খুবির যৌন নিপীড়নের ঘটনা পূর্ণাঙ্গ তদন্ত চায় মিডিয়া এডুকেটরস নেটওয়ার্ক
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা ডিসিপ্লিনের এক নারী শিক্ষককে যৌন হয়রানির ঘটনায় অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে তদন্ত হওয়া জরুরি বলে মন্তব্য করেছে মিডিয়া এডুকেটরস নেটওয়ার্ক। একই সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন নিপীড়ন নিরোধ কমিটি যে তদন্ত প্রতিবেদন দিয়েছে, তাতে তারা হতবাক ও ক্ষুব্ধ হয়েছেন।
এ ঘটনায় দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ, সাংবাদিকতা, মিডিয়া, কমিউনিকেশন বিভাগের ৫১ জন শিক্ষক বিবৃতি দিয়েছেন।
বিবৃতিতে তারা বলেন, ‘‘গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে জানা যায় যে, ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা ডিসিপ্লিনের একজন নারী শিক্ষক একই বিভাগের একজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানি, শারীরিক ও মানসিক নিপীড়নের অভিযোগ করেন। সেই সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন নিপীড়ন নিরোধ কমিটি অভিযোগটি আমলে নিয়ে তদন্ত প্রক্রিয়া শুরু করে। এই ঘটনায় অভিযুক্ত শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কিন্তু ঘটনার ১০ মাস পর নিরোধ কমিটি বলছে, তারা সে অভিযোগ আমলেই নেয়নি। তাদের বক্তব্য, ঘটনাটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে ঘটেছে; ফলে তাদের তা এখতিয়ারভুক্ত নয়। একই সঙ্গে প্রতিবেদনটিতে তারা বলেন যে, এ ঘটনায় শারীরিক ও মানসিক নিপীড়নের প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তাদের সুপারিশের ভিত্তিতে গত ৮ জুন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট অভিযুক্ত শিক্ষকের বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহার করে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন নিপীড়ন নিরোধ কমিটির প্রতিবেদন ও বক্তব্যে স্ববিরোধিতা রয়েছে। একদিকে তারা বললেন, ঘটনাস্থল বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরের বলে তাদের আওতাভুক্ত নয়। অন্যদিকে অভিযোগের পক্ষে প্রমাণ পাওয়া যায়নি বলে অভিযুক্তকে রেহাই দেওয়ার সুপারিশ করলেন।
আমরা বলতে চাই, ঘটনাটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে ঘটেছে বলে তদন্ত এড়ানোর সুযোগ নেই। যেহেতু দুজন শিক্ষকই খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকুরীজীবি, সেহেতু ঘটনাস্থল যেখানেই হোক না কেন; বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে ঘটনাটির তদন্ত করতে হবে। আর যৌন হয়রানির ঘটনায় অভিযোগকারী যখনই অভিযোগ করুক না কেন, অভিযোগ আমলে নিয়ে তদন্ত করতে হয়। ফলে সময়ের দোহাই দিয়েও ঘটনাটি এড়ানোর সুযোগ নেই।
দ্বিতীয়ত, অভিযোগটি আওতাভুক্ত কি না, সেটি বুঝতে কমিটির ১০ মাস সময়ের প্রয়োজন হয় না। কারণ অভিযোগপত্রে ঘটনাস্থলের কথা উল্লেখ ছিল। তদন্ত কমিটির প্রধান সে সময়ে গণমাধ্যমে তদন্ত নিয়ে বক্তব্যও দিয়েছেন। কমিটি তিনবার ভিকটিমকে ডেকে নিয়ে স্বাক্ষ্য নিয়েছে। তার কাছ থেকে প্রমাণাদি নিয়েছে। ফলে ১০ মাস পরে এসে তদন্ত হয়নি বলার সুযোগ নেই।
ভিকটিমের অভিযোগপত্র অনুযায়ী জানা যায়, ঘটনার পরও অভিযুক্ত বারবার ভিকটিমকে ফোন করে এবং ক্ষুদে বার্তা দিয়ে উত্ত্যক্ত করেন। এ সংক্রান্ত প্রমাণাদিও নিরোধ কমিটিকে দেওয়া হয়। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যৌন হয়রানির নীতিমালার ৩ (গ) ধারা অনুযায়ী, কাউকে মোবাইল ফোন, ইমেইল বা ক্ষুদে বার্তার মাধ্যমে উত্যক্ত করলে সেটি বিচারের আওতায় পড়ে। এ ধারা অনুযায়ীও উক্ত ঘটনাটি তদন্ত ও বিচারের আওতায় পড়ে।
দেশের পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগাযোগ, সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম বিষয়ক শিক্ষকদের প্ল্যাটফর্ম মিডিয়া এডুকেটরস নেটওয়ার্কের দাবি, অভিযোগকারী শিক্ষকের অভিযোগটি অবিলম্বে আমলে নিয়ে তদন্ত করতে হবে। তদন্তের মাধ্যমে অভিযোগ প্রমাণিত হলে অভিযুক্তকে যথাযথ শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। অভিযোগটি মিথ্যা হলে সেটিও তদন্ত করে খোলাসা করা হোক। তাতে অভিযুক্তেরও অধিকার নিশ্চিত হবে। আমরা মনে করি, বিশ্ববিদ্যালয় অঙ্গনে যৌন হয়রানির ঘটনার তদন্ত না হলে এই ধরনের অপকর্ম উৎসাহিত হবে।
‘উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যৌন হয়রানি ও নিপীড়ন নিরোধ নীতিমালা-২০০৮’ এর ১.৩ ধারা অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নিজস্ব প্রবিধি প্রণয়ন করে ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষার যথাযথ পরিবেশ নিশ্চিত করুক।’’
বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারী শিক্ষকবৃন্দ হলেন (পদ অনুসারে, জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে নয়) অধ্যাপক ড. গীতি আরা নাসরিন, অধ্যাপক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, অধ্যাপক ড. কাবেরী গায়েন, অধ্যাপক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ফাহমিদুল হক, ভিজিটিং অধ্যাপক, সেন্টার ফর এক্সপেরিমেন্টাল হিউম্যানিটিজ, বার্ড কলেজ, যুক্তরাষ্ট্র (সাবেক অধ্যাপক, ঢাবি), শাওন্তী হায়দার, সহযোগী অধ্যাপক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ড. নজরুল ইসলাম, সহযোগী অধ্যাপক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর, মোহাম্মদ খোরশেদ আলম, সহযোগী অধ্যাপক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, কাজী মামুন হায়দার, সহযোগী অধ্যাপক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় মোঃ শহীদুল হক, সহযোগী অধ্যাপক, যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রমুখ।