২৭ অক্টোবর ২০২৪, ২০:৩০

অনার্সের ফলের আগেই যেভাবে শিক্ষক নিবন্ধনে উত্তীর্ণ শহীদ আবু সাইদ

শহীদ আবু সাইদ  © সংগৃহীত

১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনের লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহীদ বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ। গত ১৪ অক্টোবর শিক্ষক নিবন্ধনের লিখিত পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়। কিন্তু এর সাত দিন পর শহীদ আবু সাঈদের অনার্সের ফলাফল প্রকাশিত হয়। দেখা যায়, ৩ দশমিক ৩০ সিজিপিএ পেয়ে সম্মিলিত মেধাতালিকায় ১৪তম স্থান অধিকার করেছেন তিনি। তবে অনার্সের ফল প্রকাশের আগে আবু সাঈদের শিক্ষক নিবন্ধনের লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া নিয়ে নানা প্রশ্ন আসছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে অনেকে এ বিষয়ে অনিয়মের অভিযোগও তুলেছেন। তবে, কোন অনিয়ম করে নয়, নিজ যোগ্যতাতেই শিক্ষক নিবন্ধনের লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছিলেন আবু সাঈদ।

অনার্সের ফলের আগেই শহীদ আবু সাইদ কিভাবে শিক্ষক নিবন্ধনের লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন সে বিষয়ে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বিস্তারিত জানিয়েছেন বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) কর্মকর্তারা। 

এনটিআরসিএর একাধিক কর্মকর্তা বলছেন, শহীদ আবু সাইদ ভাষা (বাংলা ও ইংরেজি) বিষয়ে ইবতেদায়ি শিক্ষক হতে শিক্ষক নিবন্ধনের লিখিত পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন। যে বিষয়ে শিক্ষক হতে তিনি গত ১২ জুলাই লিখিত পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন সে বিষয়ে শিক্ষকতার যোগ্যতা এইচএসসি ও সমমান উত্তীর্ণ। অর্থাৎ এইচএসসি পাসের সনদ দিয়েই তিনি শিক্ষক নিবন্ধনের আবেদন করেছিলেন। আগামী বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর) সকালে তার ভাইভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। 

আরও পড়ুন : নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ, শিক্ষক হওয়া হলো না শহীদ আবু সাঈদের

কিন্ত ভাইভা দেয়া হল না আবু সাঈদের। পরিবারকে দেওয়া অর্থনৈতিক নিশ্চয়তার প্রতিশ্রুতি দেয়া এ তরুণ আর নেই। গত ১২ জুলাই শিক্ষক নিবন্ধনের লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেয়ার তিন দিন পর ১৬ জুলাই পুলিশের গুলি তার শিক্ষকতার স্বপ্ন চিরতরে শেষ করে দেয়। আবু সাইদের নিষ্প্রাণ দেহ ছাত্র-জনতার আন্দোলনকে আরও বেগবান করে। 

আবু সাঈদে শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষার ফল। ছবি : এনটিআরসিএর ওয়েবসাইট থেকে 

শিক্ষক নিবন্ধনের লিখিত পরীক্ষার ফল ঘেঁটে দেখা যায়, আবু সাঈদের রোল ছিল ২০১২৫৬২৯৭। তার পুরো নাম মো. আবু সাঈদ মিয়া। বাবা মো. মকবুল হোসেন ও মা মোসা. মোনয়ারা বেগম। ভাষা বিষয়ের ইবতেদায়ি শিক্ষক (সাধারণ) ক্যাটাগরিতে লিখিত পরীক্ষায় উর্ত্তীণ হয়েছেন তিনি।

মাদ্রাসার বিদ্যমান এমপিও নীতিমালা ও ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তিতেও দেখা গেছে, ইবতেদায়ি শিক্ষক হওয়ার যোগ্যতা এইচএসসি ও সমমান। সমগ্র শিক্ষা জীবনে যেকোন একটি তৃতীয় বিভাগ গ্রহণযোগ্য। বয়স অনুর্ধ্ব ৩৫ বছর হতে হবে এ পদে নিয়োগ পেতে। 

আরও পড়ুন : স্নাতক পাস করলেন শহীদ আবু সাঈদ, সিজিপিএ কত?

ভাইভার সূচি ঘেঁটে দেখা গেছে, আগামী বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর) সকাল সাড়ে নয়টা ১ নম্বর গ্রুপে তার ভাইভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। 

জানতে চাইলে এনটিআরসিএর পরীক্ষা শাখার সহকারী পরিচালক তাজুল ইসলাম দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আবু সাঈদ ইবতেদায়ি শিক্ষক হিসেবে নিবন্ধিত হতে লিখিত পরীক্ষা দিয়েছিলেন। ওই পদে নিবন্ধিত হতে শিক্ষাগত যোগ্যতা এইচএসসি ও সমমান। তাই অনার্সের ফল প্রকাশের আগেই তিনি শিক্ষক নিবন্ধনের লিখিত পরীক্ষার ফল পান। পরীক্ষা শাখার উপপরিচালক অধ্যাপক দীনা পারভীনও একই তথ্য দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে নিশ্চিত করেছেন।  

আবু সাঈদ বেরোবির ইংরেজি বিভাগের ২০১৯-২০ সেশনের শিক্ষার্থী ছিলেন এবং এই ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়কও ছিলেন। গত ১৮ আগস্ট আবু সাঈদের মৃত্যুর ঘটনায় তাঁর বড় ভাই রমজান আলী মহানগর তাজহাট আমলি আদালতে মামলা করেন। ওই মামলায় ১৭ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত আরও ৩০-৩৫ জনকে আসামি করা হয়।

রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার মদনখালী ইউনিয়নের বাবনপুর গ্রামের দিনমজুর মকবুল হোসেনের ছেলে আবু সাঈদ। বাবা-মাসহ ৯ ভাই-বোনের আকাশছোঁয়া স্বপ্ন ছিল তাঁকে ঘিরে। কিন্তু এখন আছে শুধুই হাহাকার। ছয় ভাই, তিন বোনের মধ্যে আবু সাঈদ ছিল সবার ছোট। অর্থাভাবে কোনো ছেলে-মেয়েকে লেখাপড়া করাতে পারেননি তার বাবা। আবু সাঈদ ছোট থেকেই ছিল অত্যন্ত মেধাবী। সে নিজ চেষ্টায় লেখাপড়া করে এত দূর পর্যন্ত গিয়েছিল। পরিবারসহ এলাকাবাসীর অনেক স্বপ্ন ছিল আবু সাঈদকে ঘিরে।

শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় প্রার্থীদের প্রিলিমিনারি, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা তিন ধাপে অংশ নিতে হবে। এরপর চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করা হয়। এ পরীক্ষার চূড়ান্ত ফলের ভিত্তিতে বেসরকারি স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক নিয়োগে সুপারিশ করে এনটিআরসিএ। তবে, ২০১৫ সালের আগ পর্যন্ত এনটিআরসিএ শুধু সনদ দিত। সনদের ভিত্তিতে নিয়োগ দিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা কমিটি।