ইলিশের জিন বিন্যাসে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেল বাংলাদেশ
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ০৬ জানুয়ারি ২০১৯, ০৬:১২ PM , আপডেট: ০৬ জানুয়ারি ২০১৯, ০৭:০০ PM
কথায় আছে ভাতে-মাছে বাঙ্গালি। আর মাছ খাওয়ার ক্ষেত্রে ইলিশ বাঙালির পছন্দের প্রথম সারিতে আছে। সেই ইলিশ নিয়েই এবার অনন্য এক সাফল্য পেয়েছে বাংলাদেশ। ইলিশের জীবনরহস্য উদঘাটনের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অর্জন করেছে বাংলাদেশ।
গত বছরের সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশি গবেষক দল উদ্ভাবিত পদ্মার ইলিশের জিন বিন্যাস বা জিনোম সিকোয়েন্স বিশ্বখ্যাত জার্নাল বায়োমেড সেন্ট্রাল (বিএমসি) প্রকাশ করেছে। লন্ডনভিত্তিক জার্নালটিতে বৈজ্ঞানিক গবেষণা সংক্রান্ত তথ্য প্রকাশ করা হয়। বিএমসিতে ইলিশের জিনতত্ত্বের ওপর কাজ করা বিভিন্ন দেশের মধ্যে বাংলাদেশের গবেষণাটি সবার আগে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাওয়ায় বিষয়টিকে অনন্য গৌরব বলে মনে করছেন গবেষকেরা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ রসায়ন ও অণুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক হাসিনা খানের নেতৃত্বে দেশের কয়েকজন গবেষক এই উদ্ভাবনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। এছাড়াও জার্নালে গবেষক হিসেবে নাম রয়েছে প্রাণ রসায়ন ও অণুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক হাসিনা খান, অধ্যাপক মোহাম্মদ রিয়াজুল ইসলাম, অলি আহমেদ, অভিজিৎ দাস, তাসনিম এহসান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ইলিশ গবেষক এম নিয়ামুল নাসের, নিউজিল্যান্ড প্রবাসী বাংলাদেশি বিজ্ঞানী আবদুল বাতেন, যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী ও যুক্তরাষ্ট্রের একটি প্রতিষ্ঠানের জ্যেষ্ঠ বিজ্ঞানী ও নিউক্লিওটাইড রসায়ন বিভাগের প্রধান ড. মং সানু মারমা এবং পিটার ইয়ানাকিভের।
গবেষনায় নেতৃত্ব দেয়া অধ্যাপক হাসিনা খান জানান, বিভিন্ন ধাপ ও প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বাংলাদেশ এই স্বীকৃতি পেল। প্রকাশনার আগের প্রক্রিয়া হিসেবে উদ্ঘাটন বিষয়ক সমস্ত তথ্য যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক জিন ব্যাংক ন্যাশনাল সেন্টার ফর বায়োটেকনোলজি ইনফরমেশনে (এনসিবিআই) জমা দিতে হয়েছে। জিন ব্যাংক সেসব তথ্য যাচাই বাছাই করেছে, অনুসন্ধান করেছে। তাদের তথ্য যাচাই শেষ হওয়ার পর প্রকাশনার জন্য সবকিছু বিএমসিতে দিতে হয়েছে। বিএমসিও সেটা সময় নিয়ে পর্যালোচনা করেছে। সব শেষ দুই সপ্তাহ আগে বিএমসি যোগাযোগ করে জানায় ইলিশের জিন বিন্যাসে বাংলাদেশের গবেষণালব্ধ তথ্য তারা প্রকাশ করেছে।
হাসিনা খান আরও বলেন, এর মাধ্যমে বাংলাদেশের এ উদ্ভাবন আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেল। জানার্লটিতে উন্মুক্ত প্রবেশাধিকার থাকায় যে কেউ বাংলাদেশের গবেষণা সম্পর্কে পড়তে পারবেন, জানতে পারবেন। ভবিষ্যতে ইলিশ সম্পর্কিত যেকোনো গবেষণায় বাংলাদেশের গবেষণালব্ধ তথ্য ব্যবহার করতে পারবেন বিজ্ঞানীরা।
গবেষকেরা জানিয়েছেন, ইলিশের জিনতত্ত্ব নিয়ে ভারত, মিয়ানমার, চীন, মালয়েশিয়া সহ বিভিন্ন দেশ কাজ করেছে। সেখানে বাংলাদেশের গবেষণাটি প্রথম হিসেবে স্বীকৃতি পেল। এর মাধ্যমে ইলিশ গবেষণায় বাংলাদেশ প্রথম হিসেবে এগিয়ে গেল।
জিন তত্ত্ব গবেষণার ফলে ইলিশ কীভাবে সমুদ্রের নোনা জল ও মিঠা পানি—দুই জায়গাতেই বসবাস করে। ইলিশের রোগবালাই কী, ইলিশ কি বদ্ধ জলাশয়ে চাষযোগ্য মাছ, কেন ইলিশ এত সুস্বাদু, কেন একেক এলাকায় ইলিশের স্বাদ পাল্টায়, পদ্মার ইলিশই-বা কেন বেশি সুস্বাদু, স্বাদ অটুট রেখে ইলিশ কি চাষ করা যাবে—ইলিশের জিন বিন্যাস উদঘাটনের ফলে এমন সব প্রশ্নের জবাব পাওয়ার পথ তৈরি হয়েছে।