মুসকানকে ঘিরে ভুয়া তথ্যের প্রচারণা

একাধিক ভুয়া ছবি ও ভিডিও ভাইরাল হয়েছে
একাধিক ভুয়া ছবি ও ভিডিও ভাইরাল হয়েছে  © সংগৃহীত

ভারতের কর্ণাটক রাজ্যের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রীদের হিজাব পরিধান নিয়ে বিতর্কের মধ্যে মুসকান খান নামে হিজাব পরিহিতা এক কলেজছাত্রীর ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। গেরুয়া ওড়না পরা একদল যুবকের বিরুদ্ধে একা দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ করতে দেখা গেছে তাকে। গত মঙ্গলবার (৮ ফেব্রুয়ারি) ঘটনাটি ঘটেছে কর্ণাটকের মান্ডিয়া কলেজে।

এদিকে, এ ঘটনার পর মুসকানকে ঘিরে নানান ভুয়া তথ্যের প্রচার হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। শুধু তাই নয়, ওই রাজ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে হিজাব পরার অধিকার নিয়ে গত মাসে ৫ শিক্ষার্থী হাইকোর্টে একটি রিট করেছিল। একদফা শুনানি হলেও ফলাফল এখন আসেনি। কিন্তু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার হচ্ছে, কর্ণাটক হাইকোর্টে রায় দিয়েছেন যে হিজাব পড়ে সেখানকার মুসলিম মেয়েরা শিক্ষাঙ্গনে যেতে পারবে।

“ভারতের মুসকান। অন্য সময়ে স্কার্ট, জিন্স পরিধান করে। শুধু কলেজেই বোরখা পরে যায়। এইগুলান যে কোন লেভেলের ধর্মীয় বদমাশ সেটা চিন্তারও বাইরে। মাঝখানে ধর্মীয় জজবা চ্যাতায়ে দিয়ে আসন্ন নির্বাচনে বিজেপির লাভ করে দিলো।” শীর্ষক শিরোনামে কিছু ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।

নাজমা নাজীর নামের এক বামপন্থী রাজনীতিবিদের ফেসবুক আইডি থেকে তার ছবি সংগ্রহ করে তা সাম্প্রতিক হিজাব বিতর্কে প্রতিবাদ করা আলোচিত কলেজছাত্রী মুসকান খানের ছবি বলে প্রচার করা হচ্ছে, যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।

নাজমা নাজীরের ছবি মুসকানের নামে প্রচার করা হচ্ছে

“Nazma Nazeer Chikkanerale” নামের ওই বামপন্থী রাজনীতিবিদের ফেসবুক আইডিতে ২০১৮ সালের ১৩ মে আপলোড করা ছবিটি দেখুন নিচে।

তাছাড়া ২০১৯ সালের ৭ অক্টোবর প্রকাশিত পোস্টে আরেকটি মূল ছবিগুলো খুঁজে পাওয়া যায় ওই বামপন্থী রাজনীতিবিদের।

কার্ণাটকে হিজাব ইস্যুকে কেন্দ্র করে ফেসবুকে দুটি ছবি ভাইরাল হয়েছে। ছবি দুটি সংযুক্ত করে বলা হচ্ছে পতাকা দিয়ে হিজাব বানিয়ে ভারতের মুসলিম ছাত্রীরা মাথায় দিয়ে প্রতিবাদ করছে। তবে ছবিগুলো সাম্প্রতিক সময়ের নয়।

ছবিগুলো সাম্প্রতিক সময়ের নয়

ছবিগুলোর একটি ২০১৭ এবং অন্যটি ২০১৯ সালের মুম্বাইয়ের আনজুমান ইসলাম কলেজের স্বাধীনতা দিবস উদযাপন অনুষ্ঠানের।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম “Financial Express”এর ওয়েবসাইটে ২০১৮ সালের ১৫ আগস্টে ‘Independence Day 2018 images: How India celebrated August 15’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনে এবং ‘The Hindu’ এর অফিশিয়াল ইন্সটাগ্রাম একাউন্টে “Students of the Anjuman-I-Islam college in Mumbai don tricolour head scarves before flag hoisting during Independence Day celebrations at the college. | Photo: Vivek Bendre” শিরোনামে প্রকাশিত মূল ছবি দুইটি খুঁজে পাওয়া যায়।

কর্নাটক হাইকোর্টের রায় উল্লেখ করে ‘হিজাব পরে শিক্ষাঙ্গনে যেতে পারবে মুসলিম মেয়েরা’ শীর্ষক দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি মিথ্যা। 

বুধবার বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কর্ণাটকের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে হিজাব পরার অধিকার নিয়ে গত মাসেই পাঁচ শিক্ষার্থী হাইকোর্টে একটি রিট করে। একদফা শুনানি হলেও ফলাফল আসেনি। হাইকোর্ট এটি বৃহত্তর বেঞ্চে পাঠিয়েছে। আপাতত কোর্ট থেকে হিজাব বিতর্কের মীমাংসা হচ্ছে না।

তবে, বৃহস্পতিবার কর্ণাটক আদালতের একটি বিশেষ বেঞ্চ হিজাব নিয়ে ১৮ জন ছাত্রের করা পাঁচটি আবেদন শুনবে।

এই ভিডিওটির ক্যাপশনে ইংরেজিতে লিখে দেয়া আছে, ঘটনাটি ভারতের মহারাষ্ট্রের। আন্তর্জাতিক নারী দিবসে এক ১৪ বছরের মেয়েকে একদিনের জন্য ‘ডিএসপি’র প্রতীকী দায়িত্ব দিয়ে সম্মানিত করা হয়। মেয়েটির নাম সাহরিশ কানওয়াল। ধর্মে তিনি মুসলিম।

কিন্তু চলমান হিজাব আন্দোলনের মুসকানকে কর্নাটক পুলিশের সম্মাননা দেয়ার ভিডিও হিসেবে প্রচার করা হচ্ছে।


২০২০ সালের ৬ মার্চে টাইমস অব ইন্ডিয়ার ইউটিউব চ্যানল থেকে ভিডিওটি ডাউনলোড করে নতুন ক্যাপশন যোগ করে ছড়ানো হয়েছে। 

২০১৮ সালের ঘটনা মুসকানকে সম্মাননা দেয়ার ভিডিও হিসেবে প্রচার করা হচ্ছে

 


সর্বশেষ সংবাদ