আরাফাহ দিনের গুরুত্ব ও বিশেষ আমল
জিলহজ মাসের ৯ তারিখ আরাফাহ দিন। ইসলামি শরিয়াতের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ও ফযীলতপূর্ণ দিন এটি। হজ্জের অন্যতম প্রধান রুকন— আরাফাত ময়দানে সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত অবস্থান করা। বিশ্ব মুসলিমের জন্য এ দিনটি যেমন ইবাদতের তেমনি ক্ষমা ও অনুগ্রহের বার্তা নিয়ে আসে।
ইসলামের পূর্ণতা ও আল্লাহর অনুগ্রহের ঘোষণা
এ দিনেই ইসলাম ধর্ম পূর্ণতা লাভ করে। হযরত মুহাম্মদ ইবনু ইউসুফ (রহ :)...তারিক ইবনু শিহাব থেকে বর্ণিত হাদিসে বলা হয়েছে, ‘একদল ইহুদি বললেন, যদি এ আয়াত আমাদের প্রতি অবতীর্ণ হতো, তাহলে আমরা উক্ত অবতরণের দিনকে ঈদের দিন হিসেবে উদযাপন করতাম। তখন ওমর (রা.) তাদের জিজ্ঞাসা করলেন, কোন আয়াত? তারা বললেন, এই আয়াত-‘আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীন (জীবন-বিধান) কে পূর্ণাঙ্গ করে দিলাম এবং তোমাদের প্রতি আমার নিয়ামত পরিপূর্ণ করলাম। (৫ঃ ৩)।’
এক নজরে আরাফার দিনের বিশেষ ৩টি আমল
১. নফল রোজা রাখা।
২.‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকা লাহু, লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু, ওয়া হুয়া আলা কুল্লি শায়ইন কাদীর।’ বেশি বেশি পড়া।
৩. বেশি বেশি দোয়া ও এস্তেগফার পড়া।
তখন ওমর (রা.) বললেন, কোন স্থানে এ আয়াত নাযিল হয়েছিল তা আমি জানি। এ আয়াত নাযিল হওয়ার সময় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরাফা ময়দানে (জাবালে রহমতে) দাঁড়ানো অবস্থায় ছিলেন।
দুই বছরের গোনাহ মাফের সুযোগ
আরাফার দিন যারা হজ পালন করছেন না, তাদের জন্য রোযা রাখা সুন্নত। হাদিসে এসেছে, ‘আরাফার দিনের রোযা এক বছর পূর্বের ও এক বছর পরের গোনাহর কাফ্ফারা।’ (সহিহ মুসলিম)
জাহান্নাম থেকে মুক্তির দিন
আরাফাহ দিবসে আল্লাহ সবচেয়ে বেশি সংখ্যক বান্দাকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেন। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘এই দিন আল্লাহ বান্দাদের কাছাকাছি হয়ে যান এবং ফেরেশতাদের কাছে গর্ব করে বলেন, দেখ, আমার বান্দারা ধুলায় ধূসরিত হয়ে আমার কাছে এসেছে।’ (সহিহ মুসলিম)
দোয়া কবুলের শ্রেষ্ঠ সময়
রাসূলুল্লাহ (সা.) হাদিসে ইরশাদ করেছেন, ‘সর্বোত্তম দো‘আ হলো আরাফার দিনের দোয়া। তিনি বলেন, “সর্বশ্রেষ্ঠ বাক্য যা আমি ও পূর্ববর্তী নবীগণ বলেছি তা হলো: ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, ওয়াহদাহু লা শারীকালাহ, লাহুল মূলকু ওয়া লাহুল হামদু, ও হুয়া আলা কুল্লি শাই’ইন কাদীর’।
এক নজরে আরাফার দিনের বিশেষ ৩টি আমল
১. আরাফার দিনে যারা হজ করছেন না তাদের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আমল হল ওইদিন নফল রোজা রাখা।
২. আরাফার দিনে রাসুল (সা.) একটি দোয়া বেশি বেশি করে পাঠ করতে বিশেষ ভাবে নির্দেশ দিয়েছেন। রাসুল (স.) হাদিসে ইরশাদ করেন, আমি এবং আমার পূর্ববর্তী নবীগণ যত দোয়া পড়েছেন তার থেকে সবচেয়ে উত্তম দোয়া হচ্ছে এটি—‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকা লাহু, লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু, ওয়া হুয়া আলা কুল্লি শায়ইন কাদীর।’ (অর্থ) আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই, তিনি একক, তাঁর কোনো শরিক নেই, রাজত্ব একমাত্র তাঁরই, সমস্ত প্রশংসাও একমাত্র তাঁর জন্য, আর তিনি সব কিছুর ওপর ক্ষমতাবান। (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ৩৫৮৫)
৩. বেশি বেশি দোয়া ও এস্তেগফার পড়া। নবী করিম (সা.) ইরশাদ করেছেন, সর্বোত্তম দোয়া হচ্ছে আরাফার দিনের দোয়া। এ দিনে দোয়া ও তওবা কবুলের সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। আরাফার দিন বছরের শ্রেষ্ঠ দিন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আল্লাহর কাছে আরাফাতের দিনের তুলনায় উত্তম কোনো দিন নেই।’ (মাজমাউল জাওয়াইদ, হাদিস : ৩/২৫৬)
আল্লাহ তাআলা যেন আমাদের সবাইকে এ দিনের ফযীলত থেকে উপকৃত হওয়ার তাওফীক দান করেন— আমীন।