খুবিতে যৌন হয়রানি: তদন্তের ১০ মাস পর বলা হলো ঘটনাটি ক্যাম্পাসের বাইরে

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়   © ফাইল ফটো

গত বছরের আগস্ট মাসে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুবি) একটি ডিসিপ্লিনের সহকারী অধ্যাপক ছোটন দেবনাথের বিরুদ্ধে তার এক নারী সহকর্মীকে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ ওঠে। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ছোটন দেবনাথকে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক থেকে শুরু করে সব ধরনের কার্যক্রম থেকে সাময়িক অব্যাহতি দেয়। অভিযোগ পাওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন হয়রানি ও নিপীড়ন নিরোধ কেন্দ্র ঘটনাটি তদন্ত শুরু করে।

১০ মাস পর অবশেষে মিলেছে তদন্ত রিপোর্ট এবং যৌন নিপীড়ন নিরোধ কমিটি বলছে, ক্যাম্পাসের বাইরের ঘটনা হওয়ায় তাঁরা অভিযোগটি বিবেচনাই করেননি। গত সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক খান গোলাম কুদ্দুস স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে যৌন নির্যাতনে অভিযুক্ত শিক্ষক ছোটন দেবনাথকে ৩.১(গ) ও ৩.১(ঘ) ধারায় তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে তার সাময়িক বরখাস্তের আদেশও প্রত্যাহার করা হয়েছে। তবে, ৩.১(ট) ধারায় আনীত অভিযোগ বিচারের আওতাবহির্ভূত হিসেবে অভিযোগ বিবেচনা করা হয়নি।

এদিকে অভিযোগকারী ওই নারী শিক্ষক বলছেন, ‘এত দিন লড়ছিলাম আমার সঙ্গে ঘটে যাওয়া জঘন্য এক অন্যায়ের বিরুদ্ধে। কিন্তু বিচার চাইতে গিয়ে এবার নতুন করে আরেক প্রহসনের শিকার হলাম। আমার মূল যে অভিযোগ ছিল ৩.১(ট) ধারায়, অর্থাৎ যৌন হয়রানির, সেই বিষয়টি তারা আমলেই নিল না, আর আমাকে জানালো ১০ মাস পর। যে ঘটনা তদন্তের এখতিয়ারভুক্ত নয় বলা হচ্ছে, তাহলে ওই বিষয়ে সব ধরনের তদন্ত কেন করা হলো—ঘটনাস্থলে যাওয়া, সাক্ষীদের এ বিষয়ে প্রশ্ন করা, অভিযুক্ত ও অভিযোগকারীদের মুখোমুখি করে কল রেকর্ডিং শোনা হলো কেন? তাদের মতে, এসব তো বিবেচনাযোগ্যই না।’

অভিযোগকারী শিক্ষক বলেন, ‘অভিযোগের সাপেক্ষে প্রমাণ (কল লিস্ট, এসএমএস) আছে। এই অভিযোগের শক্তিশালী প্রমাণ হিসেবে বিবেচনার কথা বলা হয়েছে। তিনি দাবি করেন, মূলত যেসব তথ্য, প্রমাণ, ডকুমেন্টস ভিকটিমের পক্ষে যায়, সেগুলো এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে, যেসব তথ্য অভিযুক্তের পক্ষে যায়, সেগুলোই গোঁজামিল দিয়ে সামনে এনে তদন্ত রিপোর্ট দেওয়া হয়েছে।’

এ বিষয়ে অভিযুক্ত শিক্ষক ছোটন দেবনাথ বলেন, ‘আমি প্রথম থেকেই বলে আসছি, আমার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগটি ষড়যন্ত্রমূলক এবং সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট, ভিত্তিহীন। তদন্তেও অভিযোগটি মিথ্যা প্রমাণ হয়েছে। মূলত আমাকে সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন ও হেনস্তা করার হীন উদ্দেশ্যে পরিকল্পিতভাবে এই বানোয়াট অভিযোগটি করা হয়েছিল। অভিযোগটি আমলে নেওয়ার কারণে এবং তদন্ত কমিটি বিচারকার্য দীর্ঘায়িত করার ফলে আমি মানসিক, সামাজিক, পেশাগত ও আর্থিকভাবে ভীষণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি।’

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন হয়রানি ও নিপীড়ন কেন্দ্রের সভাপতি অধ্যাপক মোছা. তাসলিমা খাতুন বলেন, বিদ্যমান আইন অনুযায়ী কোনো ঘটনা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের বাইরে ঘটলে তা বিশ্ববিদ্যালয়ের এখতিয়ারবহির্ভূত। এটা জানাতে ১০ মাস কেন লাগল—এই প্রশ্নের জবাবে তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। তিনি দাবি করেন, ভুক্তভোগীর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বিবাদীর জমা দেওয়া প্রমাণাদি বিশ্লেষণ করেই তাঁরা তদন্ত রিপোর্ট পাঠিয়েছিলেন এবং সেই পরিপ্রেক্ষিতেই সিন্ডিকেট সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক খান গোলাম কুদ্দুস বলেন, এখন ওই নারী শিক্ষক চাইলে আদালতের আশ্রয় নিতে পারবেন।


সর্বশেষ সংবাদ