৩০ আগস্ট ২০২২, ০০:৪৪

বেরোবি প্রক্টরের বিরুদ্ধে সহকারী অধ্যাপকের পাল্টা অভিযোগ 

মনিরুজ্জামান ও প্রক্টর গোলাম রব্বানী  © টিডিসি ফটো

শিক্ষা ছুটির আবেদন নিয়ে রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) রেজিস্ট্রার বরাবর পাল্টা-পাল্টি অভিযোগ দায়ের করেছে ইতিহাস ও প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের দুই শিক্ষক। 

সোমবার (২৯ আগস্ট) ইতিহাস ও প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ সহকারী অধ্যাপক মনিরুজ্জামান প্রক্টর গোলাম রব্বানীর বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে রেজিষ্টারকে একটি লিখিত অভিযোগ দেন। এর আগে গতকাল (২৮ আগস্ট) প্রক্টর গোলাম রব্বানী তার সহকর্মী মনিরুজ্জামানের বিরুদ্ধে অসদাচরণ ও অসৌজন্যমূলক আচরণের অভিযোগ এনে তিনিও রেজিস্ট্রার বরাবর অভিযোগপত্র দেন।
 
মনিরুজ্জামান তার অভিযোগপত্রে জানান, গত ২৮/০৮/২০২২ তারিখে ইতিহাস ও প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের সম্মানিত বিভাগীয় প্রধান গোলাম রব্বানী আমার বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। আমি কখনোই আমার কোন সম্মানিত সহকর্মীর বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে চাইনি। তিনি যেহেতু আমার বিরুদ্ধে লিখিতভাবে মিথ্যা অভিযোগ দিয়েছেন, তাই বাধ্য হয়ে আমাকে উক্ত ঘটনার প্রতিকার পেতে এই পন্থা অবলম্বন করতে হচ্ছে। আমি আমার কর্মস্থল বেরোবি প্রশাসনের অনুমোদন নিয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় হতে পিএইচডি ডিগ্রি সম্পন্ন করি এবং গত ২৭/০৬/২০২২ তারিখে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় আমার ডিগ্রি অনুমোদন করা হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের  ডিগ্রি স্বীকৃতির জন্য ০৪/০৭/২২ ইং তারিখে বিভাগীয় প্রধানের মাধ্যমে আপনার বরাবর আবেদন করি। কিন্তু বিভাগীয় প্রধান আবেদনপত্রটি অগ্রগামী না করায় তাকে বারবার অনুরোধ করি। তবুও তিনি সেটি অগ্রগামী করেননি। এরপর বাধ্য হয়ে গত ২১/০৭/২০২২ তারিখে পুনরায় বিভাগে আবেদনপত্র জমা দিয়ে রিসিভ কপি সংগ্রহ করি। এর পর থেকেই বিভাগীয় প্রধানকে বারবার অনুরোধ করা সত্ত্বেও তিনি সেটি অগ্রগামী করেন নি। 

সর্বশেষ দীর্ঘ এক মাস পর গত ২৪/০৮/২০২২ তারিখে তিনি ২৪/০৭/২০২২ তারিখ দেখিয়ে ব্যাকডেটে আমার আবেদনপত্র অগ্রগামী করেন। ইতোপূর্বে উক্ত পিএইচডি ডিগ্রি চলাকালীন গত ১২/০৬/২০২২ তারিখে মৌখিক পরীক্ষার (ফাইনাল ডিফেন্স) সময় ঘোষণা করা হলে আমি বিভাগ হতে কর্মস্থল ত্যাগের অনুমতি ও ফোন করে বিভাগীয় প্রধানের মৌখিক অনুমতি নিয়ে সেটিতে অংশগ্রহণ করি। তবে সে সময় ডিফেন্সের আগে আমার ব্যস্ততা থাকায় এবং ভুলবশত রেজিস্ট্রার দপ্তর হতে অফিসিয়াল ছুটি গ্রহণ করতে ভুলে যাই। তবে যাওয়ার আগে আমি মাননীয় উপাচার্য ও উপ-উপাচার্য মহোদয়কে অবহিত করে মৌখিক পরীক্ষায় (ফাইনাল ডিফেন্স) অংশগ্রহণ করতে যাই। পরবর্তীতে মাননীয় উপাচার্যের পরামর্শক্রমে গত ২৮/০৮/২০২২ তারিখে আমার কাটানো ছুটির ভুতাপেক্ষ অনুমোদনের জন্য আবেদন করি। উক্ত আবেদনপত্রে সুপারিশের জন্য ২৮/০৮/২০২২ তারিখ সকালে বিভাগে বিভাগীয় প্রধানের দপ্তরে গেলে তাকে না পেয়ে সকাল ১০টা হতে সাড়ে ১০টায় তার বাসায় যাই। তার বাসা হতে আমার বাসা কাছাকাছি হওয়ায় আমার স্ত্রী-সন্তানকে সাথে নিয়ে যাই। উক্ত আবেদনপত্রে সুপারিশ করার জন্য তাকে অনুরোধ করা হলে তিনি তা করতে অস্বীকার করেন এবং পরবর্তী সময়ে তিনি আপনার দপ্তরে আমার নামে মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে আমাকে পেশাগত, পারিবারিক ও সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করেন। এমনকি উক্ত মিথ্যা অভিযোগের কপি তিনি গণমাধ্যম কর্মীদের সরবরাহ করে প্রচারের মাধ্যমে আমার সম্মানহানি করে চলেছেন। 

তিনি আরও বলেন ,সার্বিক ঘটনা পর্যালোচনা করে আমার মনে হয়েছে বিভাগীয় প্রধান জনাব গোলাম রব্বানী কোনক্রমেই আমার এ পিএইচডি ডিগ্রিকে মেনে নিতে পারছেন না। সেই সঙ্গে বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে সময়ক্ষেপণ করে আমার পিএইচডি ডিগ্রির স্বীকৃতি এবং সামনে আমার সহযোগী অধ্যাপক পদে পদোন্নতিকে বাধাগ্রস্ত করার হীন চক্রান্তে লিপ্ত রয়েছেন। এ বিষয়ে   বিভাগীয় প্রধানের (প্রক্টরের) বিরুদ্ধে   প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য রেজিষ্টারকে অনুরোধ জানানো হয়।

এদিকে প্রক্টর গোলাম রব্বানী তার অভিযোগপত্রে উল্লেখ করেন, ‌‌‘গতকাল (২৮/০৮/২০২২) আনুমানিক সকাল ১০টায় উক্ত বিভাগের সহকর্মী সরকারি অধ্যাপক মনিরুজ্জামান তার স্ত্রীসহ আমার বাসায় আসেন। এই সময় তারা একটি আবেদনপত্রে জোরপূর্বক স্বাক্ষর নেয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করেন । স্বাক্ষর না দিলে মামলা করবেন  মর্মে আমাকে হুমকি ও ভীতি প্রদর্শন করেন। এ সময় আমার পরিবারের সদস্যবৃন্দ ও আত্মীয়-স্বজন উপস্থিত ছিলেন। তাদের সামনে আমার সহকর্মী ও তার স্ত্রী যে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেছেন তাতে আমি এবং আমার পরিবারের সদস্যবৃন্দ বিব্রতকর অবস্থায় পরি।'

তিনি আরও বলেন, আমার সহকর্মীর আবেদন পত্রটি তার পিএইচডি এর ডিফেন্স (যা ইতিপূর্বে সংঘটিত হয়েছে) এর জন্য ব্যাক ডেট এ ছুটি সংক্রান্ত ছিল। এ অসৌজন্যমূলক আচরণের প্রতিকার জানিয়ে তিনি প্রশাসনের রেজিস্টার প্রকৌশলী আলমগীর চৌধুরীর কাছে অভিযোগ দায়ের করেন এবং বিষয়টি খতিয়ে দেখার অনুরোধ জানিয়েছেন।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন,  দুজন শিক্ষকেরই অভিযোগপত্র আমি পেয়েছি। দুজনেই সম্মানিত শিক্ষক। এবিষয়ে আগামীকাল উপাচার্য স্যারের সাথে কথা বলে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।