বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত ৭
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (ববি) আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ-হামলা ও পাল্টা হামলার ঘটনা ঘটেছে। মঙ্গলবার দিবাগত রাত (৬ জুলাই) ১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ঘটনা ঘটে। এতে উভয়পক্ষের সাতজন আহত হয়ে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সূত্রে জানা গেছে, বরিশাল সদর আসনের সংসদ সদস্য ও পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামীম ও বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ অনুসারী হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের প্রধান দু’টি পক্ষ রয়েছে।
এর মধ্যে একটি পক্ষের নেতৃত্বে অমিত হাসান রক্তিম ও ময়িদুর রহমান বাকি এবং মেয়র-পন্থীদের নেতৃত্বে আহমেদ সিফাত ও সৈয়দ রুম্মান ইসলামসহ বেশ কয়েকজন রয়েছেন।
উভয়পক্ষই দীর্ঘদিন ধরে ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের নামে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে এবং বিভিন্ন ঘটনায় নেতৃত্ব দেওয়া নিয়ে তাদের মধ্যে প্রায়ই বিরোধ দেখা যায়।
জানা গেছে, মঙ্গলবার বিকেলে বরিশাল নগরের সিএন্ডবি রোডের কলেজ এভিনিউ তিন মাথা এলাকায় তুচ্ছ ঘটনার জের ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার্সের ছাত্র রাইদুল ইসলাম নিরবকে মারধর করে স্থানীয় যুবকরা।
এর প্রতিবাদে সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধও করেন। পরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের হস্তক্ষেপে হামলাকারীদের দ্রুত সময়ের মধ্যে গ্রেফতারের আশ্বাসে ঘণ্টা-খানেকের মধ্যে সড়ক অবরোধ তুলে নেন শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীরা জানিয়েছে, তবে এর আগেই শিক্ষার্থীর ওপর হামলার ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের দু’টি গ্রুপ দু’ভাগে বিভক্ত হয়। এ নিয়ে বেশ কয়েকবার তাদের মধ্যে সামনাসামনি ও মুঠোফোনে তর্কবিতর্কও হয়। এ ঘটনার একপর্যায়ে রাত ১টার দিকে হঠাৎ করেই ছাত্রলীগের পৃথক দুই গ্রুপের মধ্যে প্রকাশ্য উত্তেজনা ছড়িয়ে যায়। এ সময় হামলা-পাল্টা হামলার ঘটনা ঘটলে গোটা ক্যাম্পাসে আতঙ্ক ছড়িয়ে যায়। এ ঘটনায় উভয়পক্ষের সাতজন গুরুত্বর আহত হন।
এর মধ্যে ছাত্রলীগের একাংশের নেতা ময়িদুর রহমানসহ অনুসারী ছাব্বির হোসেন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। অন্যদিকে ছাত্রলীগ অন্য গ্রুপের নেতা আহমেদ সিফাত ও সৈয়দ রুম্মান ইসলামসহ তাদের অনুসারী তমাল, মেহেদি হাসান ও আল সামাদ শান্ত নামে মোট পাঁচজন আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
এদের মধ্যে মেহেদি হাসান ছাড়া বাকি সবাই শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরী বিভাগের খাতায় সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন বলে ভর্তি দেখিয়েছেন।
এ ব্যাপারে অমিত হাসান রক্তিম জানান, সিফাত গ্রুপের হামলায় আহত হয়ে তাদের সহপাঠী মহিদুর রহমান ও ছাব্বির হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
অপর গ্রুপের নেতা ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আহমেদ সিফাত নিজেকে বর্তমানে সুস্থ দাবি করে কিছু জানাতে রাজি হননি। তবে সৈয়দ রুম্মান ইসলাম দাবি করেছেন, তাদের কমপক্ষে ৬ জন আহত হয়েছেন এবং তিনিসহ আহতরা হাসপাতালে বর্তমানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তবে তাদের ওপর হামলার কারণ সম্পর্কে তিনিও বিস্তারিত জানাতে রাজি হননি।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. মো. খোরশেদ আলম বলেন, মধ্যরাতে ক্যাম্পাসে হঠাৎ করেই মারামারির ঘটনা ঘটে। এতে ৬ জন আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখার কার্যক্রম শুরু করেছি।
এদিকে রাতের এ ঘটনায় থানা পুলিশের কর্মকর্তারা ক্যাম্পাসে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করার পাশাপাশি হাসপাতালে গিয়েছেন বলে জানিয়েছেন উপ-পরিদর্শক মেহেদি হাসান।
উল্লেখ্য, এর আগের রাতে শের-ই-বাংলা হলের বাসিন্দা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মাহামুদুল হাসান দোলনকে ডেকে নিয়ে মারধর করে ছাত্রলীগের একাংশের নেতা সৈয়দ রুম্মান ইসলাম।
এ ব্যাপারে মাহামুদুল হাসান দোলন জানান, তাকে ফোন করে ডেকে নিয়ে মারধর করা হয়েছে এবং তিনি বর্তমানে আহত অবস্থায় শেবাচিম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।