খুবি ক্যাম্পাসের আবর্জনা দিয়েই তৈরি হবে সার, হবে বিক্রিও
আগামী এক বছরের মধ্যে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় (খুবি) ক্যাম্পাস হবে পরিবেশবান্ধব। ক্যাম্পাসে পাওয়া যাবে না কোনো টুকরো আবর্জনা। ক্যাম্পাস জুড়ে তৈরি হচ্ছে আবর্জনা সংগ্রহ নেটওয়ার্ক। আর এই আবর্জনার মধ্যে বাছাই করে জৈব আবর্জনা দিয়ে তৈরি হবে কম্পোস্ট সার। বাণিজ্যিকভাবে তা বিপণন করা হবে।
জানা যায়, ক্যাম্পাসে অজৈব আবর্জনা পুড়িয়ে ফেলতে তৈরি হচ্ছে ৪০ ফুট উচ্চতায় চিমনি। আর সমস্ত প্রক্রিয়া হচ্ছে পরিবেশ উপযোগী করে। দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের মধ্যে ইউজিসির অর্থায়নে এমন একটি পরিকল্পিত সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট প্লান্ট তৈরি হচ্ছে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে। প্রায় ২৫ লাখ টাকা ব্যয় সাপেক্ষে এই প্লান্টের নির্মাণকাজ শেষে তা আগামী ডিসেম্বরে চালু করা সম্ভব হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
আজ ৬ জুন (সোমবার) দুপুরে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি) এর সদস্য প্রফেসর ড. মুহাম্মদ আলমগীর ফিতা কেটে ও ফলকে কর্ণিক দিয়ে সিমেন্ট-বালি মিশ্রণ লাগিয়ে এই প্লান্ট নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন।
উদ্বোধনের আগে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে তিনি বলেন, ইউজিসির অর্থায়নে বাংলাদেশে সর্বপ্রথম পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই প্লান্টটি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এই প্লান্টটি বাস্তবায়নে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল ও ডিপার্টমেন্টসমূহকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে হবে। প্রতি শিক্ষাবর্ষের শুরুতে নবাগত শিক্ষার্থীদের এ বিষয়ে ওরিয়েন্টেশনের মাধ্যমে ধারনা দিতে হবে। ক্যাম্পাসকে সুন্দর, পরিস্কার ও পরিচ্ছন্ন রাখতে শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের এ বিষয়ে নিজ নিজ দায়িত্ব মনে করে উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে এগিয়ে আসতে হবে। তাহলে এক বছরের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের বিদ্যমান পরিবেশকে বদলে দেবে এই প্লান্ট। ক্যাম্পাস হবে গ্রিন ক্যাম্পাসে পরিণত।
তিনি আরও বলেন, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পর আরও কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এ ধরনের প্লান্ট স্থাপনে আগ্রহ দেখিয়েছে। তিনি এই উদ্যোগ গ্রহনের জন্য বর্তমান উপাচার্যকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।
উদ্বোধনের আগে উপাচার্য প্রফেসর ড. মাহমুদ হোসেন বলেন, শিক্ষকতা পেশায় প্রবেশের শুরু থেকেই আমি এ বিষয়টি নিয়ে ভেবেছি। ইতোপূর্বে এ প্লান্টের বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা করা হলেও তা আর এগোয়নি। উপাচার্যের দায়িত্ব গ্রহণের পর সাজানো-গোছানো পরিবেশ বান্ধব ক্যাম্পাস বিনির্মাণে সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট প্লান্ট বাস্তবায়নে ইউজিসিকে পত্র দিলে তারাও প্লান্টটিতে অর্থায়নে আগ্রহ প্রকাশ করে। যার ধারাবাহিকতায় আজ এর কাজ শুরু হলো।
তিনি বলেন, সকলের সহযোগিতা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসকে সুন্দর, পরিপাটি করে সাজাতে চাই। কেননা সুন্দর ক্যাম্পাস দেখলে মন ভালো থাকে। আর মন ভালো থাকলে শরীরও ভালো থাকে। এজন্য এই প্লান্টটি বাস্তবায়নে শিক্ষক-কর্মকর্তা, কর্মচারীসহ শিক্ষার্থীদেরও এগিয়ে আসতে হবে। তিনি এই প্লান্টটিতে অর্থায়ন করায় ইউজিসিকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।
এসময় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. আনন্দ কুমার সাহা, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক প্রফেসর ড. কামাল হোসেন উপস্থিত ছিলেন। প্লান্টটি সম্পর্কে আনুষাঙ্গিক বিষয় তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) প্রফেসর খান গোলাম কুদ্দুস, সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট প্লান্টের কনসালটেন্ট ও কুয়েটের সহকারী অধ্যাপক এস এম তারিকুল ইসলাম, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলী (ভারপ্রাপ্ত) মো. আব্দুর রাজ্জাক। অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভাগীয় প্রধান, শাখা প্রধান ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাবৃন্দ ও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, ২৪ লাখ ৯৩ হাজারেরও বেশি টাকা ব্যয় সাপেক্ষে এই সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট প্লান্টটি বাস্তবায়ন করা হবে। এর নির্মাণ কাজের সময় ধরা হয়েছে ৬ মাস। প্লান্টটিতে তিনটি স্তরে ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট করা হবে। যেসব বর্জ্য দাহ্য জাতীয়, সেগুলো পুড়িয়ে ফেলা হবে। যেগুলো সার হিসেবে ব্যবহার উপযোগী, সেগুলো ডি কম্পোজ করে ব্যবহার করা হবে। এছাড়া যেসব বর্জ্য সার কিংবা দাহ্য জাতীয় নয়, সেগুলো বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ বা সিটি কর্পোরেশনের কাছে হস্তান্তর করা হবে। প্লান্টটিতে ৪০ ফুট উচ্চতার চিমনি থাকবে। যাতে বর্জ্য পোড়ানোর ধোঁয়া কিংবা গন্ধ পরিবেশকে নষ্ট করতে না পারে।