‘মেয়ে ফোনে বলতেছে- আব্বু বাড়ি আসো, স্যার বলল ছুটি নাই’
‘‘আমার মেয়ে ফোন দিয়ে বলতেছে আব্বু বাড়িতে আসো। আমার তো ছুটি নেই, কীভাবে বাড়িতে যাবো। আমরা নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য যেহেতু কাজ করি আমাদের অনেক কিছু ত্যাগ করতে হয়। ক্যাম্পাসে মামারা থাকলে ডিউটি করে আনন্দ পাই; না হলে আমাদের সময় কাটে না। ক্যাম্পাসে ঈদের নামাজ হয় শিক্ষকরা এবং আশেপাশের ছাত্ররা নামাজ পড়তে আসে তখন ভালো লাগে। গত ঈদে প্রশাসন থেকে আমাদেরকে ২৫০ টাকা করে দেওয়া হয়েছিল এবার দিবে কিনা এখনো জানি না।‘’
ঈদের ছুটির বিষয়ে কথা বলতে বলতে এভাবেই নিজের অসহায়ত্বের কথাগুলো দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের কাছে তুলে ধরেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে দায়িত্বরত মো. আবদুল খালেক নামের একজন আনসার সদস্য।
ত্যাগের মহিমা, সেবা, দান এবং মূল্যবােধের মাধ্যমে বিশ্ব মুসলমানদের ঘরে এসেছে ঈদুল আজহা। ঈদুল আজহা মুসলমানদের সবচেয়ে বড় দুটি ধর্মীয় উৎসবের মধ্যে একটি, যা জিলহজ্ব মাসে পালন করা হয়। ঈদ উপলক্ষে বন্ধ রয়েছে অফিস, আদালত, স্কুল-কলেজের পাশাপাশি বন্ধ রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও। হল, বিভাগ, মুক্তমঞ্চ, শহীদ মিনার, চত্বর ও ক্যাফেটেরিয়ায় নেই শিক্ষার্থীদের আড্ডা, গুঞ্জন কিংবা গিটারের টুংটাং আওয়াজ।
আরও পড়ুন: ঈদের রাতে আল্লাহ তার বান্দাকে খালি হাতে ফিরিয়ে দেন না
ক্যাম্পাস জুড়ে বিরাজ করছে সুনসান নীরবতা। এই নীরব কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা দিয়ে যাচ্ছেন ২৯ জন আনসার সদস্য। যারা পরিবার এবং প্রিয়জনকে ছেড়ে ক্যাম্পাসেই উপভোগ করছেন ঈদ। ঈদের পরিসীমা যার কাছে যেমনই হোক না কেন ঈদের দিনটি অন্তত ধনী-গরীব সবার কাছেই আনন্দের, সবাই তাদের পরিবারের সাথে এ আনন্দঘন মুহুর্ত কাটাতে চায়। পরিবার পরিজন ছেড়ে কেমন কাটবে তাদের ঈদ সে অনুভূতি জানিয়েছেন তারা।
মারফত আলী নামের আরেক আনসার সদস্য বলেন, 'স্যারকে বললাম স্যার আমার তো বাড়িতে যাইতে হইবো। স্যার বলতেছে ছুটি নেই। চাকরি করতে হইলে তো সবকিছু মেনে চলতে হবে। আমি নিজে কোরবানি করমু। বাড়িতে বউ-বাচ্চা আছে। গত ঈদেও ছুটি পাই নাই। এবারও ঈদের পর ছাড়া ছুটি পাইনি। বন্ধের দিনগুলোতে ডিউটি করাটা একটু অন্যরকম। কেমন যেন মরা মরা লাগে সব। আমাদের খারাপ লাগে পরিবারকে ছেড়ে ঈদ করতে কিন্তু কিছু করার নাই। এই ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা তো আমাদেরই দিতে হবে। ক্যাম্পাসে লোকসমাগম বেশি থাকলে তাড়াতাড়ি সময় চলে যায় লোকজন না থাকলে সময় যেন থেমে থাকে।’
প্লাটুন কমান্ডার আবদুল মান্নান দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ২৯ জন আনসার সদস্যের মধ্যে আমরা ৪ জনকে ছুটি দিয়েছি। বাকিরা ক্যাম্পাসের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় নিরাপত্তায় নিয়োজিত আছে। ঈদে নাড়ির টানে সবাই বাড়িতে যেতে পারে না। আমরা যদি বাড়ি চলে যাই তাহলে এই ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা দেবে কে?