০২ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১৯:২৮

গণিতে ১১ পাওয়া মেয়েটির দু’বার গোল্ড মেডেল জয়

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী সাজিয়া সুলতানা কেয়া। তিনি একাডেমিক ফলাফলের জন্য পেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী গোল্ড মেডেল ও ২য় এএফ মুজিবুর রহমান গোল্ড মেডেল। তার এ সফলতার পিছনে রয়েছে অনেক ত্যাগ ও কষ্টের গল্প। তার গোল্ড মেডেল পাওয়ার গল্প লিখেছেন- এম এম মুজাহিদ উদ্দীন।

ছোটবেলা থেকেই পড়ার প্রতি আগ্রহ ছিল। তবে সেই পড়া ক্লাসের বই নয়। ক্লাসের বইয়ের মধ্যে লুকিয়ে লুকিয়ে গল্প-উপন্যাস পড়ত। ফলে অল্প বয়সেই কয়েক’শ উপন্যাস পড়া হয়ে গিয়েছিল। ক্লাসের বই কম পড়ার কারণে ৬ষ্ঠ শ্রেণী হতেই একাডেমিক ফলাফল খারাপ হতে লাগল। বিশেষ করে গণিতে।

তারপর সপ্তম শ্রেণীর ২য় সাময়িক পরীক্ষায় ১১ পায়। এরপর থেকে আত্মবিশ্বাস এতই কমে যায় যে কোনো বিষয়ই আর ভালো করে পারত না। যা পড়ত পরীক্ষা দিতে গিয়ে সব ভুলে যেত। স্কুলে খারাপ ছাত্রী তকমা লেগে যায়। খারাপ ছাত্রী বলে স্কুলে অনেক শিক্ষক, সহপাঠী তাচ্ছিল্য করত। কিন্তু মানুষের তুচ্ছ তাচ্ছিল্যে সে দমে যায়নি। চেষ্টা চালিয়ে যেতে থাকে। যা পড়ত তা বুঝে বুঝে গভীর মনযোগের সাথে পড়ত। ফলে ধীরে ধীরে ফলাফল ভালো হতে থাকে আর আত্মবিশ্বাস ও ফিরে পেতে শুরু করে। তখন বন্ধুরা ও উৎসাহ দেয়া শুরু করে।

এসএসসি ও এইচএসসিতে ভালো ফলাফল করে। তারপর এ কয় বছরে কেয়া বুঝে যায় যে সে গণিতেই বেশি দক্ষ। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ে গণিত না হয় সাংবাদিকতা নিয়ে পড়ার ইচ্ছা পোষণ করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডি ইউনিটে ভর্তির সুযোগ পেলেও গণিত অথবা সাংবাদিকতা না পাওয়ার কারণে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগে ২০১০-১১ সেশনে ভর্তি হয়।

কেয়া জানান, ’প্রতিদিন আমার বাসা নারায়ণগঞ্জ থেকে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আসা –যাওয়া করতে অনেকটা সময় ব্যয় হত, এর সাথে থাকত অসুস্থতা। কিন্তু পড়ার যেনো ক্ষতি না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতাম। বাসায় এসে গভীর রাত জেগে গণিতের কঠিন কঠিন সমীকরণ মেলাতাম। বুদ্ধি খাটিয়ে সমস্যা সমাধান করতে আমার ভালো লাগে। আর গণিতে এ কারণেই আমার আগ্রহ বেশি।’

এত কষ্ট ও পরিশ্রমের ফলাফলও পেয়েছেন হাতেনাতে, অনার্সে তার ব্যাচের সর্বোচ্চ সিজিপিএ ৩.৮৯ পান। ভালো ফলাফলের পুরস্কার স্বরূপ পেয়েছেন এএফ মুজিবুর রহমান গোল্ড মেডেল। এছাড়াও অনুষদে সর্বোচ্চ সিজিপিএ’র জন্য প্রধানমন্ত্রী গোল্ড মেডেল-২০১৬ পেয়েছেন।

কিভাবে এ ফলাফল হলো জানতে চাইলে কেয়া বলেন, নিজের ইচ্ছা, মা-বাবা ও পরিবারের সদস্যদের দোয়া, বন্ধুদের উৎসাহ এবং শিক্ষকদের প্রেরণা আমাকে আজকের অবস্থানে নিয়ে এসেছে। আমি যা করি খুব ভালোভাবে করার চেষ্টা করি। কেয়ার ভবিষ্যত পরিকল্পনা গণিতের উপর উচ্চতর শিক্ষা নেয়া ও বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিতের শিক্ষক হওয়া। সেই সাথে সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের জন্য একটি স্কুল গড়ার স্বপ্ন দেখছেন তিনি।