২৮ আগস্ট ২০২২, ২২:১৫

৭০ টাকার ওভারটাইমে গাড়ি ভাড়া ১০০ টাকা!

কুবি   © সংগৃহীত

মো. জিয়াউর রহমান, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) বাংলা বিভাগের অফিস সহকারী কাম ডাটা প্রসেসর তিনি। সকাল ৭টায় অফিসে আসেন তিনি। সকাল ৯টা পর্যন্ত ওভারটাইম করেন তিনি। দুই ঘণ্টার এ ওভারটাইম বাবদ ৭০ টাকা পান তিনি। তবে সকাল ৭টায় কোন পরিবহন বরাদ্দ রাখেনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তাই সকালে নিজ খরচেই বিশ্ববিদ্যালয়ে আসেন জিয়াউর। এক্ষেত্রে ১০০ টাকারও বেশি খরচ হয় তার। 

জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮৫তম সিন্ডিকেট সভায় প্রশাসনিক কার্যক্রম সকাল ৯টা এবং একাডেমিক কার্যক্রম সকাল ৮টা থেকে নির্ধারণ করা হয়। তবে বিভিন্ন দপ্তর ও বিভাগগুলোর কর্মচারীদের মৌখিকভাবে সকাল ৭টা থেকে অফিস করতে বলা হয়েছে। 

এদিকে গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ে পরিবহন ব্যবস্থা না থাকায় সুবিধা পাচ্ছেন না কর্মচারীরা। এ নিয়ে ক্ষোভও প্রকাশ করছেন তারা।

বিভিন্ন একাডেমিক ভবনের কর্মচারীরা জানান, ‘রেজিস্ট্রার দপ্তর থেকে তাদের সকাল ৭টায় আসতে বলা হয়। কিন্তু ওভারটাইমের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোন বক্তব্য জানাননি কর্তৃপক্ষ। ফলে সকালে পরিবহন সুবিধা না থাকায় নিজ খরচে অফিসে আসতে হচ্ছে।’

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ওভারটাইমের কথা বললেও মূলত বাড়তি সময়টুকু কর্মচারীদের অফিস টাইম হিসেবে নির্ধারণ করেছে। কারণ একাডেমিক অফিস সহকারীরা এখন চাইলেই সকাল ৯টায় আসতে পারবেন না৷ যেহেতু ক্লাসের সময় সকাল ৮টায় নির্ধারণ করা হয়েছে। কাজেই অন্য কর্মকর্তা-কর্মচারীদের তুলনায় তারা বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন।’ 

এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান মুন্না বলেন, ‘সকাল ৯টা ১৫ থেকে আমাদের ক্লাস। যে কারণে ৭টার বাসে শহর থেকে আসা লাগছে, যা অনেক কষ্টসাধ্য ব্যাপার। এক ঘণ্টা আগানো হয়েছে ঠিকই কিন্তু যারা শহরে থাকে তাদের ভোগান্তি বেড়েছে।’  

বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন পুলের পরিচালক মো. জাহিদুল ইসলাম জানান, ‘কর্মচারীদের বাস সকাল ৮টা ১৫ মিনিটি ও কর্মকর্তাদের বাস সকাল ৮টা ২০ মিনিটে ছাড়ে৷ সকালে এসে অফিস করার কারণে বিভাগগুলোর কর্মচারীদের পরিবহন সমস্যা দেখা দিয়েছে৷’

আরও পড়ুন : শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ধর্মভিত্তিক ছাত্র রাজনীতি বন্ধ রয়েছে: শিক্ষামন্ত্রী

এ ব্যাপারে গণিত বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. আমান মাহবুব বলেন, ‘সরকারের গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সকাল ৮টা থেকে ৪টা অফিস এটা অবশ্যই গ্রহণযোগ্য। কিন্তু এখানে যে সমস্যাটা হচ্ছে সেটা হলো শিক্ষকরা আসছেন ৮টায় আর প্রশাসনিক ভবনের কর্মকর্তারা সকাল ৯টায় আসছেন। যেটা গ্রহণযোগ্য নয়। বিষয়টা এক দেশে দুই নীতির মতো। তাই আমার মনে হয় এ পদ্ধতিটা রিভার্স করা দরকার।’ 

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এফ এম আবদুল মঈন কিছুটা ক্ষিপ্ততা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘তোমাদের কী আর কোন প্রশ্ন নেই? সকাল ৯টা থেকে ৪টায় অফিস এটাই কেন বারবার জিজ্ঞেস করতে হবে?’

তিনি আরও বলেন, তোমরা আমাকে জিজ্ঞেস করবা ‘আপনি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা ও একাডেমিক উন্নতির জন্য কী কী করছেন’, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণার জন্য কত টাকার ফান্ড তৈরি করছেন,’ ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম বাড়ানোর জন্য কী কী পদক্ষেপ নিয়েছেন’; এসব না জিজ্ঞেস করে তোমরা প্রশ্ন করো ৯টা থেকে ৪টায়। এ ব্যাপারে আমি কোন মন্তব্য করতে চাই না। আমার সময় নেই।’