পড়ালেখার পাশাপাশি চাকরি করতেন আন্দোলনে নিহত ফয়সাল, পেলেন জিপিএ-৪.৩৫

মো. ফয়সাল
মো. ফয়সাল

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত মো. ফয়সাল চলতি বছরের এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৪.৩৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন। গত মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) দুপুরে ফলাফল ঘোষণার পর ওই দিন সন্ধ্যায় ফলাফল জানতে পারে নিহত ফয়সালের পরিবার।

কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার কাচিসাইর গ্রামের সফিউল ইসলাম ওরফে রেজা মিয়ার ছেলে ফয়সাল। তিনি রাজধানীর দক্ষিণখান এলাকার এস এম মোজাম্মেল হক টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন। একই প্রতিষ্ঠান থেকে এসএসসিও পাস করেন তিনি। সংসারের হাল ধরতে পড়াশোনার পাশাপাশি ঢাকায় শ্যামলী পরিবহনের একটি বাসে সুপারভাইজার হিসেবে কাজ করতেন। থাকতেন রাজধানীর আবদুল্লাহপুর এলাকার একটি ভাড়া বাসায়।

জানা যায়, গত ১৯ জুলাই বিকেলে ছাত্র আন্দোলন চলাকালে রাজধানীর আবদুল্লাহপুরের শ্যামলী পরিবহনের কাউন্টারে যাবেন বলে বাসা থেকে বের হন ফয়সাল। ওই দিন সন্ধ্যায় তার মোবাইলে কল করলে সেটি বন্ধ পান পরিবারের সদস্যরা। এরপর বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজি করে না পেয়ে ২৮ জুলাই দক্ষিণখান থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়। এভাবে কেটে যায় ১২ দিন। এর মধ্যে বিভিন্ন হাসপাতালে খোঁজাখুঁজি করেও তার সন্ধান পাওয়া যায়নি। পরে ১ আগস্ট বিকেলে আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামে খোঁজ নিলে সেখানে কর্মরতরা বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করা মরদেহগুলোর ছবি দেখান স্বজনদের। পরে সেখানে ফয়সালের মরদেহের ছবি দেখতে পান স্বজনেরা।

আঞ্জুমানে কর্মরত ব্যক্তিরা পরিবারের সদস্যদের বলেছেন, অন্তত ১৫টি মরদেহ এক সঙ্গে গণকবর দিয়েছেন তারা। এর মধ্যে ফয়সালও ছিলেন।

নিহত ফয়সালের মা হাজেরা বেগম বলেন, আমার ছেলেটা ভালো ছাত্র ছিল। ইন্টার পাস করেও দেখে যেতে পারল না। এই দুঃখ কিভাবে সামলাই। আমার বুকটা ফেটে যাচ্ছে।

ফয়সালের তৃতীয় বোন রোজিনা আক্তার বলেন, আমাদের ছয় বোনের বিয়ে হয়ে গেছে। ফয়সাল ছিল সবচেয়ে বেশি আদরের। আমার সেই আদরের ভাইটাকে এভাবে প্রাণ দিতে হলো। আমার বাবা খুব অসুস্থ, কানে কম শোনেন। ফয়সাল পাস করেছে শুনে চোখের পানি ফেলছেন আর কারও সঙ্গে কথা বলছেন না। পরবর্তী সময়ে আমরা জানতে পেরেছি, পুলিশের গুলিতেই আমার ভাইয়ের মৃত্যু হয়েছে।

দেবিদ্বার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাহিদা আক্তার বলেন, ছাত্র আন্দোলনে নিহতদের মধ্যে দেবিদ্বার উপজেলার যারা নিহত হয়েছেন সবার পরিবারকে সহযোগিতা করা হয়েছে। নিহত ফয়সালের পরিবারকেও সহায়তা করা হয়েছে। তিনি যে এইচএসসি পরীক্ষায় পাস করেছেন বিষয়টি জানলাম এখন। আমি তার পরিবারের সঙ্গে আবার দেখা করে সহযোগিতা করার চেষ্টা করব।


সর্বশেষ সংবাদ