রাস্তায় অনেক মানুষ, আমি চিৎকার করলেও কেউ সাহায্য করেনি
‘একটি কালো টিশার্ট পরা ছিনতাইকারী এসে যখন আমার ফোন ছিনিয়ে নেয়, তখন শুধু আমিই দৌঁড়ে গেছি। রাস্তায় আমার পাশে অনেক মানুষ ছিল। আমি চিৎকার করেছি কিন্তু তারা আমাকে সাহায্য করেনি। একটু পর আরেকজন ছিনতাইকারী যখন একই জায়গা থেকে অন্যজনের ফোন ছিনতাই করে, আমি নিজে দৌড়ে গিয়ে তাকে পাকড়াও করি। কিন্তু আমার সাহায্যে কেউ আসলো না। মানুষ এখন খুব স্বার্থপর, সাহায্যের পরিবর্তে ভিডিও করে।’
এভাবেই ছিনতাই হওয়ার দিনের কথাগুলো বলছিলেন, সম্প্রতি আলোচিত সাহসী কন্যা খ্যাত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী পারিসা আক্তার। পারিসা আক্তার বলেন,মানুষ এখন অনেক স্বার্থপর হয়ে গেছে। একজনের বিপদে আরেকজন এগিয়ে আসে না। সবাই দেখে যে তার পাশের মানুষটা বিপদে পড়েছে, কিন্তু না দেখার ভান করে থাকে। যেন সে কিছুই জানে না। আরেক শ্রেণির মানুষ আছে, যারা ছবি তোলে, ভিডিও করে, কিন্তু সাহায্য করে না।
পারিসা আক্তার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থী। তিনি বিভাগ থেকে স্নাতকে উত্তীর্ণ হয়েছেন। স্নাতকোত্তরে গবেষণার (থিসিস) কাজে গত বৃহস্পতিবার মিরপুর চিড়িয়াখানায় যান। ফেরার পথে সন্ধ্যা ৬টার দিকে কারওয়ান বাজারে তার ফোন ছিনতাই হয়। পারিসার ওই ফোনেই ছিল তার গবেষণার সব গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। ফোন হারিয়ে পাগল প্রায় এখন পারিসা। ফোন ও তথ্যাদি হারিয়ে গবেষণা (থিসিস) থেকে ড্রপআউটের শঙ্কায় আছেন তিনি।
পারিসা বলেন, দীর্ঘ এক বছর আমি হাতি নিয়ে গবেষণা করছি। সেই সূত্রে মিরপুর চিড়িয়াখানায় আমার দীর্ঘদিনের যাওয়া-আসা। কিন্তু একদম শেষে এসে ফোন হারিয়ে আমি সব হারিয়েছি। ফোন এবং গবেষণার (থিসিস) তথ্যাদি না পেলে আমার বড় ক্ষতি হয়ে যাবে।
পারিসার গবেষণাপত্র জমা দিতে হবে আগামী ২৫ থেকে ২৮ জুলাইয়ের মধ্যে। দীর্ঘদিনের এ গবেষণার তথ্যাদি তার পক্ষে মাত্র দুদিনে সংগ্রহ করা সম্ভব নয়। তিনি বলেন, স্যারদের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। তারা বললেন, প্রথম দিন জমা দিতে না পারলেও শেষ দিনে জমা দিতে হবে। অন্যথায় ড্রপআউট হয়ে যাবে।
এই মুহুর্তে একটাই চাওয়া পারিসার। দেশের চুরি ও ছিনতায়ের স্থায়ী সমাধান চান তিনি। বলেন, ‘আমি এখনও ট্রমার ভেতর আছি। সেই স্মৃতিগুলো আমার চোখের সামনে ভাসছে। আমি শান্তিতে ঘুমাতে পারছি না। কি নির্মমভাবে আমার ফোন ছিনতাই হয়েছে, শুধু আমিই জানি। ওরা (ছিনতাইকারীরা) ধরা পড়ে, আবার জামিন হয়। আবার ছিনতাই করে। ভুক্তভোগী হই আমরা সাধারণ মানুষেরা।
আরো পড়ুন: ‘আমি একা ধরতে পারলে পুলিশ কেন পারবে না’: জবি ছাত্রী
তিনি আরও বলেন, আমি এই চুরি-ছিনতাইয়ের স্থায়ী সমাধান চাই। শুধু আমার ফোন পাওয়াটাই বড় কথা না, আমি চাই আমার মতো কেউ যেন এমন ঘটনার শিকার না হয়, সেই নিশ্চয়তা চাই। এই চুরি ছিনতাইয়ের স্থায়ী সমাধান চাই।
এদিকে ফোন ছিনতায়ের দু’দিন গত হলেও উদ্ধার করতে পারেনি তেজগাঁও থানা পুলিশ। তারা বলছে, ছিনতাইয়ের শিকার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই ছাত্রীর সহযোগিতার জন্য পুরো টিম কাজ করছে। খুব দ্রুতই এ চক্রকে গ্রেফতার করতে পারবেন তাঁরা। ফোনও উদ্ধার হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড.মোস্তফা কামাল বলেন, আমরা বিষয়টি জেনেছি। আইনি কোনো সহায়তা প্রয়োজনে আমরা সব সময় পাশে আছি।