দুই দশকে জিপিএ-৫ বেড়েছে ১৮শ গুণ
চলতি বছর অনুষ্ঠিত সেকেন্ডারি স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) পরীক্ষার ফল প্রকাশ হয়েছে গত রোববার। ঘোষিত ফল অনুযায়ী, এ বছর এসএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ লাখ ৩৫ হাজার ৮৯৮ জন শিক্ষার্থী। যদিও ২০০১ সালের এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ লাভ করা শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল মাত্র ৭৬। এ হিসাবে দুই দশকের ব্যবধানে এসএসসিতে জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর হার বেড়েছে ১৭৮৭ গুণ।
দেশে এসএসসি পরীক্ষায় গ্রেডিং পদ্ধতিতে ফল প্রকাশ শুরু হয় ২০০১ সালে। বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর (ব্যানবেইস) তথ্য অনুযায়ী, ২০০১ সালে অনুষ্ঠিত এসএসসি পরীক্ষায় সর্বমোট ৭ লাখ ৮৬ হাজার ২২০ জন পরীক্ষার্থী অংশ নেয়। এর মধ্যে পাস করে ২ লাখ ৭৬ হাজার ৯০৩ জন, পাসের হার ছিল ৩৫ দশমিক ২২ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছিল মাত্র ৭৬ জন।
আর ২০২০ সালের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় ৯টি সাধারণ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের মোট পরীক্ষার্থী ছিল ২০ লাখ ৪০ হাজার ২৮ জন। এর মধ্যে পাস করেছে ১৬ লাখ ৯০ হাজার ৫২৩ জন। এ হিসাবে সব বোর্ডের গড় পাসের হার ৮২ দশমিক ৮৭ শতাংশ। সর্বমোট জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ লাখ ৩৫ হাজার ৮৯৮ জন পরীক্ষার্থী।
২০০১ ও ২০২০ সালের ফলাফল তুলনামূলক বিশ্লেষণে দেখা যায়, দুই দশকের ব্যবধানে পরীক্ষার্থী সংখ্যা বেড়েছে দেড় গুণের কিছু বেশি। পাসের হার বেড়েছে ৪৭ দশমকি ৬৫ শতাংশীয় পয়েন্ট। আর জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থী বেড়েছে ১৭৮৭ গুণ।
সে হিসাবে সবচেয়ে বেশি প্রবৃদ্ধি ঘটেছে জিপিএ-৫ অর্জনের ক্ষেত্রে। সালভিত্তিক বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০০১ সালে জিপিএ-৫ পায় ৭৬ জন, ২০০২ সালে ৩২৭, ২০০৩ সালে ১ হাজার ৩৮৯, ২০০৪ সালে ৮ হাজার ৫৯৭, ২০০৫ সালে ১৫ হাজার ৬৩১, ২০০৬ সালে ২৪ হাজার ৩৮৪, ২০০৭ সালে ২৫ হাজার ৭৩২, ২০০৮ সালে ৪১ হাজার ৯১৭, ২০০৯ সালে ৪৫ হাজার ৯৩৪, ২০১০ সালে ৬২ হাজার ১৩৪, ২০১১ সালে ৬২ হাজার ২৮৮, ২০১২ সালে ৮২ হাজার ২১২ ও ২০১৩ সালে ৯১ হাজার ২৬৬ জন জিপিএ-৫ লাভ করে।
এরপর ২০১৪ সালে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের সময় এসএসিসিতে জিপিএ-৫ অর্জনকারী শিক্ষার্থীর সংখ্যা এক লাফে বেড়ে ১ লাখ ৪২ হাজার ২৭৬ হয়। ওই সময় এত বেশি জিপিএ-৫ পাওয়া নিয়ে সরকারের সমালোচনা করেন শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা। পরের বছর থেকে জিপিএ-৫ লাভের হার কিছুটা কমতে থাকে। ২০১৫ সালে জিপিএ ৫ পায় ১ লাখ ১১ হাজার ৯০১, ২০১৬ সালে ১ লাখ ৯ হাজার ৭৬৮, ২০১৭ সালে ১ লাখ ৪ হাজার ৭৬১, ২০১৮ সালে ১ লাখ ১০ হাজার ৬২৯ ও ২০১৯ সালে ১ লাখ ৫ হাজার ৫৯৪ জন জিপিএ-৫ অজর্ন করে। আর চলতি বছর পুনরায় এক লাফে ৩০ হাজার ৩০৪ জন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৩৫ হাজার ৮৯৮ জনে।
গত রোববার ফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে জিপিএ-৫ বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, শিক্ষার্থীদের সুন্দর ভবিষ্যত গড়তে হলে জিপিএ-৫ এর উন্মাদনা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। স্কুল-কলেজের শেষ পরীক্ষায় জিপিএ-৫ নিয়ে অভিভাবকদের মধ্যে উন্মাদনা রয়েছে। যা শিক্ষার্থীদের জীবনে নেতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারে। শিক্ষার্থীরা যে যার মেধা অনুযায়ী সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নেবে এবং সে অনুযায়ী ফলাফল পাবে। জিপিএ-৫ না পেলে সবাই মিলে মনে করবেন জীবন বৃথা হয়ে গেল... এটা শিক্ষার্থীদের বিকাশের জন্য, তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক। জিপিএ-৫ নিয়ে এই উন্মাদনা করবেন না। অভিভাবকদের অনুরোধ করব, প্রস্তুতি অনুযায়ী সন্তানরা ভালো ফল করল কিনা, সেটা দেখবেন।