৩১ অক্টোবর ২০২৫, ১২:৩১

ফাতেমা রানীর তীর্থোৎসব: আলো, প্রার্থনা ও শান্তির আবহে ভক্তদের সমাবেশ

হাতে মোমবাতি নিয়ে ভক্তদের সমাবেশ  © টিডিসি ফটো

প্র‍তি বছরের মতো এবারও ক্যাথলিকদের মোমের আলোক মিছিলে আলোকিত হলো শেরপুরের গারো পাহাড়। হাতে মোমবাতি, ঠোঁটে প্রার্থনার সুর—এভাবেই দুই কিলোমিটারেরও বেশি আঁকাবাঁকা পাহাড়ি পথ অতিক্রম করেছেন হাজারো ভক্ত। গন্তব্য ছিল মা মারিয়ার আশীর্বাদপ্রাপ্ত স্থান, শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার গারো পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত ‘বারোমারি সাধু লিওর খ্রিষ্টধর্মপল্লি’। বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) সন্ধ্যায় এখানে শুরু হয় খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব ‘ফাতেমা রানীর তীর্থোৎসব’, যা শুক্রবার (৩১ অক্টোবর) সকালে মহাখ্রিষ্টযোগের মধ্য দিয়ে শেষ হয়।

দুই দিনব্যাপী এই তীর্থোৎসবে শুধু ক্যাথলিক খ্রিষ্টানরাই নয়, অন্যান্য ধর্মের মানুষও অংশ নেন প্রতিবছর। আয়োজক কমিটির সূত্রে জানা যায়, প্রতিবছর অক্টোবর মাসের শেষ বৃহস্পতিবার ও শুক্রবারে এই তীর্থযাত্রার আয়োজন করা হয়।

বৃহস্পতিবার বিকেল চারটায় পবিত্র খ্রিষ্টযোগের মধ্য দিয়ে তীর্থোৎসবের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। সন্ধ্যার পর আলোকসজ্জায় রঙিন হয়ে ওঠে পাহাড়ি পল্লিটি। রাত সাড়ে আটটার দিকে অনুষ্ঠিত হয় বর্ণাঢ্য আলোক শোভাযাত্রা, রাত ১১টায় মা মারিয়ার মূর্তির সামনে বিশাল প্যান্ডেলে আরাধনা এবং মধ্যরাতে নিরাময় অনুষ্ঠান ও নিশিজাগরণে মেতে ওঠেন ভক্তরা।

আজ শুক্রবার সকাল আটটায় জীবন্ত ক্রুশের পথ অতিক্রম এবং সকাল ১০টায় মহাখ্রিষ্টযোগের মধ্য দিয়ে শেষ হয় এবারের তীর্থোৎসব। এ বছরের উৎসবের উদ্বোধন করেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ভ্যাটিকান সিটির রাষ্ট্রদূত কেভিন এস. র‌্যান্ডেল। অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসক তরফদার মাহমুদুর রহমান ও জেলা পুলিশ সুপার আমিনুল ইসলামসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।
১৯৪২ সালে ৪২ একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত হয় বারোমারি সাধু লিওর ধর্মপল্লি। ১৯৯৮ সালে প্রয়াত বিশপ ফ্রান্সিস এ. গমেজ স্থানটিকে ‘ফাতেমা রানীর তীর্থস্থান’ হিসেবে ঘোষণা করেন। তখন থেকেই প্রতিবছর এই ধর্মীয় উৎসব আয়োজন করা হচ্ছে।

এ বছর প্রায় ৩০ থেকে ৪০ হাজার দেশি-বিদেশি রোমান ক্যাথলিক তীর্থযাত্রী অংশ নিয়েছেন উৎসবে। উৎসব এলাকা আলো, প্রার্থনা ও শান্তির আবহে মোড়ানো ছিল পুরো সময়জুড়ে।

বান্দরবান থেকে আসা তীর্থযাত্রী বিনিসিং ম্র‍ং বলেন, 'আমি প্রথমবারের মতো এখানে এসেছি। এসে খুব ভালো লাগছে। এরপর থেকে পরিবারের সবাইকে নিয়ে আসব প্রার্থনায়।'
নেত্রকোনা থেকে আসা তৃপ্তি ম্র‍ং বলেন, 'মা মারিয়ার কাছে এলে মনে এক ধরনের শান্তি পাই। আমরা প্রার্থনা করি যেন জীবনের দুঃখ-কষ্ট দূর হয়। প্রতিবছর এই সময়টার অপেক্ষায় থাকি।‘
ঢাকা থেকে আগত শিক্ষার্থী তনুজা চাম্বু গং বলেন, ‘সবাই যখন মোমবাতি প্রজ্বলন করে প্রার্থনা করতে করতে পাহাড়ি আঁকাবাঁকা পথ অতিক্রম করছিলেন, তখন পুরো পাহাড় যেন আলোয় আলোকিত হয়ে উঠেছিল।'

সাধু লিওর ধর্মপল্লির পাল পুরোহিত ও তীর্থোৎসব কমিটির আহ্বায়ক তরুণ বনোয়ারি বলেন, 'ধর্মীয় চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশ-বিদেশের হাজারো মানুষ এখানে সমবেত হয়েছেন। তাঁরা দুই দিনব্যাপী নানা ধর্মীয় অনুষ্ঠানে অংশ নিচ্ছেন। মা ফাতেমা রানীর কাছে দেশ ও মানবজাতির কল্যাণে প্রার্থনা শেষে সবাই নিজ নিজ গন্তব্যে ফিরে যাবেন।'