৩০ জুলাই ২০২৩, ১৫:১৯

৪৬ বছর বয়সে এসএসসি পাস করলেন কুড়িগ্রামের রহিমা

রহিমা বেগম  © সংগৃহীত

ছোটবেলা থেকেই পড়ালেখার প্রতি আগ্রহ ছিল কুড়িগ্রামের রহিমা বেগমের। কিন্তু দারিদ্রের কারণে চতুর্থ শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনা করলেও আর পড়া হয়নি। এর কিছুদিন পরই বসতে হয়েছিল বিয়ের পিঁড়িতে। পরবর্তীতে সংসার সামলে আর পড়ালেখা শুরু করা সম্ভব হয়নি। তবে ৪৬ বছরে এসে সেই স্বপ্ন পূরণ করেছেন রহিমা। 

চলতি বছরে কুড়িগ্রাম কাঁঠালবাড়ি মহিয়্যুস সুন্নাহ মহিলা দাখিল মাদরাসা থেকে দাখিল পরীক্ষায় মানবিক বিভাগ হতে ৩.৬০ জিপিএ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন রহিমা বেগম (৪৬)। কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজ ভাতাভুক্ত চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী হিসেবে কর্মরত রহিমা খাতুনের স্বামী ব্যবসায়ী আব্দুল জলিল সরকার মজনু। তিনি কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার পৌরসভার খলিলগঞ্জ নাজিরা সরকার পাড়া গ্রামের বাসিন্দা। 

সংসার জীবনে রহিমা খাতুনের রয়েছে এক মেয়ে ও এক ছেলে। ছেলে কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজে মাস্টার্স শেষ বর্ষের ছাত্র। আর মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। সন্তানদের নিয়ে স্কুল যাওয়া আসা করতে আবারও পড়াশোনায় উজ্জীবিত হয়ে ওঠেন তিনি। পরে তিনি একটি মাদরাসায় ভর্তি হয়ে পড়াশোনা করেন। কুড়িগ্রাম কাঁঠালবাড়ি মহিউস সুন্নাহ মহিলা দাখিল মাদরাসা থেকে দাখিল পরীক্ষা দিলে ৩.৬৭ জিপিএ পেয়ে উত্তীর্ণ হন।

আরো পড়ুন: ঢাবির দু’টি ইউনিট ও সাত কলেজের বিষয় পছন্দক্রম পূরণের সময় বাড়ল 

রহিমা বেগম বলেন, লোকলজ্জা আর বয়সের ভয় না করে আমি পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছি। বিয়ের আগে মাদরাসা লাইনে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছি। কিন্তু অল্প বয়সে বিয়ে হওয়ায় আর পড়াশোনা করা হয়নি। মনের আকাঙ্ক্ষা থেকে আবারও সংসার জীবনে এসে পড়াশোনা শুরু করি। আলহামদুলিল্লাহ, এ বছর এসএসসি পাস করলাম। আমার পড়াশোনা করার ব্যাপারে স্বামী-সন্তান ও সহকর্মীরা উৎসাহ দিয়েছেন। আমার ইচ্ছে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার।

রহিমা বেগমের মেয়ে মজিদা আক্তার পপি বলেন, মা এই বয়সে এসে সংসার ও চাকরি করার পরও পরীক্ষায় পাস করবে ভাবিনি। এই খুশি ভাষায় প্রকাশ করার মতো না। আমার সামনে এগিয়ে যাবে এজন্য সবার কাছে দোয়া চাই। 

কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজ অধ্যক্ষ মির্জা মোহাম্মদ নাসির উদ্দীন বলেন, রহিমা বেগম আমার কলেজের একজন কর্মচারী। তিনি দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে মাদরাসায় দাখিল শ্রেণিতে ভর্তি হন। এ বছর এসএসসি/সমমান পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে জিপিএ ৩.৬০ অর্জন করেছেন। বয়স কিংবা কোনো বাঁধাই তাকে আটকাতে পারেনি। পড়াশোনায় মাঝপথে কিংবা শুরুতে থেমে যাওয়া অন্য সকল নারী-পুরুষদের জন্য রহিমা একটি প্রেরণার উৎস। যেকোনো বয়সেই যে শিক্ষা অর্জন করা যায় রহিমা তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।