ছুটি বৃদ্ধিতে ক্ষুব্ধ বেরোবি শিক্ষার্থীরা
শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের দোহাই দিয়ে জ্বালানি ও বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে প্রতি বৃহস্পতিবার বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ রাখার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। তবে একাডেমিক কার্যক্রম যথারীতি চালু রাখার স্বার্থে শুধুমাত্র বৃহস্পতিবার অনলাইনে ক্লাস চালু থাকবে এবং সকল ধরণের পরীক্ষা কার্যক্রম সশরীরে অনুষ্ঠিত হবে।
মঙ্গলবার (১৬ আগস্ট ) উপাচার্য প্রফেসর ড. হাসিবুর রশীদের সভাপতিত্বে অনলাইনে অনুষ্ঠিত একাডেমিক কাউন্সিলের ৪১তম জরুরি সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ, তথ্য ও প্রকাশনা বিভাগ থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
তথ্যটি জানাজানি হলে ক্ষুব্ধ হন সাধারণ শিক্ষার্থীরা । শিক্ষার্থীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনা শুরু করেন। এছাড়াও বড় পাবলিক বিদ্যালয়গুলোর আগে বেরোবির এমন সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট নন একাডেমিক কাউন্সিলের একাধিক সদস্য। উপাচার্যের একান্ত চাওয়া থেকেই সপ্তাহে এক দিন বেশি বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানান নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক সদস্য। তারা বলেন, উপাচার্যের একক সিদ্ধান্তে এটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। জরুরী একাডেমিক কাউন্সিল আইওয়াশ মাত্র। তিনি যা মনে করেছেন সেটিই জরুরি একাডেমিক কাউন্সিল থেকে পাস করে নিয়েছেন। ছোট বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য একদিন বেশি বন্ধ মানে আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত বলেও তারা মনে করেছেন।
সাকিব রায়হান নামে একজন শিক্ষার্থী কমেন্টে বলেন, এতে বিদ্যুৎ খরচ আরও বাড়বে।কারণ আমাদের ক্লাসরুম গুলোতে ৬ টা থেকে ৮ টা ফ্যানের নিচে আমরা ৩০+ স্টুডেন্ট ক্লাস করি।কিন্তু এখন এই ১ দিন প্রত্যেকের রুমে একটা করে ফ্যান চলবে অর্থাৎ সারাদিন প্রায় ২০ টা ফ্যান বেশি চলবে। ২২ টা ডিপার্টমেন্ট এর ক্ষেত্রে হিসেব করলে দেখা যাচ্ছে এই এক দিনে প্রায় ৪৪০ টা ফ্যান বেশি চলবে। '
এইচ এম লিওন নামে একজন শিক্ষার্থী ফেইসবুকে কমেন্টে বলেন, ‘আসলে কি বিদ্যুৎ সাশ্রয় হবে? যদি একটা ক্লাস রুমে ৬০ জন ক্লাস করে তাহলে সর্ব্বোচ ১০ টি চার্জ ও লাগবে তাহলে কিভাবে বিদ্যুৎ সাশ্রয় হবে। আমি এর তীব্র নিন্দা জানাই। আমরা চাই ক্লাস অফলাইনে হোক।’
মো: রবিউল ইসলাম নামে আরেকজন শিক্ষার্থী কমেন্টে বলেন, ‘তাতে আমাদের কি? আমরা অফ ডে তে বেশি ক্লাস করি।’
রিপন ইসলাম নামে আরেকজন শিক্ষার্থী বলেন, ‘অনলাইনে ক্লাস ! সব শিক্ষার্থী বাসায় বা মেসে থাকলে বেশি বিদ্যুৎ ব্যবহার হবে। ’
ওবাইদুল ইসলাম মিল্টন নামে আরেক শিক্ষার্থী কমেন্টে বলেন, ‘বন্ধের আগের দিন ও পরের দিন ছুটি নেবে, হয়ে গেল ১৩ মাসেই সেমিস্টার । গনিত, পদার্থ, কম্পিউটার সাইন্স, রসায়ন , ভূগোল মাস্টারগুলা সেফুদার মত উদ্যাম নিত্য দিচ্ছে।’
‘অকারণে রাতে লাইট জ্বালানো থাকে এটার কী করবে?’ বলেন, পাপন সরকার এম পি।
আরেকজন শিক্ষার্থী কমেন্টে বলেন, ‘প্রমোশন টু দি নেক্সট সেমিস্টার দিলে ভালো হতো না? বিদ্যুৎ বেশি সাশ্রয় হইতো!’
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রফ্রন্টের সভাপতি রীনা মুর্মু বলেন, 'আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় সপ্তাহে তিন বন্ধ রাখার খবর শুনেছি। বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ রাখলেই যে বিদ্যুৎ সাশ্রয় হবে তা ঠিক না। এটা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের হেয়ালিপনা ছাড়া কিছুই না।'
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা জাতীয় ছাত্র সমাজের সাধারণ সম্পাদক এ কে এম মুশফিকুর রহমান বলেন, করোনার কারণে শিক্ষার্থীরা অনেক পিছিয়ে পড়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এমন সিদ্ধান্ত শিক্ষার্থীদের ক্ষতি হবে বলে আমি মনে করি।'
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শামীম মাহফুজ বলেন, ' বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের বিষয়টা আমি শুনেছি। তবে অনলাইনে ক্লাস-পরীক্ষা হবে। আমি মনে করি এ সংকট খুব তাড়াতাড়ি সমাধান হবে।'
এ বিষয়ে উপাচার্য প্রফেসর ড. হাসিবুর রশীদ বলেন, বিদ্যুৎ এবং আর্থিক সাশ্রয়ের করার জন্য সাময়িকভাবে আমরা এ পদক্ষেপ নিয়েছি।'