‘সবই যখন আলাদা, তাহলে গুচ্ছের আর কি দরকার?’

গুচ্ছভুক্ত ২২ বিশ্ববিদ্যালয়
গুচ্ছভুক্ত ২২ বিশ্ববিদ্যালয়  © ফাইল ছবি

গুচ্ছভুক্ত ২২ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে একটি আবেদনের মাধ্যমে সবগুলো বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের পছন্দক্রম দেওয়ার সুযোগ রাখার কথা বলা হলেও শেষ পর্যন্ত তাতে অটল থাকতে পারেনি ভর্তি কমিটি। কমিটির গতকাল বৃহস্পতিবারের (২৯ সেপ্টেম্বর) নীতি-নির্ধারনী সভায় সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে ২২টি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য আলাদা আলাদা আবেদন করতে হবে শিক্ষার্থীদের।

সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ২২টি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য আলাদা আলাদা আবেদন করতে হবে শিক্ষার্থীদের। এতে আবেদন প্রতি শিক্ষার্থীদের খরচ হবে ৫০০ টাকা। ফলে একজন শিক্ষার্থীকে গুচ্ছভূক্ত ২২টি বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করতে গুনতে হবে ১১ হাজার টাকা।

তাতে সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতি ৫০০ টাকার আবেদনের বিপরীতে একজন শিক্ষার্থী সকল বিশ্ববিদ্যালয়েই আবেদন করতে পারবে। যার ফলে গুচ্ছে পাশ করা সকল শিক্ষার্থী সকল বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করতে পারবে। এতে করে একজন সর্বোচ্চ নম্বর পাওয়া শিক্ষার্থী ও সর্বনিম্ন পাওয়া শিক্ষার্থী একইসাথে সব বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করতে পারবে। ফলে প্রক্রিয়াটি হতে যাচ্ছে দীর্ঘ ও সময়সাপেক্ষ।

চলতি বছরে পরীক্ষার শুরুতে ২২টি বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন্দ্রীয়ভাবে শিক্ষার্থীদের সহজ প্রক্রিয়ায় সম্পন্ন করার উদ্যোগের কথা বলা হলেও শেষ পর্যন্ত তা বাস্তবায়ন করতে পারেনি কমিটি। উল্টো এখন আবেদনের ক্ষেত্রে প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পৃথক পৃথক আবেদন নিচ্ছে কমিটি। তাই ভর্তিচ্ছুরা প্রশ্ন তুলেছেন, গুচ্ছভুক্ত ২২ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তির সবই যখন আলাদা তাহলে এ গুচ্ছের আর কি দরকার?

আরও পড়ুন: কথা রাখেনি গুচ্ছ কমিটি

সৈয়দ রবিউল ইসলাম সাইমন নামে এক ভর্তিচ্ছু বলেন, আলাদা আবেদন হলে মেধাতালিকাও গতবারের মত আলাদা দিতে হবে। না হলে কেউই পছন্দের ভার্সিটি বা বিষয় কিছুই পাবে না। সবই যখন আলাদা মেরিট কেন একসঙ্গে? সবই যখন আলাদা তাহলে গুচ্ছের কি দরকার আর?

এ বিষয়ে অসন্তোষ জানিয়ে তন্ময় দাঁস নামে এক ভর্তিচ্ছু বলেন, গুচ্ছ কমিটি আবেদনের টাকা যদি প্রতিটা ভার্সিটির জন্য আলাদা আলাদাভাবে নিতে পারে; তাহলে মেধাতালিকাও প্রতিটা ভার্সিটির জন্য আলাদা আলাদাভাবেই দিতে হবে। কারণ এতে করে আমাদের যেখানে ভালো লাগবে সেই ভার্সিটিতেই থাকার সিদ্ধান্ত নিতে পারবো।

ভর্তিচ্ছু এ শিক্ষার্থী আরও বলেন, তাদের যেহেতু কেন্দ্রীয়ভাবে আবেদন নিতে এতই সমস্যা, তাহলে কষ্ট করে আর মেধাতালিকাটা কেন্দ্রীয়ভাবে করার দরকার নেই। মেধাতালিকা দেখে আমরা আমাদের নিজ দায়িত্বে যেখানে খুশি সেখানে ভর্তি হতে পারবো।

এ নিয়ে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. ফরিদ উদ্দিন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানিয়েছেন, গুচ্ছভুক্ত প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে আলাদা আলাদা শিক্ষার্থী ভর্তির যোগ্যতা হওয়ায় আবেদন নেওয়া হবে পৃথক পৃথক ভাবে। মেধাতালিকা দেওয়া হবে কেন্দ্রীয়ভাবে।

একই প্রসেঙ্গে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রাইটেরিয়া ভিন্ন। তাই আবেদন পৃথক পৃথক ভাবে করতে হবে। তবে মূল ওয়েবসাইট একটিই। ওই ওয়েবসাইট থেকেই আবেদন করতে হবে।

অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন আরও বলেন, প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদনের পর বিশ্ববিদ্যালয়গুলো পৃথক পৃথক ভাবে একটি মেধাতালিকা তৈরি করবে। এই তালিকা তারা সেন্ট্রাল এডমিশন কমিটির কাছে পাঠাবে। এরপর সেন্ট্রাল কমিটি কেন্দ্রীয়ভাবে একটি মেধাতালিকা তৈরি করে ওয়েবসাইটে প্রকাশ করবে। সেই তালিকা অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের ভর্তি করা হবে।

উল্লেখ্য, এবার শুরুতে শিক্ষার্থীরা একবারই আবেদন করবে এবং আবেদনের সময় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পছন্দক্রম ঠিক করার সহজ প্রক্রিয়ার কথা বলা হয়েছিল ভর্তি কমিটির পক্ষ থেকে। পরবর্তীতে প্রাপ্ত নম্বর অনুযায়ী সাবজেক্ট এবং বিশ্ববিদ্যালয় নির্ধারণ করা হবে। যা ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পৃথকভাবে আবেদন করতে হয়েছিল। এতে শিক্ষার্থীদের আর্থিক ক্ষতির পাশাপাশি ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে।

গতকালের সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আগামী ১৭ অক্টোবর থেকে আবেদন গ্রহণ শুরু হবে। অর পত্রিকায় ভর্তি সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে আগামী ১৪ অক্টোবর।

প্রসঙ্গত, ৩০ জুলাই দেশের ১৯ কেন্দ্রের ৫৭টি ভেন্যুতে একযোগে গুচ্ছের ‘ক’ ইউনিটের, ১৩ আগস্ট মানবিক অনুষদভুক্ত ‘বি’ ইউনিটের এবং ২০ আগস্ট বাণিজ্য অনুষদভুক্ত ‘সি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। গুচ্ছের এবারের ভর্তি পরীক্ষায় ‘ক’ ইউনিটে ৮৫ হাজার ৫৮২ জন, ‘বি’ ইউনিটে ৪৮ হাজার ১০৬ জন এবং ‘সি’ ইউনিটে ২৩ হাজার ২২৮ জন ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী পাস করেছেন।


সর্বশেষ সংবাদ