমন আরো কোন জালিয়াতির সূত্র পাওয়া গেলে সেটাও বাতিল করা হবে। এমনকি ভাইভা কিংবা বিভাগের ভর্তির সময়ও যদি অসদুপায়ের প্রমাণ মিলে, তবে তাদের ভর্তিও বাতিলের পাশাপাশি আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এর আগে গত ২৬ জুলাই ২০২১-২২ সেশনে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘এ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় তানভীরের হয়ে প্রক্সি দিতে গিয়ে ধরা পড়ে বায়েজিদ নামের এক শিক্ষার্থী। এছাড়াও আরও তিনজন প্রক্সিদাতা এবং একজন ভর্তিচ্ছুকে আটক করে বিভিন্ন মেয়াদে দণ্ড দেয়া ভ্রাম্যমাণ আদালত।