জুমার দিনের বিশেষ আমল, যেসব কাজ করতে নিষেধ করেছেন নবীজি
জুমার দিনকে অন্যান্য দিনের তুলনায় মুসলমানরা বেশিই গুরুত্ব দিয়ে থাকে। কেননা মুসলমানদের জন্য পবিত্র জুমার দিনকে সপ্তাহের শ্রেষ্ঠ দিন হিসেবে গণ্য করা হয়। এই দিনটি ইসলাম ধর্মের অনুসারীদের কাছে সাপ্তাহিক ঈদের দিন হিসেবেও পরিচিত। জুমার দিন সম্পর্কে রাসূল (সা.) বলেন, মহান আল্লাহর কাছে জুমার দিনটি ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার মতোই শ্রেষ্ঠ দিন। এ দিনটি আল্লাহর কাছে অতি মর্যাদাসম্পন্ন। (ইবনে মাজাহ, হাদিস নম্বর ১০৮৪)। এই দিনের বিশেষ কিছু আমল ও যেসব কাজ থেকে রাসূল (সা.) বিরত থাকতে বলেছেন।
জুমার দিনের বিশেষ আমল-
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ, এক জুমা থেকে পরবর্তী জুমা, এক রমজান থেকে পরবর্তী রমজান মধ্যবর্তী সময়ের পাপ মোচন করে; যদি সেই ব্যক্তি সব ধরনের কবিরা গুনাহ থেকে বিরত থাকে। (মুসলিম হাদিস ২৩৩)।
জুমার দিন পাক পবিত্র হওয়া-
জুমার দিন গোসল করা সুন্নত। গোসল করে সবার আগে মসজিদে যাওয়া অনেক সওয়াবের। রাসূলুল্লাহ (সা.) এর বাণী অনুযায়ী, যে ব্যক্তি জুমার দিন গোসল করে, প্রথম প্রহরে মসজিদে যায়, সে যেন একটি উট কুরবানি করার, দ্বিতীয় প্রহরে যাওয়া ব্যক্তি গাভী কুরবানী, তৃতীয় প্রহরে যাওয়া ব্যক্তি একটি ভেড়া কুরবানি, চতুর্থ প্রহরে যাওয়া ব্যক্তি মুরগি এবং পঞ্চম প্রহরে যাওয়া ব্যক্তি একটি ডিম দান করার সওয়াব পায়। এরপর যখন ইমাম খুতবায় ওঠেন, তখন ফেরেশতারা খুতবা শুনতে বসে পড়েন। (সহীহ বুখারী: ৮৮৭; সহীহ মুসলিম: ৮৫০)।
সূরা কাহাফের ফজিলত:
সূরা কাহাফের প্রথম দশ আয়াতে ইসলামের মৌলিক কিছু বিষয় তুলে ধরা হয়েছে। ‘আর তাদের সতর্ক করার জন্য যারা বলে যে, আল্লাহ সন্তান গ্রহণ করেছেন, এ বিষয়ে তাদের কোনো জ্ঞান নেই এবং তাদের পিতৃপুরুষদেরও ছিল না। উদ্ভট কথাই তাদের মুখ থেকে বের হয়, তারা কেবল মিথ্যাই বলে।’ (সুরা কাহাফ, ৪-৫)।
হাদিসে এসেছে ‘যে ব্যক্তি সুরা কাহাফের প্রথম ১০ আয়াত মুখস্থ করবে, সে দাজ্জালের ফিতনা থেকে মুক্তি পাবে।’ (মুসলিম শরিফ)।
দোয়া কবুল হয়-
প্রতিটি দিনই আল্লাহর কাছে দোয়া করা উচিত। দিনের কোন অংশে আল্লাহ দোয়া কবুল করেন তা হাদিস এবং কোরআনে বলে দিয়েছেন। তবে, জুমার দিন একটি সময় আছে, যখন মানুষ আল্লাহর কাছে কোনো দোয়া করলে আল্লাহ তা কবুল করেন। হজরত জাবের (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, জুমার দিন কোনো মুসলিম আল্লাহর কাছে ভালো কিছুর দোয়া করলে আল্লাহ তাকে তা দেন। তোমরা সময়টি আছরের পর অনুসন্ধান করো। (আবু দাউদ ১০৪৮)।
হজরত আনাস ইবনু মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘জুমার দিনের যে মুহূর্তে (দোয়া কবুল হওয়ার) আশা করা যায় তা আসরের পর থেকে সূর্যাস্তের মধ্যে তালাশ করো।’ (তিরমিজি, মুসলিম, মিশকাত, তালিকুর রাগিব)।
দরুদ শরিফের ফজিলত-
হাদিসে এসেছে জুমার দিন বেশি বেশি দরুদ পাঠ করলে আল্লাহ তায়ালা ৮০ বছরের গুনাহ সাফ করে দেন। আনাস বিন মালেক (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তোমরা জুমার দিন ও জুমার রাতে আমার প্রতি বেশি বেশি দরুদ পাঠ করো। কারণ যে আমার প্রতি একবার দরুদ পাঠ করে আল্লাহ তার ওপর ১০টি রহমত নাজিল করেন (সহিহুল জামে, হাদিস: ১২০৯)।
এছাড়া সুন্দর পোশাক পরিধান করা, সুগন্ধি ব্যবহার করা, মসজিদে গিয়ে কমপক্ষে দুই রাকাত সুন্নত আদায় করা, ইমামের কাছাকাছি গিয়ে বসা, দুই খুৎবার মাঝের সময়ে বেশি বেশি দুয়া করা, মনোযোগ দিয়ে খুতবা শোনা ইত্যাদি জুমার দিনের বিশেষ কাজ।
জুমার দিন নবিজি যেসব কাজ নিষেধ করেছেন-
লেনদেন করা
সূরা জুমার ৯ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন, হে ওই সব লোক, যারা ইমান এনেছো, জুম'আর দিন যখন নামাযের জন্য তোমাদের ডাকা হয় তখন আল্লাহর জিকিরের দিকে ধাবিত হও এবং বেচাকেনা ছেড়ে দাও। এটাই তোমাদের জন্য বেশী ভাল যদি তোমাদের জ্ঞান থাকে। অর্থাৎ জুমার দিন আজান হওয়ার সাথে সাথে বেচাকেনা বা অন্যান্য কাজ বন্ধ করে আল্লাহর দিকে ছুটে যেতে হবে।
খুতবা চলাকালে কথা বলা
জুমার নামাজের সময় ইমাম সাহেব যখন খুতবা তেলাওয়াত করেন এসময় কথা বলা নিষেধ এমনকি অন্যকে 'চুপ করো' বলা হলেও তা অনর্থক কথা ধরা হবে (সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম)।
জুমার নামাজ ছেড়ে দেওয়া
হাদিসে এসেছে যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে পরপর তিন জুমা ছেড়ে দেয়, আল্লাহ তার হৃদয়ে সীল মেরে দেন। দেন (আবু দাউদ ৫৩২, তিরমিযী ৫৬৫)। এছাড়া খুতবা শোনার সময় খেলাধুলা বা মনোযোগ ভিন্ন দিকে দেওয়াও উচিত না। জুমার গুরুত্ব আল্লাহ তায়ালার কাছে এত বেশি যে, কোরআনে ‘জুময়া’ নামে একটি স্বতন্ত্র সূরা নাজিল করা হয়েছে।