দেশের ৬৪ জেলা ভ্রমণ

‘কমবয়সী ট্রাভেলার’ হিসেবে স্বীকৃতি চান ঢাবি ছাত্র শাওন

  © সংগৃহীত

একে একে দেশের সব জেলা ভ্রমণ শেষে বহির্বিশ্বে ভ্রমণ করে ঘুরে বেড়াতে চান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স বিভাগের ২০১৮-১৯ সেশনের শিক্ষার্থী রিফাত জাহান শাওন। ১৬ ডিসেম্বর সকল শহীদ মুক্তিযোদ্ধার প্রতি শ্রদ্ধা রেখে আনুষ্ঠানিক তিনি ৬৪ জেলা ভ্রমণ শেষ করার ঘোষণা দেন। বর্তমানে তার বয়স ১৯ বছর। এত কম বয়সে সারাদেশ ভ্রমণ সম্পন্ন করার কারণে ‘কমবয়সী ট্রাভেলার’ হিসেবে স্বীকৃতি চান শাওন।

পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলন করে ‘কমবয়সী ট্রাভেলার’ হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য গণমাধ্যমের সহযোগিতা চেয়েছেন তিনি।

বহু দিন ধরে' বহু ক্রোশ দূরে
বহু ব্যয় করি, বহু দেশ ঘুরে
দেখিতে গিয়েছি পর্বতমালা,
দেখিতে গিয়েছি সিন্ধু।

দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া
ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া
একটি ধানের শিষের উপরে
একটি শিশিরবিন্দু।

রবীন্দ্রনাথের আক্ষেপের কথাগুলোর যেনো বাস্তব প্রতিচ্ছবি ফুটিয়ে তুলেন এই যুবক। তাই আগে নিজের এলাকা ভ্রমণ করেন। প্রথমে নিজ জেলা নেত্রকোনা ভ্রমণের মধ্য দিয়ে সারাদেশ ভ্রমণ করা শুরু করেন। এই যাত্রায় ডিসেম্বর মাসের ১২ তারিখে বরগুনা জেলা ভ্রমণ করার মাধ্যমে শেষ হলেও শহীদদের প্রতি সম্মান রেখে ১৬ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম (ফেসবুক) এ ঘোষণা দেন তিনি।

ভ্রমণের আনুষ্ঠানিকতা কিভাবে শুরু হয় জানতে চাইলে শাওন বলেন, আমার ভ্রমণের শুরুটা হয়েছিল ২০১৯ সালের ১৬ জানুয়ারি নেত্রকোণার বিরিশিরি ভ্রমণের মাধ্যমে। সেখান থেকে ফিরে এসে আমার কাছে মনে হয়েছিল, জীবনটা অনেক সুন্দর। এরপর প্রায় ৪৮টি জেলা ঘুরে শেষ করি। কিন্তু গত ২ মার্চ ২০২০ করোনা পরিস্থিতির কারণে ভ্রমণ থেকে অব্যাহতি নেই, তবে লকডাউন শেষে স্বাস্থ্যবিধি মেনে মোটরবাইকে ভ্রমণ পুনরায় শুরু করি। প্রায় ৬০০০ কি.মি. পথ পাড়ি দিয়ে বাকি ২৬টি জেলা ঘুরি। বাইকের এই অদ্ভুদ সুন্দর যাত্রায় আমার সাথে ছিলো বন্ধু সোয়েব আহাম্মেদ সাজিব। যার দক্ষ ড্রাইভিংয়ের জন্য সুস্থভাবে বাড়ি ফিরতে সক্ষম হয়েছি। এরপর ১২ ডিসেম্বর, ২০২০ বরগুণা ভ্রমণের মধ্য দিয়ে আমার ভ্রমণ শেষ হলেও ১৬ ডিসেম্বর ২০২০ শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ভ্রমণের আনুষ্ঠানিক পরিসমাপ্ত করেছি। কেন না, যাদের জন্য আজ আমরা এদেশ পেয়েছি তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েই আমি আমার ভ্রমণ শেষ করছি।

তিনি আরও বলেন, হাজার বছরের ইতিহাস ঐতিহ্যে ভরপুর এই সমৃদ্ধ বাংলাকে জানতে হলে ভ্রমণের বিকল্প নেই। প্রযুক্তির এই যুগে আমরা যেন ঘর থেকে বেড়োতেই চাই না। বাঙ্গালী জাতি হিসেবে যদি নিজের দেশ ও জাতিসত্তা সম্পর্কে না জানি তবে বাংলার এ হাজার বছরের ইতিহাস একদিন বিলীন হয়ে যাবে যেভাবে বাংলার বুক থেকে হারিয়ে যাচ্ছে শত শত নদী, যেভাবে হারিয়ে যাচ্ছে বাঙালির হাজার বছরের সংস্কৃতি।

সারাদেশ ভ্রমণ করার পেছনে কে সবচেয়ে বেশি অনুপ্রেরণা দিয়েছে? জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রতিটি জেলায় আমার বন্ধু-বান্ধব রয়েছে। কারণ, আমি সবার সাথে কমিউনিকেটের মাধ্যমে এক জেলা থেকে আরেক জেলা ভ্রমণ করতে পেরেছি। তারা আমাকে সাহস জুগিয়েছে, দিয়েছে অনুপ্রেরণা। বিশেষ করে বলতে গেলে ডিপার্টমেন্টের শিক্ষক ইসরাফিল শাহিন (স্যার) এর কথায় সবচেয়ে বেশি অনুপ্রাণিত হয়েছি। পাশাপাশি আমার বন্ধু শুয়াইব আহমেদ সাজিব অনেকসময় আমার সাথে ছিলো। তার কাছেও বিশেষভাবে ঋণী।

শাওন সারাদেশ ভ্রমণ করে বহির্বিশ্বে ভ্রমণ করতে চান এবং দেশের পর্যটন শিল্প কে এগিয়ে নিতে চান তিনি। এ যেন সেন্ট অগাস্টিনের কথারই প্রতিধ্বনি- ‘পৃথিবী একটা বই আর যারা ভ্রমণ করে না তারা বইটি পড়তে পারে না’।

৬৪ জেলা ভ্রমণের মধ্যে কোন জিনিসটা সবচেয়ে উপভোগ্য? এবং কোন অপ্রীতিকর কর ঘটনার সম্মুখীন হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি জানান, বাগেরহাটের খান জাহান আলী রাহ. এর মাঝারের সামনে পুকুরপাড়ে বসে প্রাকৃতিক দৃশ্য আমাকে সবচেয়ে বেশি মুগ্ধ করেছে। আর অপ্রীতিকর ঘটনা বলতে গেলে বলতে হয়, মধুপুর একবার রাত দুইটার সময়ে এক বাঘের সামনে পড়েছিলাম। সেদিন খুব ভয় পেয়েছিলাম। তবে কোন ধরণের ক্ষতির সম্মুখীন হয়নি।


সর্বশেষ সংবাদ